করোনা ভাইরাসে ব্রাজিলে মৃতের সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এর ফলে মৃত্যুর সংখ্যার দিক দিয়ে ব্রাজিল এখন দ্বিতীয় অবস্থানে। তারপরও বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা দিয়েছেন। বলেছেন, এই পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। কারণ, দেশটিতে টিকাদান কার্যক্রম খুব ধীরগতির। এ ছাড়া সামনে শীতকাল অপেক্ষা করছে। এসব কারণে ব্রাজিলে মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এতে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যতম মাধ্যম হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। কিন্তু এমন পদক্ষেপের ঘোর বিরোধী ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসনারো। এ কারণেও ভাইরাসটির বিস্তার ঘটছে। স্বাস্থ্য বিষয়ক ইনস্টিটিউট ফাইওক্রুজ বলেছে, পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। এ পর্যন্ত শতকরা মাত্র ১৫ ভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় করোনা মোকাবিলা করা হয়েছে কিভাবে তা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে কংগ্রেস।
উল্লেখ্য, দেশটিতে সমন্বিত জাতীয় ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন না করার কারণে কড়া সমালোচিত হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট বোলসনারো। এ ছাড়া তার রয়েছে টিকা দেয়া, লকডাউন এবং মাস্ক পরার ওপর সন্দেহ। তিনি এসব বিধিনিষেধ শিথিল করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিরোধী রাজনীতিকরা এ জন্য সরকারের সমালোচনা করছে। তারা মনে করছে, রাজনৈতিক উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসনারো টিকা কেনা বিলম্বিত করছেন।
অধিক সংক্রমণশীল ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট সেখানে সংক্রমণের সংখ্যা দ্রুত বাড়িয়ে তুলছে। প্রথমে এই ভ্যারিয়েন্ট সনাক্ত করা হয় অ্যামাজন অঞ্চলে। এই ভ্যারিয়েন্ট গামা ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে পরিচিত। ব্রাজিলে গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ হাজার মানুষ।
আইসিইউতে শতকরা ৮০ ভাগ বা তারও বেশি বেড রোগিতে ভর্তি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে দক্ষিণ গোলার্ধের এই দেশটিতে শুরু হবে শীতকাল। এ সময়ে সংক্রমণ আরো বৃদ্ধি পাবে। ওদিকে যেসব মানুষ মারা গিয়েছেন তাদের পিতা, মাতা, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে টুইট করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মারসেলো কুইরোগা। তিনি বলেছেন, করোনা মহামারিতে ব্রাজিলে ৫ লাখ মানুষ মারা গিয়েছেন। এটা ব্রাজিল এবং পুরো বিশ্বের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
মার্চের পর গত এক সপ্তাহে ব্রাজিলে গড়ে প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা ছিল কমপক্ষে ১৫০০। স্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা আনভিসা’র সাবেক প্রধান গঞ্জালো ভেসিনা বলেছেন, টিকা দেয়ার ধীর গতির ফলে আরো অনেক প্রাণ হারাতে হবে। তিনি আরো বলেছেন, এরই মধ্যে ৫ লাখ মানুষ মারা গেছেন। দুর্ভাগ্যজনক হলো এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। কারণ, টিকা দেয়া কার্যক্রম সম্পন্ন হতে আরো সময় লাগবে। হতে পারে এ বছরটিও অনেক জটিল। কারণ, আমরা টিকা কিনেছি অনেক দেরিতে। এসব টিকার সরবরাহ আসতে সময় লাগবে। তার ওপরই আমাদেরকে নির্ভর করতে হচ্ছে।
ওদিকে প্রেসিডেন্ট বোলসনারো সরকারের বিরুদ্ধে শনিবারও হাজার হাজার মানুষ দেশজুড়ে বিক্ষোভ করেছে। তারা টিকা দেয়া কার্যক্রম দ্রুতকরণের দাবি তুলেছেন। বহু শহরে টিকার অপর্যাপ্ত ডোজ দেয়া হয়েছে। তা নিয়ে এক রকম লড়াই করছে স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষ।