আফগানিস্তান নিয়ে ভারত কেন চিন্তিত

আফগানিস্তানে ভারতের প্রধান আগ্রহ আঞ্চলিক যোগাযোগে দেশটির গুরুত্বের জন্য। নিউ সিল্ক রোড স্ট্র্যাটেজির পুরো ধারণা ছিল মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়াকে (বিশেষ করে ভারত) আফগানিস্তানের মাধ্যমে বাণিজ্য, ট্রানজিট ও জ্বালানি রুট দিয়ে সংযুক্ত করা। ২০১১ সালে আফগানিস্তান পুনর্গঠনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব চুক্তি করেছিল ভারত। এরপর ১০ বছর ধরে আফগানিস্তানে বিপুল অর্থ ভারত বিনিয়োগ করেছে। তালেবান নিয়ন্ত্রণের পর এ বিনিয়োগের কী হবে, এখন সেটাই প্রশ্ন।

আফগানিস্তানে ভারতের যত বিনিয়োগ

কাবুলে আফগান পার্লামেন্ট ভারত তৈরি করেছিল। এতে আনুমানিক ৯ কোটি ডলার বিনিয়োগ হয়। ২০১৫ সালে ভবনটি চালু হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভবনটি উদ্বোধন করেন। সে সময় তিনি ভবনটিকে আফগানিস্তানের গণতন্ত্রের প্রতি ভারতের শ্রদ্ধা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। বিশেষ করে ভবনটির একটি ব্লকের নাম রাখা হয়েছিল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির নামে।

আফগানিস্তানে ইরান সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় ২১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করেছে ভারতের বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন। কান্দাহার, গজনি, কাবুল, মাজহর-ই-শরিফ ও হেরাত শহরকে ছুঁয়ে গেছে এ রাস্তা। পাকিস্তানকে এড়িয়ে এ রাস্তা দিয়ে ইরানের চাবাহার বন্দর ব্যবহার করতে পারে নয়াদিল্লি। জরঞ্জ-দেলারাম নামের এই সড়ক তৈরিতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ১৫ কোটি ডলার। এটি তৈরি করেছিলেন ৩০০ ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার। কাজ চলাকালীন তাঁদের মধ্যে ১১ জনের মৃত্যুও হয়।

আফগানিস্তানে ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য সাহায্য হলো বিদ্যুৎ অবকাঠামোর সংস্কার। কাবুলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর জন্য বাঘলান প্রদেশের রাজধানী পুল-ই-খুমরি থেকে ২০০ কেভি ডিসি ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপন করা হয়। সেই সঙ্গে ভারতের প্রকৌশলীরা প্রদেশগুলোতে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার পুনরুদ্ধার করে।
শিশুদের জন্য চিকিৎসাকে নতুন করে গড়েছে নয়াদিল্লি। ইন্ডিয়ান মেডিকেল মিশনের আওতায় আফগানিস্তানে জায়গায় জায়গায় বিনা মূল্যের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। এ ছাড়া বহু ক্লিনিক তৈরি করেছে নয়াদিল্লি।

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৬ সালে কাবুলে স্টোর প্যালেসের উদ্বোধন করেছিলেন। এটি মূলত ১৯ শতকের শেষের দিকে নির্মিত হয়েছিল। ভবনটি আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাপ্তরিক কাজে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। ২০০৯ সালে ভারত, আফগানিস্তান ও আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের পুনঃস্থাপনের জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার প্রকল্পটি ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন করে।

আফগানিস্তানে ভারতের তৈরি করা এই সালমা বাঁধ উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০১৬ সালে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গেই এই বাঁধ উদ্বোধনে অংশ নিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভারত-আফগানিস্তানের বন্ধুত্বের নিশানস্বরূপ আফগানিস্তানের হেরাত প্রদেশে এই সালমা বাঁধ তৈরি করা হয়।

শুধু তা–ই নয়, ভারত সরকার আফগানিস্তানকে ২০০ মিনিবাস, ৪০০ বাস, ১০৫ সরকারি গাড়ি, ২৮৫টি সেনার গাড়ি, ৫টি শহরে ১০টি অ্যাম্বুলেন্স, ৩টি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান উপহার হিসেবে দিয়েছিল। বিশ্লেষকেরা বলছেন, তালেবান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ায় এখন যদি ভারতের সঙ্গে সে দেশের সব বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে এত দিনের সুসম্পর্কের কোনো পরিণতি হচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকারকে অবশ্যই তালেবান নীতি নিতে হবে।

সূত্র: আনন্দবাজার, রিপাবলিক ওয়ার্ল্ড ডটকম

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।