গরু, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া রাস্তার পাশে ফেলে দেয়া হয়েছে

বগুড়ায় গরিবের হক কুরবানির পশুর চামড়ার দাম নেই। তাই ছোট গরু, ছাগল ও ভেড়ার চামড়া রাস্তার পাশে ফেলে দেয়া হয়েছে। চাহিদা মতো সংগ্রহ করতে না পেরে ও লোকসানের ভয়ে অনেক সাধারণ ব্যবসায়ী ঈদের পরদিন শহরের বাদুড়তলা, চকসুত্রাপুর, চামড়া গুদাম লেন এলাকায় রাস্তার পাশে গরু, ছাগল ও গরুর মাথার চামড়া ফেলে দেন।

পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা স্তুপ থেকে চামড়াগুলো সংগ্রহ করে ট্রাকে তুলে শহরের বাইরে গোকুলের ভাগাড়ে ফেলে দিয়েছেন। ফেলে দেওয়া এসব চামড়া পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

পরিচ্ছন্নকর্মীরা জানিয়েছেন, ফেলে দেয়া অন্তত ১৪ হাজার চামড়ার মধ্যে ছাগলের চামড়া ও গরুর মাথার চামড়াই বেশি।

শহরের বাদুড়তলার চামড়া ব্যবসায়ী মোকাররম আলী, কামরুল হোসেন, সারোয়ার হোসেন প্রমুখ জানান, রাস্তার পাশে স্তুপ করে ফেলে দেয়া চামড়ার মধ্যে কুরবানির ছাগল ও গরুর নিম্নমানের চামড়া রয়েছে। এ মৌসুমে ব্যবসায়ীরা তাদের চাহিদা মতো চামড়া সংগ্রহ করতে পারেননি। ছাগলের চামড়ার চাহিদা এবারও কম। যেসব মৌসুমী ব্যবসায়ী ছাগলের চামড়া কিনেছেন তাদের বেশিরভাগ লোকসান গুনছেন। ছাগলের চামড়া ১০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আরও কম দামে কিনেছেন। দাম না থাকায় অনেকে ক্ষুব্ধ হয়ে চামড়া ফেলে দিয়ে গেছেন। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা চামড়াগুলো পৌরসভার ট্রাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, গত বছরে চেয়ে এবার আমদানি অনেক কম। শহরে কুরবানি বেশি হলেও গ্রামে কম হয়েছে। তারপরও চামড়ার দাম বাড়ছে না।

বুধবার সকাল থেকে শহরের থানা মোড় থেকে চকসুত্রাপুর পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনার জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকান খুলে বসেন। তবে বিগত বছরের মতো আমদানি কম লক্ষ্য করা গেছে।

কুরবানির গরুর চামড়া ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮৫০ টাকায় বিক্রি হয়। ছাগলের চামড়া ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা। ভেড়ার ও ছোট খাসির চামড়া পাঁচ টাকায় কেনাবেচা হয়েছে।

আবার শহরের একটু বাইরে চাঁদমুহা, বারপুর, ঘোড়াধাপসহ বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমী ব্যবসায়ীরা গরুর চামড়া ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫০ টাকায় কিনেছেন। ছাগলের চামড়া ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা ও ভেড়ার চামড়া পাঁচ টাকায় কেনেন।

একটি মাদ্রাসা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের শিক্ষক বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের চকসুত্রাপুর এলাকায় কয়েকটি ছাগলের চামড়া ফেলে দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই শিক্ষক জানান, সাতটি গরুর চামড়া ও ১১টি খাসির চামড়া দান পেয়েছেন। গরুর চামড়া ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। কেউ খাসির চামড়া না নেওয়ায় ফেলে দিতে বাধ্য হন।

বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়ার ব্যাংকার মামুনুর রশিদ, রাজন ও সায়েদ আলী জানান, তারা পাঁচ ভাগে ৮৭ হাজার টাকায় একটি গরু কেনেন। কয়েকদিন খাওয়ানোর পর প্রায় ৯০ হাজার টাকা দাম পড়ে যায়। কুরবানির পর সে গরুর চামড়া মাত্র ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।

শহরের কাটনারপাড়ার ব্যবসায়ী আবদুর রহমান জানান, তিনি ৭১ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৪০০ টাকায়। তার ১৮ হাজার টাকা মূল্যের খাসির চামড়ার দাম নেই। তাই চামড়াটি একটি মাদ্রাসায় দান করেছেন।

শহরের সুত্রাপুর এলাকার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ৬৭ হাজার টাকা মূল্যের গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৪০০ টাকায়। দুটি ভেড়ার চামড়ার দাম ১০ টাকা দিতে চাওয়ায় বিক্রি করেননি। পরে চামড়া দুটি ফেলে দিয়েছেন।

কয়েকজন মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী জানান, গত ৮-১০ বছর ধরে তারা চামড়া কেনাবেচা করছেন। তবে গত ৩-৪  বছর ধরে তাদের ব্যবসায় মন্দাভাব যাচ্ছে। চামড়ার দাম না থাকায় পুঁজি হারিয়ে তাদের অনেকে এবার ব্যবসা থেকে সরে গেছেন। সে কারণে তারা এবার আড়ত থেকে দাম জেনে নিয়েই কম দামে কিনছেন।

বৃহস্পতিবার বিকালে বগুড়া সদরের গোকুল এলাকায় ময়লার ভাগাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা ট্রাকে আনা পঁচন ধরা চামড়াগুলো ফেলছেন।

তারা জানান, এসব চামড়া শহরের বাদুড়তলা, চকসুত্রপুর, চামড়াগুদাম এলাকায় পড়েছিল। তাদের হিসাবে সকাল থেকে প্রায় ১০ হাজার গরু-ছাগলের চামড়া ভাগাড়ে ফেলেন।

বগুড়া চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিন সরকার জানান, পঁচে যাওয়ার কারণে নিম্নমানের গরুর চামড়া ফেলে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ছাগলের চামড়ার চাহিদা কম থাকলেও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা অনেক কেনেন। দাম না পেয়ে তারা ছাগলের চামড়াগুলো ফেলে দিয়েছেন। আমরা দ্রুত চামড়াগুলো অপসারণ করছি।

ব্যবসায়ী এই নেতা আরও বলেন, তাদের ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ট্যানারি মালিকদের কাছে ২৫ কোটির বেশি টাকা পাওনা রয়েছে। অথচ ট্যানারি মালিকরা তাদের পাওনা টাকা পরিশোধ করছে না। ট্যানারি মালিকরা টাকা না দেওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে গেছেন। একটি চামড়া কেনার পর তা প্রসেসিং করতে অনেক খরচ হয়। এ কারণে আড়তদারদের চামড়ার ব্যাপারে আগ্রহ কম ছিল।

Check Also

তালায় ইউপি পরিষদ কক্ষে দুই সাংবাদিকের উপর হামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন

তালা প্রতিনিধি তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদে সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম ও আতাউর রহমানের ওপর সন্ত্রাসী রমজান আলী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।