হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় মদ-ক্যাসিনো পাওয়া নিয়ে যা পুলিশের বক্তব্য সঠিক বললেন তার মেয়ে

বর্তমান সময়ে আলোচিত- সমালোচিত আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য পদ হারানো এফবিসিসিআইর পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীরের রাজধানীর গুলশানের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব)।

তার বাসা থেকে আরও উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ মদ, বিয়ার, বিদেশি মুদ্রা, চাকু, মোবাইল সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম, এটিএম কার্ড ও হরিণের চামড়া।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ১০ মিনিটে  তাকে আটক করা হয়। র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু জানিয়েছেন, তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। র‌্যাব কার্যালয়ে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটকের সময় র‍্যাব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মাদকসহ যেসব মালামাল জব্দ করেছে সে বিষয়ে মুখ খুলেছেন হেলেনার মেয়ে জেসিয়া আলম।

বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে গুলশানের বাসায় অভিযান শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেন জেসিয়া। মদের বিষয়ে জানতে চাইলে জেসিয়া বলেন, আমার ভাইয়া মদ পান করেন। সেগুলোই বাসায় ছিল। তবে ভাইয়ার মদ পানের লাইসেন্স রয়েছে। পাসপোর্টও আছে।

হরিণের চামড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হেলেনার মেয়ে বলেন, ভাইয়ার বিয়ের সময় মায়ের সঙ্গে রাজনীতি করা নেতানেত্রীরা মিলে ওইটা গিফট করেছিলেন। সেটি দেয়ালে ঝোলানো ছিল।

ক্যাসিনোর সরঞ্জামাদির বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাসিনোর চিপস সেগুলো। আমরা নিজেরাই খেলতাম আর সময় কাটাতাম। তবে ক্যাসিনো খেলতে যে বোট আর সরঞ্জাম লাগে তা নেই আমাদের। ধরেন বাসায় তাস খেলে না কেউ? সে রকম একটা কিছু আরকি। জাস্ট ক্যাসিনোর চিপগুলো ছিল বাসায়। মানুষ গেম খেলতে পারে না? ওরকম।

বিদেশি মুদ্রার বিষয়ে জানতে চাইলে জেসিয়া বলেন, আমরা র‌্যান্ডমলি বিদেশে যাই। একাধিক দেশে আমাদের নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। বিদেশ থেকে আসার পর যে মুদ্রাগুলো বেঁচে যায় সেগুলো তো রাস্তায় ফেলে দিতে পারি না। ওইসব মুদ্রা থেকে গেছে।

গভীর রাতে অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হেলেনার মেয়ে।  বলেন, আমাদের বাসায় ইলিগ্যাল মালামাল রয়েছে মানলাম। তাই বলে ওরকমভাবে অভিযান করা যায়। কোনো ওয়ারেন্ট নেই, সার্চ ওয়ারেন্ট নেই হুট করে ঢুকে গেল আর অভিযান চালাল। কোনো কো-অপারেট নেই।

এর আগে, গুলশানের ৩৬ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাসা থেকে দীর্ঘ প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান শেষে হেলেনা জাহাঙ্গীরকে আটক করে র‍্যাব। এ সময় তার বাসা থেকে বিদেশি মদ, অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়। আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‍্যাব সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়।

এরপর, দিবাগত রাত দুইটা থেকে রাত সোয়া ৪টা পর্যন্ত হেলেনা জাহাঙ্গীরে আইপি টিভি জয়যাত্রা টেলিভিশনের অফিসে অভিযান চালান র‍্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযানে টেলিভিশন চ্যানেলটির কোনো বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। তদন্ত করে যদি বৈধ কাগজপত্র না পাওয়া যায় তাহলে চ্যানেলটি বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন র‍্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ।

নাদির শাহ বলেন, রাতে গুলশানে হেলেনা জাহাঙ্গীরের বাসায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, জয়যাত্রা নামে তার একটি আইপি টেলিভিশন রয়েছে। তার দেওয়া তথ্যমতে মিরপুর জয়যাত্রা টেলিভিশনের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু টেলিভিশন চ্যানেলটির কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। যদিও সম্প্রচার চ্যানেল হিসেবে যেসব সেটাআপ থাকা দরকার তার সবকিছুই রয়েছে।

তিনি বলেন, হেলেনা তার জয়যাত্রা টেলিভিশনের জন্য সারা দেশে প্রতিনিধি নিয়োগ করেছিলেন। এমনকি দেশের বাইরেও প্রতিনিধি নিয়োগের নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বৈধ কাগজপত্র না পাওয়ার কারণে পরবর্তীতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এখানে জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের অফিস পেয়েছি। এ বিষয়েও তদন্ত করা হবে।

চ্যানেলটি বন্ধ করে দেওয়া হবে কি-না জানতে চাইলে র‍্যাবের এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, অধিকতর তদন্ত করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তদন্ত করে যদি বৈধ কাগজপত্র না পাওয়া যায় তাহলে চ্যানেলটি বন্ধ করে দেয়া হবে।

হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড সংগঠনের নীতিবহির্ভূত হওয়ায় কদিন আগে আতাকে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

নামের সঙ্গে লীগ যুক্ত করে গড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের অনুমোদনহীন একটি সংগঠনের সভাপতি পদে নাম আসার পর তার বিরুদ্ধে এ পদক্ষেপ নিয়েছে দলটির মহিলাবিষয়ক উপ-কমিটি।

জয়যাত্রা গ্রুপের কর্ণধার হেলেনা জাহাঙ্গীর নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন।

সম্প্রতি ফেসবুকে বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামের একটি সংগঠনের সভাপতি হিসেবে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নাম আসে। সব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা তিনি অস্বীকার করেছেন।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।