সব্যসাচী বিশ্বাস ( অভযনগর) যশোর :
যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলা এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক নগরী নওয়াপাড়ার খেটে খাওয়া দিনমুজুর ও অসহায় হতদরিদ্র মানুষেরা এখন বিপাকে। একদিকে রয়েছে দেশজুড়ে টানা লকডাউন অপর দিকে করোনা মহামারির আতংক। তাদের মনে প্রশ্ন, এখন কি করবো? কি খাবো? কিভাবে বাঁচবো আমরা?
সারাদিন খেটে দিন মুজুর হিসেবে যে অর্থ উপার্জন করি তাতে খেয়ে পরে আল্লাহর রহমতে এক প্রকার ছেলে-মেয়েদের মুখে অন্ন যোগাতে পারছিলাম। এখনতো এটাও বন্ধ হয়ে গেল। অর্ধ বয়সী এক রিকশাওয়ালা জানান, আমরা দিন আনি দিন খাই, না আনলে না খেয়ে থাকতে হয়। রিকশা যদি রাস্তায় বের করতে না পারি তাহলে আমরা খাবো কি? ইজিবাইক চালক আলম জানায়, অনেকেরই কিস্তির মাধ্যমে এই বাইকগুলো কেনা হয়েছে। এখন আমরা উপার্জন করতে না পারলে কিভাবে কিস্তি পরিশোধ করবো ও পেটের অন্ন যোগাবো? চায়ের দোকানদার প্রতিবন্ধি ইব্রাহিম কান্নাস্বরে মনের কষ্টগুলো ব্যাখা করে বলেন, চায়ের দোকানের উপর আমার পরিবারের ভরণ-পোষণ চলে, দোকান বন্ধ করলে কিভাবে বাঁচবো? না খেয়ে মরে যেতে হবে। রাজশাহী, কয়রাসহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার দূর-দুরান্ত থেকে আসা ঘাট শ্রমিকরা জানায়, আমরা উপজেলার নওয়াপাড়ার বিভিন্ন ঘাটে কাজ করি, ব্যাচেলার হিসেবে ঘরভাড়া করে থাকি। যদি কাজ করতে না পারি তাহলে, আমরা খাবো কি? ঘরভাড়া দিবো কিভাবে?
তাছাড়া গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে মেয়েরা আমাদের মুখপানে চেয়ে থাকে কখন বিকাশে টাকা পাঠাবে। ক্ষুদ্র-ব্যবসায়ী মুদি দোকানদার বিভিন্ন পণ্য, খাদ্যসামগ্রী বিক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যদি দোকান খুলতে না পারি তাহলে আমাদের কি অবস্থা হবে? আমরাতো পথে নেমে যাবো। ঝালমুড়ি বিক্রেতা রেজাউল হোসেন বলেন, প্রায় একটা বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ স্কুল মাদ্রাসা খোলা থাকলে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ঝালমুড়ি বিক্রি করেছি। আমার পরিবারে ৪/৫ জনের খোরাকি কিভাবে যোগাড় করবো? দীর্ঘ লকডাউনে সংকটে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা।
মহামারী করোনাকালে এমনিতে মানুষের আয় কমে গেছে, কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায়, চলাচলে বাঁধা নিষেধ আরোপ করায় চরম সংকটে হাবুডুবু খেতে হচ্ছে-দিনমুজুর, রিকশা-ভ্যান চালক, দোকান ও ঝাল মুড়ি বিক্রেতার মত অসংখ্য মানুষকে করোনার শুরুতে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠণ, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ে ও গরীব খেটে খাওয়া মানুষের সহায়তায় অনেকেই এগিয়ে এসেছিলেন। অর্থ ও খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছিল, কিন্তু এখন করোনা সংক্রমনের ঢেউ বহুগুণ বৃদ্ধি পেলেও লকডাউন বিধি নিষেধ দীর্ঘ হলেও কেউ আর তেমন ভাবে এগিয়ে আসছেন না প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের সহায়তায়। ফলে তাদেরকে ঝুঁকি নিয়েই পেটের টানে বের হতে হচ্ছে ঘরের বাইরে। সেখানে আয়ের নিশ্চয়তা না থাকলেও হয়রানি, শাস্তির অভাব নেই, এমনিতে কাজ নেই বললেই চলে, অটো রিকশাচালকে যাত্রী পেলেও নানা ঝামেলার শেষ নেই। পুলিশের বাঁধা, জরিমানা, হাওয়া ছেড়ে দেয়ার আশঙ্কায় থাকতে হয়। এভাবে দিন শেষে গাড়ি জমা, ব্যাটারি চার্জের টাকা পরিশোধ করে আসে উপার্জনের সামান্য কিছু অংশ।
এ অবস্থায় সামনে কঠোর লকডাউনে কি হবে সে চিন্তায় চোখে অন্ধকার দেখতে হচ্ছে তাদেরকে মহামারি করোনা মোকাবিলায় গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টার শেষ নেই। দফায় দফায় লকডাউনের পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষা, চিকিৎসায় সর্ব শক্তি নিয়োগ করেও সামাল দিতে কঠিন হয়ে উঠেছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ডভঙ্গ হচ্ছে প্রায়ই। আগের তুলনায় অনেক বেশি সচেতনতা ও স্বাস্থ্যবিধি সঠিক ভাবে মেনে চলা হলেও এখনো অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ঢিলে-ঢালা অবস্থা বিপদের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। শহর থেকে গ্রামে, সীমান্ত পেরিয়ে যেভাবে ছড়াচ্ছে তা আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় লকডাউন সফল করার উপরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশেই নির্ভর করছে। এজন্য গরিব হতদরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। ঘরে খাবার না থাকলে এটা যে আদৌ সম্ভব নয় সেটাতো জানা কথা। তাই প্রশাসন থেকে খাদ্য সঙ্কটে বা বিভিন্ন সমস্যায় ৩৩৩ নাম্বারে কল করার কথা বলা হয়েছে কিন্তু এই ঘোষণা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা দেখা যায়নি। প্রান্তিক পর্যায়ে জনপ্রতিনিধি রাজনীতিবিদ, মসজিদের ইমাম, স্কুল শিক্ষক, সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠণ, পাড়া মহল্লার ক্লাব ও ছাত্রদের সমন্বয়ে খাদ্য ও অর্থপ্রাপ্তির এই নিশ্চয়তার কথা প্রচার করা হলে সুষ্ঠুভাবে সহায়তা দানের ব্যবস্থা করা হলে লকডাউনে মানুষের ঘরে থাকা নিশ্চিত করা যেতে পারে। এজন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ একান্ত জরুরী।