কঠোর লকডাউনে সাতক্ষীরায় কর্মহীন ৫ লক্ষ: ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান চালকের জেলা প্রশাসক চত্ত্বরে অবস্থান( ভিডিও)

আবু সাইদ বিশ্বাস:    ক্রাইমবাতা রিপোট:  নোবেল করোনা ভাইরাসের কারণে সাতক্ষীরার জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ। সীমিত পরিমাণের ত্রাণ বিতরণে ক্ষোভ বেড়েছে জনমানে। কঠোর লকডাউনে নিন্ম আয়ের মানুষের জীবন নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে।। ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান পুলিশ আটক করায় গত দুদিন ধরে শ্রমিকরা জেলা প্রশাসক চত্ত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে। তাদের অভিযোগ গত কয়েক দিন ধরে তাদের অনেকে অনাহারে আছে। কেউ সন্তানের মুখে দুধ পর্যন্তও তুলে দিতে পারছে না। আবার কেউ জানালেন আয় না থাকায় পিতা-মাতার চিকিৎসা করাতে পারছেননা। সংকটকালীন সময়ে কর্মহীন এসব মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে পরিবেশ বিপর্যয়, ধানের পরিবর্তে চিংড়ি চাষ, কল-কারখানা গড়ে না উঠা, আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারে মন্দাভাব ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারায় জেলায় বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। নতুন করে করোনা ভাইরাসের প্রভাব জেলা বাসির কাছে যেন ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয় দাড়ালো। এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ রা হয়েছে তা জেলা বাসীর দুটি খানার সমতুল্য।
সূত্রবলছে দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি ১৭ লাখ। নির্ভরশীলতার হার প্রায় ৪৮ শতাংশ। আর ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেকার এবং তাদের ওপর নির্ভরশীলদের যুক্ত করলে লকডাউনে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পরা শ্রমজীবী মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৮ কোটি। এর মধ্যে এ জেলাতে প্রায় ৫ লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। সূত্রমতে গৃহস্থালি পর্যায়ে কাজ করেন ২০ দশমিক ৮ শতাংশ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত কিংবা স্থানীয় সরকার পর্যায়ে কাজ করেন মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
২০২১ সাল অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রথম বছর। তাতে বেকারত্বের হার ৩ দশমিক ১ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা আছে। সরকারের পরিকল্পনা হচ্ছে, ২০২৫ সাল নাগাদ দেশে শ্রমশক্তি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ হারে, আর কর্মসংস্থানও বাড়বে একই হারে। অর্থাৎ শ্রমশক্তির যত প্রবৃদ্ধি ততই কর্মসংস্থান। আর এই সময়ে বিদেশে চাকরির সুযোগ হবে দশমিক ৫ শতাংশ হারে, আর অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে ১ দশমিক ৫ শতাংশ।
এদিকে সারাদেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান ববন্ধ করার উদ্যোগে নেওয়া লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হতে চলেছে। সাতক্ষীরায় পুলিশের হাতে আটক মোটর চালিত ভ্যান-রিক্সা ও ইজিবাইক ফেরত পাওয়ার দাবীতে দ্বিতীয় দিনেরমত অবস্থান কর্মসুচি পালিত হয়েছে। খেটে হতদরিদ্র এসব চালকরা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মঙ্গলবার ও বৃধবার দুদিন ধরে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে জেলাটিতে মোট জনসংখ্যা ২৩ লক্ষ ১৭ হাজার ১৫৮ জন। নিয়মানুযায়ী দেেেশ প্রতি বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হাজারে জন।। সেই হিসাব মতে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সাতক্ষীরাতে লোক সংখ্যা দাড়াবে ২৪ লক্ষের কাছাকাছি।
বেশির ভাগ পরিসংখ্যান সূত্রনাযায়ী একটি পরিবারে ৫ জন করে সদস্য ধরলে জেলাতে পরিবার সংখ্যা দাঁড়াবে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টি। জনসংখ্য(সুত্র:পকেট বুক-২০১৬)। খাদ্য পরিস্থিতি ২০২০-২১ অনুযায়ী জেলাতে ১৮ লক্ষ মানুষ কৃষক পরিবারের সাথে জড়িত। তাদের পরিবার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৬০ হাজার ৫৫০টি। মৎস,চাকুরী,শ্রমিকসহ অন্যান্য পেষায জড়িত রয়েছে সাড়ে ৫ লক্ষ এর কাছাকাছি।
জেলা কৃষি বিভাগের হিসাব মতে জেলাতে ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমি আছে। এসব জমিতে ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫৫০টি পরিবার কৃষি কাজ করে থাকে। এর মধ্যে ভুমিহীন চাষী রয়েছে ৬৭ হাজার ২৩০টি,প্রান্তিক চাষী রয়েছে এক লক্ষ ৩১ হাজার ৩৭টি,ক্ষুদ্র চাষী রয়েছে এক লক্ষ ৯৫৭টি,মাঝারি চাষী রয়েছে ৪৪ হাজার ৮৪২টি এবং বড় চাষী রয়েছে ১৪ হাজার ৪৮৪টি। খাদ্য বিভাগের হিসাব মতে একজন ব্যক্তির দৈনিক ৪৪২ গ্রাম চাউল (দানা শস্য) প্রয়োজন। সেই হিসাবে দৈনিক জেলাতে চাইলের প্রয়োজন ১২৩৫.৪২ মে:টন। যা মাসের হিসাবে দাড়ায় ৩৭৭৪.৩৪ মে:টন। বছর হিসেবে দাঁড়ায় ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮৯২ মে:টন। সেই হিসাবে জেলা প্রশাসন করোনা কালিন সময়ে যে খাদ্য বিতরণ করেছে তার খুবই নঘন্য। যা জেলা বাসির এক দিনের খাদ্যের সমান।
খানপুর মাদ্রাসারা নবম শ্রেণীতে পড়–য়া ছাত্র মারুফ হোসেন জানান, তারা বাবা মা অসুস্থ। লকডাউনে মাদ্রাসা ছুটি। তাই ভ্যান চালাতে বের হয়।গত কয়েকদিন হয়ে গেল পুলিশ আমার ভ্যানটি দিচ্ছে না। এখন আমরা না খেয়ে আছি। আব্বার চিকিৎসাও করাতে পারছি না। এসময় তার চেখের পানিতে অবস্থান কর্মসুচি স্থলে এক হৃদয় বিদারক অবস্থার সৃষ্টি হয়।
সুলতানপুরের ভ্যানচালক মহাসিন। স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান নিয়ে গত ১০ ধরে একবার পুলিশ,একবার, ডিসি অফিসসহ নানান জায়গাতে ধর্না দিচ্ছে। কোন কাজ হচ্ছে না। গতকাল তার স্ত্রী এসে ডিসি অফিস চত্বরে তাদের দুখের কথা জানালেন, বাচ্চার দুধ কেনারও পয়সা নেই। টাকা নেই। কাজ নেই,খাব কি। একই অবস্থা মিজানুর,ইদ্রিস,মুনতাজ,জিয়াদ,শাহাবুদ্ধিনসহ অনেকের।
গত কয়েকদিনে আটক হওয়ায় শতাধীক মোটরচালিত ভ্যান, রিক্সা ও ইজিবাইক চালকেরা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে হুটকরে এধরনের সিদ্ধান্ত নিয়ে গরিব মানুষগুলোর সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। তারা আরো বলেন, করোনাকালীন চলমান লকডাউনে তারা তাদের পরিবারপরিজন নিয়ে খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউ তাদের কোন সাহায্য দিচ্ছেননা। এরই মধ্যে পুলিশ তাদের ভ্যান রিক্সা আটকে
রাখায় তারা না খেয়ে জীবন যাপন করছেন। তারউপর তাদের ঋনের কিস্তিও টানতে হচ্ছে। তারা এ সময় অবিলম্বে তাদের ভ্যান-রিক্সা ছেড়ে দেয়ার আহবান জানান।
সাতক্ষীরার নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির তাদের বক্তব্য শুনে বিষয়টি পুলিশ সুপারের সাথে আলোচনা করে সমাধান করার আশ^স্তের কথা জানান।

ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন

https://youtu.be/wbSQtZ9Sp9w

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।