# ঢাকায় বৃহস্পতিবার গ্রেফতার ১ হাজার ৭৭ জন
# রেকর্ড জরিমানা সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা
স্টাফ রিপোর্টার : করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দেশব্যাপী আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধের অষ্টম দিনে রাস্তায় মানুষের আনাগোনা কিছুটা বেশি আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যাও। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এদিকে, রিকশা-ব্যক্তিগত গাড়িসহ নানান যানবাহন ব্যবহার করে মানুষের চলাচল প্রবণতা আগের সাতদিনের তুলনায় বেশি লক্ষ্য করা গেছে। চেকপোস্টগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঢিলেঢালাভাংব চোখে পড়েছে। সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর টহল টিম মূল রাস্তায় থাকলেও অলিগলিসহ এলাকার বাজারগুলোতে মানুষের আনাগোনা নিয়ন্ত্রণে কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনায় মৃত্যু এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর গ্রেফতারেও কমছে না রাস্তায় বের হওয়া মানুষের সংখ্যা। কঠোর বিধিনিষেধের আগের দিনগুলোর তুলনায় বৃহস্পতিবার রাস্তায় যানবাহন বেশি হওয়ার কারণ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সেবাখাত, ব্যাংক কিছু দফতর বিধিনিষেধের আওতামুক্ত থাকা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সকালের ভ্যাপসা আবহাওয়া উপেক্ষা করে মানুষকে রাস্তায় নামতে দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে আরোহীর অপেক্ষায় থাকা রিকশাচালকদের জটলা লক্ষ্য করা গেছে। মূল রাস্তার কোথাও কোথাও টিসিবি’র পণ্য বিক্রয় শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে, রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে সেনা চেকপোস্টে যানবাহন আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করার দৃশ্য দেখা গেছে। শান্তিনগরের দিকে ফুটপাতের আশপাশে প্রায় সব দোকানপাট খোলা থাকতে দেখা যায়। এ রাস্তায় গাড়ির চাপও ছিল লক্ষ্য করার মতো। গুলিস্তান মোড় এবং এর আশেপাশের এলাকায় রীতিমতো রিকশাজট ছিল সকাল থেকেই। চেকপোস্টে গাড়ি আটকানো হলেও দোকানপাট বন্ধের ব্যাপারে পুলিশের বাড়তি তৎপরতা দেখা যায়নি।
এদিকে কঠোর লকডাউনের অষ্টম দিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হাতে গ্রেফতার হয়েছেন এক হাজার ৭৭ জন। ৩১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে ১৬ লাখ ৭৯০ টাকা। এছাড়া ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক ৯৩৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ২১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা। আজ পর্যন্ত রাজধানীতে মোট গ্রেফতার হয়েছেন পাঁচ হাজার ২৬৪ জন।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) লকডাউনের অষ্টম দিনে অভিযানে এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয় ডিএমপির আটটি বিভাগ। এসব তথ্য জানান ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ইফতেখায়রুল ইসলাম।
তিনি বলেন, লকডাউনের অষ্টম দিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডিএমপির ৮টি বিভাগের রমনা, লালবাগ, মতিঝিল, ওয়ারী, তেজগাঁও, মিরপুর, গুলশান ও উত্তরা এলাকায় সরকারি নিয়ম অমান্য করে বাইরে বের হওয়ায় এক হাজার ৭৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। লকডাউনে সড়কে যানবাহন নিয়ে বের হওয়ায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ট্রাফিক বিভাগ ৯৩৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ২১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ টাকা।
তিনি আরও বলেন, সরকার করোনার সংক্রমণরোধে চলমান বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে আজ অষ্টম দিনেও রাজধানীজুড়েই সক্রিয় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীতে সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে অকারণে ও নানা অজুহাতে ঘর থেকে বের হওয়ায় এবং লকডাউনের মধ্যে প্রতিষ্ঠান খোলা রাখায় ৩১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১৬ লাখ ৭৯০ টাকা জরিমানা করা হয়।
উল্লেখ্য, গতকাল বুধবার লকডাউনের সপ্তম দিনে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হাতে গ্রেফতার হন এক হাজার ১০২ জন। ২৪৫ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয় এক লাখ ৭১ হাজার ৯৮০ টাকা। এছাড়া ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক ৮০৪টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয় ১৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা।
ষষ্ঠ দিন মঙ্গলবার সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে বাইরে বের হয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন ৪৬৭ জন। ৩০৫ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছিল দুই লাখ ২৭ হাজার ৪৮০ টাকা। এছাড়া ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক এক হাজার ৮৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলায় জরিমানা করা হয় ২৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা।