সব্যসাচী বিশ্বাস (অভয়নগর) যশোর:
যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায় নতুন আর এক ভবদহের জন্ম হতে চলেছে। তিন ফসলি ১শ’ ৯০ বিঘা জমির ফসল পানি নিচে তলিয়ে গেছে। সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে ঋণগ্রস্থ কৃষকরা। নওয়াপাড়া পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড এর উত্তর পশ্চিম এলাকা সংলগ্ন এবং চলিশিয়া ইউনিয়নের পূর্বপ্রান্তসহ বেশ কয়েক জায়গার প্রায় ১শত ৯০ বিঘা অতি উত্তম ফসলী জমি রয়েছে। স্থানীয় ভাবে খরলার বিল নামে পরিচিত,যার চারপাশে গাজীপুর, জাফরপুর, একতারপুর এবং গ্রামতলা এলাকার প্রান্তিক চাষীদের বসবাস। ধান, সবজি ও পান চাষ হচ্ছে তাদের আয়ের প্রধান উৎস।
বর্ষা মৌসুমে এই মাঠের ৩ দিক দিয়ে ৫টি পোলের পানি এসে পড়ে এই বিলে এবং সেই পানি ২টি জায়গা দিয়ে বিনা বাধায় নিষ্কাশন হয়ে আসছিল দীর্ঘদিন যাবৎ। অপরিকল্পিত বাড়িঘর ও মৎস্য ঘের তৈরীর কারণে এই এলাকার ফসলি জমিসহ বাড়িঘর, গোয়ালঘর, উঠান, বাথরুম, টিউবওয়েল পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে আছে। ওই এলাকা দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় সাপের আতঙ্কে এলাকার প্রায় ৩শ’ পরিবার তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
এ বিলের ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক চাষী ইয়াকুব আলী জানান, আমি ৬ বিঘা জমি লিজ নিয়ে প্রতি বছর সবজী ও ধান চাষ করে আমার পরিবারের ৫ জনের মুখে অন্ন তুলে দিয়ে থাকি। এই কিছু দিন আগে জমির লিজের টাকা মালিককে দিয়ে ১বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলাম। আর ৬ বিঘা জমিতে ধান, কিন্তু অপরিকল্পিত ঘের ও পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় আমার সে সকল ফসল পানিতে ডুবে গিয়ে সব নষ্ট হয়ে গেছে।
এখন আমি কি করে আমার পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করবো? তাদের মুখে খাবার তুলে দেবো আর সামনের দিনে জমির মালিককে কিভাবেই বা লিজের টাকা দেবো? এ বিলের আরেক ভুক্তভোগি শেখর মন্ডল বলেন, আমাদের ৫ ভাইয়ের ২বিঘা জমিতে ছিলো পানের বরজ যা এই জলাবদ্ধতায় শেষ হয়ে গেছে। আমরা সর্বশান্ত হয়ে গেছি। আমাদের ৫ লাখ টাকার পান নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা এখন কিভাবে আমাদের পরিবারের মুখে দু-বেলা দু-মুঠো খাবার তুলে দেবো? পানের বরজ তৈরী করতে অনেক টাকা লাগে। আমরা বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ গ্রহন করেছি, এখন কি ভাবে এই ঋণ শোধ করবো? ভেবে পাচ্ছি না। শুধু এরা নয়, এ বিলের চারপাশের কৃষক দিলিপ, গনেশ, আশুতোষ, মানিক একই কথা বলে বিলাপ করতে থাকেন। এই অসহায় মানুষগুলির পাশে যে ব্যক্তিটি সবসময় দাড়িয়েছেন।
এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে চেয়েছেন যে ব্যক্তিটি সেই গোলাম রশিদ বাবলুর সাথে কথা বল্লে তিনি বলেন, আমি এলাকাবাসীকে নিয়ে কয়েকবার এর স্থায়ী সমাধানের জন্য বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে যোগাযোগ করেছি কিন্তু কোন ফল আসেনি। আজ থেকে ৬ মাস আগে আসন্ন বর্ষা মৌসুমের ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে সরকারী অফিস গুলিতে যোগাযোগ করলে এসিল্যান্ড, সমাজ কল্যাণ অফিসার ও এল.জি.ডি প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ম্যাপ তৈরী করে নিয়ে যান এবং বিলের পশ্চিম পাশে একতারপুর সরকারী রাস্তার পাশ দিয়ে খুব সহজেই পানি কয়ার বিল হয়ে খালে ফেলতে পারবে বলে আমাদের আশা দিয়ে যান। কিন্তু ৬ মাসেও তাদের আর কোন ভুমিকা চোখে পড়েনি।
এদিকে যা আশংকা ছিলো তাই ঘটেছে। বর্ষার প্রকোপে প্রতিনিয়ত বৃষ্টির পানি ক্রমান্নয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা না থাকার কারনে এলাকাবাসির সার্বিক জীবন যাত্রাসহ বৃহৎ ফসলী জমির চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সর্বশান্ত হয়েছে কৃষক পরিবারগুলি। এসব এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠির বিশাল সম্ভাবনাময় ফসল উৎপাদনের এ স্বপ্নভূমি আজ তাদের গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দুর্বিসহ জীবন যাপনের দুঃসপ্ন দেখছে তারা। বেশ কিছু মানুষের ঘরবাড়ি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এলাকার দরিদ্র প্রান্তিক কৃষক জনগোষ্ঠির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আকুল দাবী বন্ধ হওয়া ব্যক্তি মালিকানার জায়গাটির ৪শ’ ফিট পূর্ব পাশে একতারপুর, জাফরপুর সীমান্তবর্তী জায়গা আছে, অপরদিকের সরকারী রাস্তার পাশ দিয়ে কয়ার বিল হয়ে খালের যে অংশ বন্ধ রয়েছে এই দুটি জায়গা পুনরূদ্ধার করে বিলের পানি নিস্কাসনের যথাযথ জরুরী ব্যবস্থা গ্রহন করে এলাকাবাসীর জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে দেন।