মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্যের অংশ বাড়ছে। প্রধান খাদ্যশস্য ধানের মোট উৎপাদনের ৬৬ শতাংশই বিপণন করা হয়। এই বিপণনকে মূল্য সংযোজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাকি ৩৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ কৃষক ভোগ করে থাকেন। বছরে ধান উৎপাদন হয় পাঁচ কোটি ৮১ লাখ টন। ধানের দামের ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিপণন পর্যায়ে গড়ে কেজিপ্রতি মূল্য ১০ টাকা ৯৪ পয়সা।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিবিএসের এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে ধানের সঙ্গে গম, বার্লি ও কাউন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কৃষিপণ্যের মূল্য সংযোজন বা জিডিপিতে কৃষিপণ্যের অংশ নিয়ে দেশে এটিই এ ধরনের প্রথম জরিপ। ‘কৃষিপণ্যের স্থ্থূল বাজারজাতকৃত উদ্বৃত্ত জরিপ ২০১৯’ নামে এই জরিপ গতকাল সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।
সারাদেশের কৃষির ওপর এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে ২০১৯ সালে সংগ্রহ করা তথ্য এবং নিজস্ব পর্যালোচনার মাধ্যমে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। মোট কৃষিজ উৎপাদন, মধ্যবর্তী ভোগ, মূল্য সংযোজন, পরিচালন উদ্বৃত্ত ও শ্রমিকের মজুরি- এসব তথ্যের একটি ভান্ডার তৈরির উদ্দেশ্যে জরিপটি পরিচালনা করে বিবিএস। জরিপ প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জরিপ প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রকল্প পরিচালক জিয়াউদ্দিন আহমেদ। জরিপের ফল উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্যের মধ্যে মূল্য সংযোজনের হার সবচেয়ে বেশি পাটের। পাটের প্রায় ৯৯ শতাংশই বিক্রি বা রপ্তানি হয়। মাত্র ১ শতাংশ কৃষক কিংবা অন্যান্য মধ্যবর্তী পর্যায়ে ভোগ হয়ে থাকে। জরিপে দেখা যায়, বছরে ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৭৬২ টন পাট উৎপাদন হয়ে থাকে। বিপণন পর্যায়ে পাটের কেজিপ্রতি মূল্য পাওয়া গেছে ৩১ টাকা ৮৩ পয়সা।
বিভিন্ন ধরনের ফলের মূল্য সংযোজন ৮০ শতাংশের মতো। কৃষক পর্যায়ে এবং মধ্যবর্তী পর্যায়ে ভোগ হয় বাকিটা। ৪৭ লাখ ৮১ হাজার টন ফলফলাদি উৎপাদিত হয় দেশে। ফলের মধ্যে খেজুরের মূল্য সংযোজন সবচেয়ে বেশি, প্রায় শতভাগ। আধা শতাংশেরও কম কৃষক পর্যায়ে ভোগ করা হয়।
বিভিন্ন ধরনের ডালের ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজনে হার ৮১ শতাংশ। বাকি ১৯ শতাংশ কৃষক কিংবা অন্যান্য মধ্যবর্তী পর্যায়ে ভোগ বা সংরক্ষণ করা হয়। দেশে মোট তিন লাখ ৮০ হাজার ৫০৮ টন ডাল উৎপাদিত হয় বছরে। বিপণন পর্যায়ে ডালের কেজিপ্রতি মূল্য পাওয়া গেছে ৩৬ টাকা।
একইভাবে তেলবীজের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারে বিক্রি কিংবা রপ্তানি হয় মোট উৎপাদনের ৭৯ শতাংশ। বাকিটা সংরক্ষণ করা হয়। দেশে বছরে মোট ১০ লাখ ২১ হাজার ৪২৯ টন তেলবীজ উৎপাদন হয়। বিপণন পর্যায়ে তেলবীজের কেজিপ্রতি মূল্য পাওয়া গেছে ২৮ টাকা ২৫ পয়সা।
বিভিন্ন ধরনের সবজি ৭০ শতাংশ বিক্রি বা রপ্তানি হয়। বাকি ২৯ শতাংশ কৃষক পর্যায়ে ভোগ হয়। দেশে বছরে এক কোটি ২৮ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। পাতাজাতীয় সবজি বা শাকের ৭৭ শতাংশের বাণিজ্যিকভাবে বিপণন হয়। মধ্যবর্তী ভোগ হয় ২৩ শতাংশ। বছরে শাকের মোট উৎপাদন তিন লাখ ৪০৬ টন।