রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অবাধে কাজের সুযোগ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে বাংলাদেশ এর বিরোধিতা করছে। বিশ্বব্যাংকের এ প্রস্তাবের বিপক্ষে মতামত দেওয়ার জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) চিঠিও দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে ‘রিফিউজি পলিসি রিভিউ ফ্রেমওয়ার্ক’ শীর্ষক একটি পলিসি পেপার পাঠায়। সেখানে উদ্বাস্তুদের সমাজে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আশঙ্কা, বিশ্বব্যাংকের এমন প্রস্তাব মেনে নিয়ে সংস্থা থেকে ঋণ নিলে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বদলে চিরতরে বাংলাদেশে রেখে দিতে হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের এ প্রস্তাবে পরিবর্তন আনা না হলে উদ্বাস্তু সংক্রান্ত কোনো অর্থ সংস্থাটির কাছ থেকে না নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বৃহস্পতিবার বলেন, বিশ্বব্যাংক কিছু অবজারভেশন দিয়েছে। যার কিছু কিছু আমাদের পছন্দ নয়। তাদের মূল কথা হলো রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে ইন্টিগ্রেশন (অন্তর্ভুক্তি) করা। বাংলাদেশ উদ্বাস্তু সংক্রান্ত কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। তাই আমরা এগুলো গ্রহণ করতে বাধ্য নই। বিশ্বব্যাংক যেসব ইস্যু এনেছে সেগুলো আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আনেনি। ইউএনএইচসিআর সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের অবজারভেশনের কথা উল্লেখ করলে আমরা বিষয়টি জানতে পারি। তখনই বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে শুরু করি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংকের এসব প্রস্তাব আমরা সংশোধন করতে বলেছি।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংকের রিফিউজি পলিসি রিভিউ ফ্রেমওয়ার্কের পক্ষে মত দিলে রোহিঙ্গারা দেশের ভেতরে যেকোনো স্থানে চলাচল করতে পারবে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অর্থাৎ শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে পারবে বা ব্যবসা করতে পারবে। পাশাপাশি তাদেরকে নিবন্ধনের আওতায় এনে সামাজিক পরিচয়পত্রও দিতে হতে পারে।
সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি মতামতের জন্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কাছে ‘রিফিউজি পলিসি রিভিউ ফ্রেমওয়ার্ক’ নামের একটি প্রস্তাব পাঠায় এবং সেখানে বলা হয়েছে, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে বাংলাদেশের কাছ থেকে তারা কোনো মতামত না পেলে প্রস্তাবটি সরকার মেনে নিয়েছে বলে ধরে নেবে। বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাবটি রোহিঙ্গাসহ অন্য দেশে যে সব উদ্বাস্তু রয়েছে তাদের সবার জন্যই প্রযোজ্য। এটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়। বৈশ্বিক ভিত্তিতে তৈরি ফ্রেমওয়ার্কের তিনটি উদ্দেশ্য হচ্ছে উদ্বাস্তু ও হোস্ট কমিউনিটির জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করা, উদ্বাস্তুরা যেদেশে অবস্থান করছে সেই সমাজে অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া অথবা তাদের ফেরত পাঠানো এবং দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যাতে করে নতুন উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হয়। এ প্রসঙ্গে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব ও বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান আব্দুল বাকী বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বব্যাংক থেকে পাঠানো পলিসি ব্রিফটি শুধু বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয়। এটা বিশ্বব্যাপী যেখানে উদ্বাস্তু রয়েছে সেসব দেশের জন্য প্রযোজ্য। এ বিষয়ে সংস্থাটি বাংলাদেশের মতামত জানতে চেয়েছে। আমরা পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছে মতামত চেয়েছি। তাদের মতামত পেলে শিগগিরই ইআরডি থেকে বিশ্বব্যাংকের কাছে মতামত পাঠানো হবে। তবে এখন পর্যন্ত শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই মতামত দিয়েছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আমরা এখন পর্যন্ত উদ্বাস্তু হিসাবে স্বীকৃতিই দেইনি। সেখানে বিশ্বব্যাংকের পলিসি ফ্রেমওয়ার্কের সঙ্গে এর মিল থাকবে না। তারপরও আমরা নেতিবাচক মতামত দিতে যাচ্ছি।যুগান্তর