শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী ইউনিয়নের শংকরকাটি সুন্নিয়া দাখিলা মাদরাসায় তিনজন কর্মচারী নিয়োগে চরম অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগে মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য শংকরকাটি গ্রামের মৃত ছাকাত আলী গাজীর ছেলে মো. ফোরকান আলী শ্যামনগর সহকারী জজ আদালত, সাতক্ষীায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং- ১৩০/২১। বর্তমানে মামলা ও নিয়োগকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী এবং মাদরাসার সুপার ও সভাপতির লোকজনের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোন মুহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছে এলাকাবাসী।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, শংকরকাটি সুন্নিয়া দাখিল মাদরাসায় পরিচ্ছনতা কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে নিয়োগে গোপনে অসৎ উদ্দেশ্যে স্বজন প্রীতি, দূর্নীতি আশ্রয় নেওয়া ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের অবগত বা রেজুলেশন ছাড়াই কার্যক্রম চালানো হয়েছে। মাদরাসার সুপার আকতার হোসাইন ও সভাপতি আব্দুল মাজেদ সরদার এর যোগ সাজসে গোপনে কর্মচারী নিয়োগের পায়তারা ফাঁস হয়ে গেছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েব সাইডে গত ৬ জুন পদগুলো নিয়োগের নিমিত্বে ডিজি প্রতিনিধির চিঠি প্রকাশিত হয়। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাহফুজা ইয়াছমিনকে ডিজি মনোনীত প্রতিনিধি নিয়োগ করা হয়। প্রতিনিধি নিয়োগের চিঠির ৮নং শর্তাবলীতে উল্লেখ রয়েছে-‘নিয়োগ যোগ্য পদ ও কমিটি নিয়ে মামলা থাকলে সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগের সুপারিশ করা যাবে না’।
এরপর গত ২৩ জুন কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার ও শ্যামনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবরে অভিযোগ করেও কোন সুরাহ হয়নি। অনিয়ম, স্বজন প্রীতি ও আর্থিক লেনদেন করে মাদরাসার সভাপতির নাতি মোজাফফার হোসেনকে নিরাপত্তাকর্মী, সুপারের ভাইপো হাবিবুল্যাহকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নাজমা বেগমকে আয়া পদে নিয়োগের বিষয়টি পূর্বেই অভিযোগ করা হয়েছিল। এ নিয়োগ নিয়ে রেজুলেশন ছাড়াই প্রক্রিয়ায় বিরোধীতা করে কমিটির ৯জন সদস্য, সকল শিক্ষক ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের স্বাক্ষরিত বিভিন্ন অবিযোগ বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালতে মাদরাসার সুপার, সভাপতি, মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি, ডিজি মনোনীত প্রতিনিধি, জেলা শিক্ষা অফিসার, শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও শ্যামনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ ১৬জনকে বিবাদী করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালতে মামলা ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের হওয়ায় মামলার বাদী ও শিক্ষকদেরকে সুপার ও সভাপতি তাদের বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন ভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি করে কর্মচারী নিয়োগ হলে তা বাতিল পূর্বক সরকারি বিধিমোতাবেক নিয়োগ দানের দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
মামলার বাদী ফোরকান আলীসহ স্থানীয়রা জানান, মহামারী করোনা ভাইরাসে দেশে যখন লক ডাউন চলমান থাকায় ১৫ জুলাই পর্যন্ত নিয়োগ বোর্ড বা নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এর মধ্যে গত ৩০ জুন শ্যামনগর সহকারী জজ আদালত, সাতক্ষীরা মামলা হয়েছে। যার পরবর্তী ধার্য্য তারিখ আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর। মামলা চলমান থাকায় নিয়োগে সুপারিশ না করার বিধান থাকলেও তাহা উপেক্ষিত। মাদরাসার সভাপতি আব্দুল মাজেদ সরদার নিয়োগ বোর্ড বিষয়টি এড়িয়ে যান।
মাদরাসার সুপার আকতার হোসাইন জানান, ১৫ জুলাইয়ের পর নিয়োগ বোর্ডের রেজুলেশন ও নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল সীটে ডিজি প্রতিনিধিসহ সকলের স্বাক্ষর আছে এবং কর্মচারী নিয়োগদান করা হয়েছে। তবে নিয়োগ বোর্ড/ নিয়োগ পরীক্ষা কোথায়, কখন হয়েছিল বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি এড়িয়ে যান।
সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি মামলার বিষয়টি জানিনা। জানলে নিয়োগ বোর্ড হতো না। বিষয়টি নিয়ে আমি ডিজি প্রতিনিধিকে অবহিত করবো।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি মনোনীত প্রতিনিধি সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মাহফুজা ইয়াসমিন বলেন, গত ১৬ জুলাই শুক্রবার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের একটি মাদরাসায় নিয়োগ বোর্ড হয়েছিল। তবে এ ঘটনায় যদি নিয়োগ বোর্ডের আগে মামলা হয়ে থাকে তাহলে নিয়োগ বাতিল হবে। আর যদি নিয়োগ বোর্ডের পরে মামলা হয় তবে ঐ মামলা কার্যকর হবে না। মামলা গত ৩০ জুন হয়েছে বললে তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই খারাপ হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। #
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …