হারারেতে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে রেকর্ড গড়েছে।
নাঈম-সৌম্যর সেই রেকর্ড জুটিতে ভর করে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
টসে জিতে আগে ব্যাট করে জিম্বাবুয়ে। ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে ১ ওভার বাকি থাকতেই গুড়িয়ে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস।
এর পরও বাংলাদেশকে ১৫৩ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর ছুড়ে দেয় সিকান্দার রাজার দল।
জিম্বাবুয়ে দলের বোলাররা কোনো সাফল্যই পায়নি ম্যাচে। দুটি আউটই হয়েছে রানআউটে।
জিম্বাবুয়ে বোলার দলকে ভালো শুরু এনে দেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও সৌম্য সরকার।
১৩.১ ওভারে গিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙে। ততক্ষণে বাংলাদেশের স্কোর ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। এটি বাংলাদেশের পক্ষে একটি রেকর্ডও।
উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ৯২। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই গত বছর মার্চে এই জুটি গড়েছিলেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস।
এবার তাদের রেকর্ড ভাঙলেন নাঈম-সৌম্য। রেকর্ড শতরানের জুটিতে সৌম্যর অবদান কাঁটাকাঁটায় ৫০ রান। ৪৫ বলে ৫০ রানে ব্যাট করার সময় রানআউট হয়ে ফিরলেন সৌম্য। চার বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় এই ইনিংস সাজিয়েছেন এ স্টাইলিশ ওপেনার।
সৌম্যর ফেরার কিছু পরেই ফিফটির দেখা পান ওপেনার নাঈম শেখও। ৪০ বলে করেছেন ফিফটি হাঁকান তিনি।
সৌম্যর আউটের পর ব্যাট হাতে নামেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ একটি সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রানআউটের শিকার হন।
ক্রিজে পৌঁছার একটু আগে ব্লেসিং মুজারাবানির সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে যায় মাহমুদউল্লাহর।
এরপর নাঈমের সঙ্গী হন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান।
১৭ ওভার শেষে জয়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রয়োজন পড়ে ২৭ রানের। অর্থাৎ ১৮ বলে দরকার ২৭ রান।
আর ৭ বল বাকি থাকতেই তা পূরণ করে ফেলেন নাঈম-সোহান জুটি।
১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মুজারাবানির ফুলটস ডেলিভারিটি ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকান সোহান।
ওভারের পঞ্চম বলটি মিড-অফ দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
৫১ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৬৩ রান করে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ নাঈম। ৮ বলে ১৬ রান কের নাঈমকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে মাঠ ছাড়েন সোহান।
১২ বলে ১ চারে ১৬ রান করেন তিনি।
এর আগে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন।
দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৩ রান আসে রেগিস চাকাভার ব্যাট থেকে। মাত্র ২২ বলে এ রান করেন চাকাভা। এছাড়া ডিওন মায়ার্স ২২ বলে ২৫ ও ওয়েসলে মাধেভেরে ২৩ বলে ২৩ রান করেন।
বাংলাদেশের পক্ষে মুস্তাফিজুর রহমান তিনটি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া শরিফুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন দুটি করে এবং সাকিব আল হাসান ও সৌম্য সরকার একটি করে উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস : জিম্বাবুয়ে
জিম্বাবুয়ে : ১৫২/১০ (১৯ ওভার)
চাকাভা ৪৩, মায়ার্স ৩৫
মুস্তাফিজ ৩১/৩, শরিফুল ১৭/২, সাইফউদ্দিন ২৩/২
বাংলাদেশ : ১৫৩/২ (১৮.৫ ওভার)
নাঈম ৬৬*, সৌম্য ৫০, সোহান ১৬*, রিয়াদ ১৫
ফল : বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।
সাতক্ষীরার গর্ব
সৌম্যর বাবা সাকেব সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কিশোরী মোহন সরকার। কিশোরী মোহন সরকারের গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার মহিষাডাঙ্গা গ্রামে। তিনি বেড়ে উঠেছেন ওই গ্রামে। নিজেও একজন ক্রিকেট খেলোয়াড় ছিলেন। সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে খেলতে আসতেন ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার পথ সাইকেলে পাড়ি দিয়ে। মেেজা ছেলে পুষ্পেন সরকার একজন ভালো ক্রিকেট খেলোয়াড় ছিলেন। ঢাকায় প্রথম বিভাগে খেলেছেন। ইনজুরির কারণে তাঁর স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বুঝতেই পারছেন, সৌম্য বংশগতভাবেই একজন ক্রিকেটার। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের ব্যাট আর বলের সঙ্গে সৌম্যর সখ্য।
১১ বছর বয়সে সাতক্ষীরা সরকারি বিদ্যালয়ের হয়ে ডিউজ বলে স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্টে নৈপুণ্য দেখান। তারপর পুষ্পেনসহ পরিবারের সবার ইচ্ছায় ২০০৬ সালে সৌম্যকে ভর্তি করা হয় বিকেএসপিতে, সপ্তম শ্রেণিতে। ওইখানে মূলত তাঁর ক্রিকেটের ভিত শক্ত হয়। কথা বলার একফাঁকে আসেন সৌম্য সরকার। যিনি শুধু সাতক্ষীরায় নন, এখন দেশের একজন আলোচিত ক্রিকেট খেলোয়াড়।
সৌম্য জানান, দাদা পুষ্পেনের খেলা দেখে ভালো ক্রিকেটার হওয়ার আগ্রহ প্রথম মাথায় জেঁকে বসে। দাদার খেলায় একটা আলাদা ছন্দ ছিল। ভালো লাগত।