ক্রাইমবাতা রিপোট: সাতক্ষীরা: মহামারী করোনার উর্ধগতি থেমে নেই করোনার সংক্রমন প্রাদুর্ভাব আর মৃত্যু সবই চলছে সমানতালে, সাতক্ষীরার বাস্তবতায় করোনা যেন জেকে বসেছে। জেলা শহর হতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সর্বত্র, গ্রামে গ্রামে, ঘরে ঘরে জ্বর, ছর্দি কাশি সহ করোনার উপসর্গ, সর্বত্র করোনা আতঙ্ক, করোনা উদ্বেগ, কিন্তু বাস্তবতা হলো স্বাস্থ্য বিধি মানতে উদাসিনতা, জেলায় তৃতীয় দফার লকডাউন চলছে।
সাতক্ষীরায় সোমবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ৬ জনের মৃত্যুর দিনে আরও ৫০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ সময় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১১৬ জনের। শনাক্তের হার ৪৩ দশমিক ১ শতাংশ। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. জয়ন্ত সরকার।
এদিকে সাতক্ষীরা গত ২৪ ঘন্টায় আরও ৬ জন মারা গেছেন। এরমধ্যে করোনায় ৩ জন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সাতক্ষীরায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৬০ জনে। এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ২৭০ জনে। এছাড়া গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ৫০ শতাংশ। সাতক্ষীরায় এ পর্যন্ত মোট করোনা পজেটিভ হয়েছেন ২ হাজার ৯০৪ জন। শনিবার পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ হাজার ৯৭৩ জন। বর্তমানে ৮২১ জন করোনা পজেটিভ রোগী রয়েছে। তারমধ্যে ৩৩ জন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকী ৭৮৮ জন হোম আইসোলেশনে রয়েছেন।
এদিকে সাতক্ষীরা করোনা ডেডিকেটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেড় মাস বয়সের এক শিশুর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ১৭ জুন তারিখে ঐ শিশুর বহি:বিভাগের টিকিটে এ্যাডমিট টু পজিটিভ লেখা রয়েছে। ঐ শিশুর মা ও দাদী করোনা পজিটিভ বলে জানা গেছে। তবে দায়িত্বশীল কোন সূত্র থেকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
জনসাধারনের একটি অংশ লকডাউনের প্রতি সম্মান দেখাতে কৃপনতা করছেন, করোনা যুদ্ধে পূর্বের ন্যায় আবারও সম্মুখ সারিতে পুলিশ, সত্যিকার অর্থে সাতক্ষীরার বাস্তবতায় লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশী ভূমিকা পুলিশী তৎপরতা সময়পোযোগী, জনসাধারনের জান মালের পবিত্র আর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে পুলিশ কে চিহিৃত করা হয়। পাশাপাশি সমালোচকরা পুলিশ কে নিয়ে সমালোচনা করতে পিছপা হয় না। কিন্তু করোনা যুদ্ধে যুদ্ধরত পুলিশ সত্যিকার অর্থে সমালোচকদের কাছেও অতি মানবিক পুলিশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সাতক্ষীরা শহরের মোড়ে মোড়ে, মফস্বল এলাকার বাজার, সড়কে সর্বত্র করোনা যুদ্ধে পুলিশ মমত্বাবোধ, মানিবকতা আর দায়িত্ব কর্তব্য পালনের অনন্য দৃষ্টান্ত দেখিয়ে চলেছে পুলিশ। সাতক্ষীরার সর্বত্র যখন করোনার হাতছানি, সংক্রমন আর মৃত্যুর সংখ্যায় প্রতিদিনই নতুন নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে, লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশের সার্বক্ষনিক উপস্থিতি যথেষ্ঠ্য ঝুকির কারন ও বটে। কিন্তু এক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর গর্বিত সদস্যরা অদম্য দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম বার এক্ষেত্রে মডেল। তিনি নিজেই সড়কে অবস্থান নিয়ে লকডাউন বাস্তবায়নে দায়িত্ব পালন করছেন যা অধিনস্থ এবং সহকর্মি পুলিশ সদস্যদের মানবিক দায়িত্ব পালনে অধিকতর আগ্রহী করে তুলছে। সাতক্ষীরা শহরের প্রাণ কেন্ত্র গুলো জনশূন্য পাশাপাশি উপজেলা ভিত্তিক বড় বড় মোকামগুলোও পুলিশী তৎপরতায় লকডাউন বাস্তবায়ন হলেও যখনই পুলিশ সদস্যরা এক স্থান হতে অন্যস্থানে যাচ্ছেন তখনই সুযোগের সৎ ব্যবহার করছেন স্বাস্থ্য বিধি মানতে নারাজ লোকজন। লকডাউন কোন অবস্থাতেই ছোট খাটো বিষয় নয়, সব কিছুই বন্ধ, (নির্দিষ্ট সময় কাচাবাজার ব্যতিত) আর এই লকডাউন কেন? জীবনের জন্য, জীবন বাঁচাতে, প্রাণঘাতি মহামারী করোনা হতে রক্ষা পেতে, জেলার এক শ্রেণীর জনসাধারনকে কোন অবস্থাতেই ঘরে রাখা যাচ্ছে না, এমন অভিব্যক্তি দায়িত্ব পালনকারীদের, যে কোন অজুহাতে তারা বাজারে আসতে চাইছে এবং আসছে, আর প্রকারান্তে নিজের ক্ষতি নিজেই করছে। সাতক্ষীরার ঘরে ঘরে যে ভাবে ছর্দি, কাশি, জ্বর, ছড়িয়ে পড়েছে তা কিন্তু যথেষ্ট্য উদ্বেগের কারন। এখনও সতর্ক হই, স্বাস্থ্যবিধি মানি, ঘরে থাকি, মাস্ক পরিধান করি, আমরা পুলিশকে মানছি, পুলিশ থাকলে ঘরে থাকছি, জীবনতো আমার, আমি যেন নিজের দায়িত্ববোধ হতে সচেতন এবং সতর্ক হচ্ছি না। সর্বাপেক্ষা উদ্বেগ এবং আতঙ্কের কারন এক শ্রেণীর মানুষ যারা ছর্দি, কাশি জ্বরে আক্রান্ত তারা এই অবস্থাতেও ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরিস্থিতি এবং বাস্তবতার আলোকে জ্বর বা ছর্দি কাশি হলে সাথে সাথে করোনা পরীক্ষা করা শ্রেয়, যত বেশী করোনা পরীক্ষা করবে অতি সহজেই করোনা আক্রান্তকে চিহিৃত করা সম্ভব এবং আক্রান্তকে আইসোলশনে রাখা, করোনা চিহিৃত কেউ যখন অন্যদের হতে নিজেকে গুটিয়ে রাখবে আইসোলশনে থাকবে তখন সংক্রমন এবং প্রাদুর্ভাব কম হবে, আক্রান্ত ব্যক্তি হতে ভইরাসটি ছড়াতে পারবে না। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বলে চলেছে টেস্ট, টেস্ট এবং টেস্ট, একই সাথে বলছে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের সর্বাপেক্ষা ব্যবস্থা মাস্ক পরিধান করা। কিন্তু কতটুকু মানতে জনসাধারন। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং অন্যান্য হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা ও পরীক্ষা চলছে। আমরা যে যার অবস্থান হতে করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিধি মানতে করোনা পরীক্ষা করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখি, বিনা প্রয়োজনে এবং বিশেষ অতি জরুরী প্রয়োজন ব্যতিত ঘরের বাইরে বের না হই। এক শ্রেণীর মানুষের অবিবেচক বক্তব্য দিল করোনা শাহুরে রোগ, ধনী রোগ, যে কথা মিথ্য প্রমান হয়েছে। সাতক্ষীরার গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতি করোনা। কেবল ধনীর অট্টালিকায় নয়, সাধারণ মানুষকে আক্রমন করছে করোনা, সব শ্রেণীর, বয়সের মানুষ প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। সময় অতি দ্রুততার সাথে চলছে সংক্রমন অতি দ্রুত ছড়াচ্ছে। এখনও সময় আছে, সাবধান হই, সতর্ক হই, লকডাউন মানি, সচেতন হই, কোন অজুহাত বা দোহাই নয়, আগে জীবন, বেঁচে থাকলে সবই হবে, আগে বাঁচুন, করোনা হতে মুক্ত থাকুন, আর এ জন্য চাই ঘরে থাকা, বেঁচে থাকলে অর্থ, ব্যবসা, সামাজিকতা সবই হবে, আপনি, আমি, আমরা, আমাদের নিজের জীবন, পরিবার, প্রতিবেশী, গ্রাম কে নিরাপদ রাখি, আর এ জন্য লকডাউনকে মানুন, স্বাস্থ্যবিধি মানুন, মাস্ক পরিধান করুন, ঘরে থাকুন।