আত্মহত্যা করলেন মানসিক রোগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: আব্দুস সালাম সেলিম(৫৫)। রুগির অবসাদ দূর করার দায়িত্ব যার কাধের উপর তিনিই বেছে নিলেন চরম নৈরাজ্যকর সিদ্ধান্ত। ওনার মতো এতো ধার্মিক একজন ব্যক্তির এই ঘটনায় চিকিৎসক সহকর্মীরা বিস্মিত।
ডা: আব্দুস সালামকে সম্প্রতি যশোর থেকে বদলি করে বগুড়া মেডিকেলে পদায়ন করা হয়। পরিবারের ভাষ্য মতে এই বদলি নিয়ে তিনি গত কয়েকমাস মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন এবং এটা তার আত্মহত্যার কারণ, যদিও আসল সত্য এখনো জানার আছে।
অনেকের কাছে বদলির কারনে আত্মহত্যা বিস্ময়কর হতে পারে, কিন্তু আমি নিজে চিকিৎসক হিসাবে নাতিদীর্ঘ ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটা আঁচ করতে পারি আসলে চিকিৎসকরা তাদের বদলি, পদায়ন, প্রোমোশন নিয়ে কতোটা দুশ্চিন্তা, হতাশায় থাকেন। গত বছর খুলনা মেডিকেলের আমার সহকর্মী, অত্র অঞ্চলের প্রথিতযশা একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, হতাশায় ভুগে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন এবং চাকরি ছাড়ার কয়েক দিন পর দুঃখজনক ভাবে স্ট্রোক করে বাসায় বিশ্রামে আছেন। ২০১১ সালে যখন সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল থেকে আমাকে একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হলো এবং প্রায় তিনটি বছর কোনো বিশেষায়িত সার্ভিস না দিয়েই পড়ে থাকলাম, তখন বুঝেছি, হতাশা কাকে বলে। কতোদিন ভোর রাতে ঘুম ভেঙে চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়েছি, তার ইয়ত্তা ছিলোনা। আসলে সব চিকিৎসক তাদের বদলি ঠেকানোর জন্য অন্য অনেকের মতো বিভিন্ন জায়গায় ধর্ণা দিতে পারেনা। ডা. আব্দুস সালামও হয়তো পারেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো তেত্রিশ কোটি জনসংখ্যার দেশে যেখানে প্রায় বিশ হাজারের মতো চিকিৎসক মানসিক চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত, সেখানে বাংলাদেশে আঠারো কোটি জনসংখ্যার জন্য মাত্র তিনশোর মতো চিকিৎসক, মানসিক বিশেষজ্ঞ হিসাবে কর্মরত আছেন। এটা থেকেই বোঝা যায় ডা. আব্দুস সালামের মৃত্যু দেশের জন্য কতোটা ক্ষতির কারণ।
চাকরি করলে বদলি হতে হবে ; এটা এক আপ্ত বাক্য, সবার মুখস্থ। কিন্তু ডা. আব্দুস সালাম একজন চিকিৎসক, মেডিকেল কলেজের শিক্ষক, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বিকালে চেম্বারে শতো রুগির ভরসা, এলাকার জনপ্রিয় মুখ এবং তিনি একজন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকতা। এতো গুলো পরিচয় নিয়ে দেশের অন্যান্য সেক্টরের কর্মকর্তাদের সাথে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তুলনা করাটা কতোটা সমীচীন!
সুইডেন প্রবাসী আমার লিস্টের এক চিকিৎসক বন্ধু সম্প্রতি ডার্মাটোলজিতে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তার স্ট্যাটাস থেকে জানতে পারলাম অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়ার মতো দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাকে সাথে সাথে চাকরির অফার দেওয়া হচ্ছে। আর আমাদের এখানে! আমরা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা কে কোথায় আছি, কি সার্ভিস দিতে সক্ষম হচ্ছি, কি সুযোগ সুবিধা দিলে আরো বেশি সেবা দিতে সক্ষম হবো, তার খবর কে রাখে। আমরা আছি সান্ত্বনার প্রাইভেট প্রাকটিস নিয়ে।
নতুন কোনো জনবান্ধব,
চিকিৎসক বান্ধব,
গতিশীল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
সময়ের দাবী।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …