অভয়নগরে হত্যার বিচার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

সব্যসাচী বিশ্বাস (অভয়নগর) যশোর :

যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার সোমাইয়া আক্তার তমা হত্যার সুষ্ঠবিচার দাবী করেছে তার পিতা-মাতাসহ বাড়ির লোকজন। তাদের দাবী, মেয়েকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করেছে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তমার পিতা আব্দুল জলিল শেখ ও মাতা নাসিমা বেগম আজ ৩১/০৭/২০২১ শনিবার দুপুর ১২টায় অভয়নগর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী জানান।

জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই রাত ১২টার দিকে উপজেলার হাসপাতাল রোডের বাসাবাড়িতে সিলিংফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় তমাকে ঝুলতে দেখে তার স্বামী রিয়াজুল ইসলাম সুজন প্রতিবেশিদের ডেকে মরদেহটি নামিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে মরদেহ রাখার পরপরই সেখান থেকে সুজন পালিয়ে যান।
লিখিত অভিযোগে জলিল শেখ বলেন, উপজেলার কাদিরপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমান শেখের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম শেখ সুজনের সাথে ২০২০ সালের ৩০ জুন তারিখে বিবাহ হয়। বিবাহের মাত্র ছয়দিন পর সুজন তালাকের নোটিশ পাঠায়। ওই মাসের ১০ তারিখ প্রশাসনের সহযোগিতায় পুনরায় তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। এরপর থেকে সুজন, সুজনের মা কুমকুম বেগম, ও তমার ননদ রুনা খাতুন যৌতুকের দাবিতে তমার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাত।

এরপর প্রায় ছয়মাস উপজেলার হাসপাতাল রোডের ওয়াপদামোড়ে তারা বাসাভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। তমা ইতিমধ্যে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। কিন্তু সেখানেও চাচাত ভাই রুবেল শেখ ও মায়ের মদদে সুজন তমার উপর নির্যাতন শুরু করে। গত ঈদের আগে কুমকুম বেগম ও রুনা খাতুন ভাড়াবাড়িতে গিয়ে তমার কাছে ঈদ খরচ বাবদ বাপের বাড়ি থেকে দশ হাজার টাকা আনতে বলে। টাকা না দেওয়ায় গত ১৮ জুলাই রাত বারটার দিকে তমাকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়ে উপজেলা স্বাস্থকমপ্লেক্সে নিয়ে ফেলে রেখে সুজন সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ওই দিন রাত দেড়টার দিকে আব্দুল জলিল শেখ অভয়নগর থানায় গিয়ে মামলা করতে গেলে থানার এস আই উত্তম কুমার সুষ্ঠবিচারের আশা দিয়ে তার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। পরের দিন তিনি থানায় গিয়ে সুজনসহ তার মাতা কুমকুম বেগম, চাচাত ভাই রুবেল শেখ ও বোন রুনা খাতুনকে আসামি করে ‘হত্যা মামলা’ করার দাবী জানান। কিন্তু ওই এসআই তার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র ‘আত্মহত্যা প্ররোচণায়’ সুজনকে আসামি করে মামলা রেকর্ড করে। এ পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতারের উদ্যোগ নেইনি।
তিনি বাকি তিনজনকে মামলার আসামি করে সুষ্ঠবিচারের দাবি জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, তমার মা নাসিমা বেগম, তার বড় ভাই সোহাগ হোসেন শেখ, সুজনের পিতা মিজানুর রহমান, স্থানীয় ইউপি সদস্য (সংরক্ষিত) রেনু বেগম, সংরক্ষিত সদস্য মাহফুজ বেগম, সাবেক সদস্য (সংরক্ষিত) রাফেজা বেগম, স্থানীয় ওয়ার্ড আ.লীগ নেতা মারুফ হোসেন, যুবলীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুস, ছাত্রলীগ নেতা বরুণ মোল্যা, ওয়ার্ড আ.লীগ নেতা হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
তমার শ্বশুর ও সুজনের পিতা মিজানুর রহমান বলেন,‘ আমার ছেলে সুজন ও আমার স্ত্রীর মানুষিকতা ভাল না। আমার বিশ্বাস তারা পরিকল্পিতভাবে তমাকে হত্যা করেছে।’
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও অভয়নগর থানার উপপরিদর্শক(এসআই) উত্তম কুমার জানান,‘ এ ঘটনার পর মেয়ের বাবা বাদী হয়ে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে শুধুমাত্র রিয়াজুল ইসলাম সুজনকে আসামি করে মামলাটি করেন। রিয়াজুল ইসলামকে গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চালাচ্ছি। ’
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) এ কে এম শামীম হাসান বলেন,‘ময়ণাতদন্তে হত্যা প্রমাণিত হলে আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলাটি অটোমেটিক হত্যামামলায় রুপান্তরিত হবে। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের প্রয়োজন নেই।’

Check Also

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।