ইউনিয়ন প্রতিনিধি (অভয়নগর) যশোর :
যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের মেয়ে সাবিনা বেগম ১৮ আগষ্ট ২০২১ বুধবার অভয়নগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
প্রেম করেই বিয়ে করেছিলো সাবিনা বেগম এক হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে । প্রেমের টানে ধর্মান্তরিত হলেও প্রকৃত পক্ষে গোপনে হিন্দু ধর্মের আচার অনুষ্ঠান পালন করতে থাকেন ওই স্বামী। একাধিক নারীর প্রতি ছিলো তার আসক্তি। স্বামীর এহেন আচরণে স্ত্রী বাঁধা দেওয়ায় তার(স্ত্রী) উপর নেমে আসে অমানবিক অত্যাচারের খড়গ। যে কারণে বিয়ের ১৫ বছর পর স্ত্রী আদালতের মাধ্যমে ওই স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য হন।
সাবিনা বেগম(৩০) তিনি যশোরের অভয়নগর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের সাহেব আলীর মেয়ে। সাবিনা বেগমের অভিযোগ স্বামী কে তালাক দেওয়ার কারণে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তার মা-বাবা ও আত্মীয়দের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। নিরুপায় হয়ে হুমকি ও নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য সাবিনা বেগম তালাক দেওয়া ওই স্বামীর বিরুদ্ধে ১৮ আগষ্ট ২০২১ বুধবার অভয়নগর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এর আগে তিনি একই অভিযোগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাবিনা বেগম বলেন, ২০০৬ সালে বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের সুনিল সাহার ছেলে মধু সাহা বর্তমানে গোলাম রসুলের সাথে প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে বিয়ে হয়। বিয়ের আগে মধু সাহা এফিডেভিট করে ইসলাম ধর্মগ্রহণ করে গোলাম রসুল নাম প্রাপ্ত হন। বর্তমানে তাদের তাসমিয়া(১২) নামে একটি মেয়ে ও মুছা(৩) নামের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
সাবিনা বেগম বলেন, বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন গোলাম রসুলের একাধিকবার বিয়ে করে তাদের কাছ থেকে সর্বস্ব লুট করে ছেড়ে দেয়। ২০১২ সালে তিনি অতিষ্ট হয়ে স্বামীকে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে দুইজনে চাকরি করতে থাকেন। চার বছর পর বাড়ি ফিরে চাকরিকালীন তাদের জমানো অর্থ ও মা-বাবার কাছ থেকে অর্থ সহায়তা নিয়ে উপজেলার নওয়াপাড়া এলাকায় জমি কিনে বাড়ি করেন কিন্তু ঝামেলা থাকায় ওই বাড়ি চার লক্ষ টাকা বিক্রি করেন যার অর্ধেক গোলাম রসুল ব্যাংকে রাখার নামে হাতিয়ে নিয়ে খরচ করে নয়-ছয় করে ফেলে। এরপর সাবিনা বেগমের কাছে থাকা দুই লক্ষ টাকা নেওয়ার জন্য নানাভাবে হয়রানি ও তার উপর শারীরিক নির্যাতন চালায়। তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পিতা-মাতার পরামর্শে তিনি গত ১২ আগস্ট ২০২১ স্বামী গোলাম রসুলকে তালাক দেন। এতে সে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। গত ১৭ আগষ্ট ২০২১ মঙ্গলবার সন্ধায় পিতামাতার সাথে নওয়াপাড়া হতে বাড়ি ফেরারপথে মোটর সাইকেল স্ট্যান্ডে তাদের দেখে গোলাম রসুল গালিগালাজ করে ও পিতামাতাসহ দুই ভগ্নিপতিকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তার আশংকা ভবিষ্যতে গোলাম রসুল তার সন্তানসহ আত্মীয়-স্বজনদের ক্ষতি করতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে সাবিনা বেগম আরো জানান, তার বড় ভগ্নিপতি বিজিবি তে কর্মরত মাহবুব আলম কে বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবিনা বেগম জানান,কাপড়ের দোকানের কর্মচারি মধুসাহার সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে জানা জানি হয় মধুসাহা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এতে বিয়েতে বাধসাধে সাবিনা বেগমের আত্মীয় স্বজন । মধুসাহা তখন ইসলাম ধর্মগ্রহন করে সাবিনাকে বিয়ে করে। সাবিনার অভিযোগ মধুসাহা লোক দেখানো ধর্মান্তরিত হলেও গোপনে সে হিন্দু ধর্মের আচার অনুষ্ঠান পালন করতে থাকেন। এছাড়া একাধিক নারীর সাথে সে পরকিয়ায় আসক্ত হয়। এনিয়ে পরিবারে মাঝে ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। সাবিনা তার দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সব কিছু নিরবে সহ্য করতে থাকে। এক পর্যায়ে সাবিনা ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টেসে চাকরি শুরু করেন। সেখানে কয়েক বছর চাকরি করে জমানো টাকা দিয়ে নওয়াপাড়া শংকরপাশা গ্রামে কয়েক শতক জমি ক্রয় করেন পরে ওই জমিতে বসত বাড়ি নির্মাণ করে তরা একত্রে বসবাস করতে থাকেন। কিন্তু আশপাশের পরিবেশ ভালো না হওয়ায় সাবিনা ওই জমি ৪ লাখ টাকায় বিক্রয় করেন। ওই ৪ লাখ টাকা থেকে গোলাম রসুল ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এই ঘটনায় সংসারে আরো অশান্তি বিরাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে সাবিনা আদালতের মাধ্যেমে স্বামীকে তালাক দিতে বাধ্য হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী সাবিনার আত্মীয় স্বজনের উপর আক্রমন করতে শুরু করেন। সাবিনা উপায় না পেয়ে থানায় হাজির হয়ে অভিযোগ করেন এবং একই দিন ১৮ আগষ্ট২০২১ বুধবার অভয়নগর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চইলে স্বামী গোলাম রসুল বলেন, আমার স্ত্রীর সংঙ্গে ভালো সম্পর্ক আছে এবং তার সাথে আমার মোবাইলে সব সময় কথা হচ্ছে। আমি কাউকে আক্রমণ করিনি। আমি আমার স্ত্রী কে ফিরিয়ে আনার চেষ্ঠা চালাচ্ছি।
অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্য কে এম শামীম হাসান বলেন, আমি সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকায় সাবিনা বেগমের দাখিল করা লিখিত অভিযোগ আমার হাতে এসে পৌছায়নি। বিষয়টি সঠিক তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন তার পিতা সাহেব আলী, মা সবুরোননেছা, ভগ্নিপতি মাহাবুর মোল্যা ও ভাগ্নে লুৎফর রহমান।