অভয়নগর ও দক্ষিণ নড়াইলে সড়কের বেহাল দশা, বিকল্প পথে চলছে মানুষ

অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি :

চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় বিকল্প পথে ২০-৩০ মাইল ঘুরে শিল্প শহর নওয়াপাড়ায় যেতে হচ্ছে বাংলার অপরূপ প্রকৃতি ও প্রাচীন ঐতিহ্যের জনপদ যশোরের অভয়নগরের ভৈরব উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনগণের।

অভয়নগরের ৪টি ইউনিয়নসহ দক্ষিণ নড়াইলের বিছালী, কড়োলা, মির্জাপুর-সিঙ্গিয়াসহ প্রায় শ’খানেক গ্রাম নিয়ে এ জনপদ গঠিত হলেও স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি অবহেলিত থেকে গেছে এই জনপদ। সড়কের নাজুক অবস্থা নিয়ে যশোর-৪ (অভয়নগর-বাঘারপাড়া) ও নড়াইল সদরের এমপিদের প্রতি ভোটারদের চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা গেছে। তাদের অভিযোগ, দক্ষিণ নড়াইলের এমপি মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং যশোর ৮৮/৪ এর এমপি রণজিত কুমার রায় এবং ভৈরব উত্তর জনপদের চেয়ারম্যানদের দেখা মেলে দলীয় কর্মসূচি আর ভোটের সময়। আর ভোট শেষ হয়ে গেলে পরবর্তী ৫ বছর জনগণের বিপদ-আপদে আর দেখা মেলে না এসকল জনপ্রতিনিধিদের।

অতি সম্প্রতি শংকরপাশা-আমতলা সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হলেও ভুক্তভোগিদের দাবি শংকরপাশা-চাকই অংশের কাজকে অগ্রাধিকার দেয়া হোক। এবং বিশেষ গুরুত্বের সাথে দ্রুততম সময়ে শ্রাবণের ভারি বর্ষনের আগেই এ অংশের কাজ শুরু করে চলাচলের ব্যবস্থা করা হোক।

অভয়নগরের বাঘুটিয়া ও দক্ষিণ নড়াইলের বিছালী ই্উনিয়নের সীমান্তে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বিরাট গরু হাট। যা চাকই গরুহাট নামে পরিচিত। খুলনা বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে গরু-ছাগলের সরবরাহ হয়ে থাকে। ভাঙ্গাচোরা ও খানাখন্দে ভরা পাকা সড়কগুলোর বেহাল দশার ফলে উক্ত হাটেরও আজ নাজুক অবস্থা। ক্রেতা-বিক্রেতারা ভাঙা সড়কের কারণে আসতে চান না। শংকরপাশা থেকে চাকই গরুহাট পর্যন্ত, বিশেষ করে শংকরপাশা টু শিবনগর পর্যন্ত রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হওয়ায় যাত্রীদের কখনো নওয়াপাড়া থেকে শেষসীমানা হয়ে ভাটপাড়া ঘাট পার হয়ে সিংগাড়ী বাজারে আসতে হয়। আবার কখনো শংকরপাশা ঘাট থেকে শাহীনপাড়া হয়ে মধুরাপুর-পাথালিয়ার মধ্য দিয়ে হরিশপুর বাজার ও বিছালী মোড় দিয়ে সিংগাড়ী বাজার আসতে হচ্ছে। ভারি বর্ষার আগেই সংস্কার শুরু হওয়া এই রাস্তাটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চলাচলের উপযোগি করে তোলার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পথচারী ও জনসাধারণ।

খুলনার গরু ব্যবসায়ী রিপন মাহমুদ এ প্রতিবেদককে জানান, রাস্তা খারাপ থাকার কারনে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। প্রায়ই ঘটছে দূর্ঘটনা। সরজমিনে দেখা যায়, এ জনপদের অধিকাংশ রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন ঘটছে অসংখ্য দূর্ঘটনা। আর্থিক সংকটে পড়ছে পথচারী, চালক ও পরিবহন মালিকেরা। অথচ এ সকল সড়ক দিয়েই অভয়নগরের ঐতিহ্যবাহী বাঘুটিয়ার ১১ শিব মন্দির, শ্রীধরপুরের পুড়াখালী বাওড় ও দিঘি, শুভরাড়ার ঐতিহ্যবাহী খানজাহান আলীর দিঘি ও মসজিদ, এছাড়াও অসংখ্য পুরাকীর্তি ও স্থাপনা। তাছাড়া শিল্প শহর নওয়াপাড়ার সাথে নড়াইলের রূগগঞ্জ থেকে কালনা হয়ে ঢাকা, শংকরপাশা-নড়াইলের সিঙ্গিয়া-শোলপুর, শংকরপাশা-আমতলা যাতায়াতের জন্য যাত্রীদের এ সকল সড়ক ব্যবহার করতে হয়।

অভয়নগরের ভৈরব উত্তর-পূর্ব জনপদের সাথে শিল্প শহর নওয়াপাড়ার সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো শংকরপাশা-সিঙ্গিয়া সড়ক। এর মধ্যে যশোর-নড়াইল সীমান্তের গরুহাট খ্যাত চাকই বাজার থেকে প্রায় ৩ কি.মি. সড়কের অবস্থা এতোই নাজুক যে, কোথাও পাথর-পিচের দেখা মেলে না। বড় বড় গর্ত। সেখানে পানি জমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে ব্যাপক জান-মালের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সড়কটি এখন ভেঙ্গেচুরে নাকাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে।
অভয়নগরের শুভরাড়া ইউনিয়নের সবচেয়ে খারাপ দশা পাইকপাড়া ঋষিপাড়া থেকে বাশুয়াড়ী পাকা সড়ক পর্যন্ত। বৃষ্টি হলে এই কাঁচা সড়কে চালক ও যাত্রীরা মোটর সাইকেল ও ভ্যান-নছিমন নিয়ে হঠাৎ গর্তে পড়ে সীমাহীন দূর্ভোগে পড়েন। সড়কটির বাকি অংশটুকু পাকা করা হয়ে দূর্দশা লাঘব হবে জনসাধারণের। এছাড়াও মূল পাকা সড়ক থেকে গ্রামে ঢুকে যাওয়া সড়কের অবস্থা আরও খারাপ।
এ সকল রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ও চলাচলের অযোগ্য। মারাত্মক খারাপ অবস্থা এ রাস্তাগুলোতে পায়ে হেঁটে চলতেও কষ্ট হয়। নেই কোথাও পিচ-পাথর। উঠে গেছে খোয়া, বড় বড় গর্ত হয়ে আছে সড়কের উপর। বর্ষায় সড়কটির অবস্থা আবাদী জমির মত দেখায়। জন সাধারনের অভিযোগ স্থানীয় এমপি, চেয়ারম্যানরা মাঝে মাঝে সড়ক সংস্কারের কথা বললেও গত ৫-৭ বছর এভাবে কেটে গেছে। জনসাধারণের দেখা হয়নি চলাচল উপযোগি পাকা সড়ক। এখন শুধুই অপেক্ষা কবে শুরু হবে এসকল সড়কের সংস্কার!

Check Also

আশাশুনির কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ধ্বস।।আতঙ্কিত এলাকাবাসী

আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের রোকন সম্মেলন অনুষ্ঠিতএস,এম মোস্তাফিজুর রহমান(আশাশুনি)সাতক্ষীরা প্রতিনিধি।।আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের মাসিক রোকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।