মার্কিন এলিট ফোর্সের মতো ভয়ংকর বেশভূষা বদর-৩১৩ ব্যাটালিয়ন এখন আফগানিস্থানে

চিরচেনা সেই ঢিলেঢালা পাঠান স্যুট আর পাগড়ি নয়। পরনে তাদের ‘ক্যামোফ্লেজ ব্যাটল ফেটিগ’ আর ‘বুলেটপ্রুফ ভেস্ট’। চোখে সানগ্লাস, মাথায় ‘ব্যালাস্টিক হেলমেট’। হাতে অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল। তালেবানের নয়া কমান্ডো বাহিনীর সদস্য তারা। মার্কিন এলিট ফোর্সের মতোই ভয়ংকর বেশভূষা নিয়ে সারাক্ষণ টহল দিচ্ছে কাবুলের রাস্তায়। পোশাকি নাম ‘বদর ৩১৩ ব্যাটালিয়ন’। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের চেতনায় বাহিনীর নামকরণ করেছে তালেবান। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ৩১৩ জন যোদ্ধাকে নিয়ে মদিনার অদূরে বদর উপত্যকার যুদ্ধে বিশাল কুরাইশ বাহিনীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন ইসলামের নবী হজরত মোহাম্মদ (স.)। সেই যুদ্ধের স্মরণেই গড়া হয়েছে বাদরি বাহিনী। এএফপি।

গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলে নেয় তালেবান। তবে শুধু রাজধানীই নয়, মার্কিন সেনাবাহিনীর পাশাপাশি আফগান সেনাবাহিনীর অস্ত্র ভাণ্ডারেও তদের হাত পড়েছে। মার্কিন সেনা আফগানিস্তানের কয়েক বিলিয়ন ডলার অস্ত্র ফেলে চলে গেছে। সেগুলো বর্তমানে তালেবানদের দখলে। ২০০২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত আমেরিকার আর ব্রিটেন আফগান সেনাকে প্রায় ২৮ বিলিয়ন মূল্যের সমরাস্ত্র দিয়েছে। এক মার্কিন সেনা জানিয়েছেন, কিছু অস্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ অক্ষত রয়েছে। যেগুলো অক্ষত সেগুলো তালেবানরা দখল করে নিয়েছে।

চলতি সপ্তাহে রাজধানী কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব দুর্ধর্ষ হাক্কানি নেটওয়ার্কের হাতে ন্যস্ত করেছে তালেবান। সংগঠনটির প্রায় ছয় হাজার সশস্ত্র যোদ্ধা রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায় টহল দিচ্ছে। তবে কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ আরও বেশ কিছু জায়গায় একেবারের ভিন্ন এক বাহিনী নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। যাদেরকে দেখতে অনেকটাই মার্কিন এলিট ফোর্সের মতোই। বিশেষ ধরনের অভিযানেই তাদের ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া আত্মঘাতী হামলার মতো জটিল অপারেশনও করে এরা। এই মুহূর্তে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কাবুলের যেসব স্থানে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার সেসব জায়গাতেই দেখা মিলছে তাদের। বিশেষ এই বাহিনীর পোশাকি নাম, ‘বদর-৩১৩ ব্যাটালিয়ন’। ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধের চেতনায় নামকরণ করা হয়েছে এই বাহিনীর। ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ৩১৩ জন যোদ্ধাকে নিয়ে মদিনার অদূরে বদর উপত্যকায় বিশাল কুরাইশ বাহিনীকে হারিয়ে দিয়েছিলেন ইসলামের নবী হজরত মোহাম্মদ (স.)। সেই যুদ্ধের স্মরণেই গড়া হয়েছে ‘বদরি ৩১৩’। তবে এদের ৩১৩ নয়, এই সংখ্যা কয়েক হাজার বলে মনে করা হচ্ছে। এরা মূলত তালেবানের বিশেষ কমান্ডো ইউনিটের সদস্য। মাত্র ১০ দিনের অভিযানে এত সহজে কাবুল পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়ার পেছনে এ কমান্ডো দলের বড় ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে তালেবানের পক্ষ থেকে এই ‘স্পেশাল কমান্ডো ফোর্স’র বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে তাদের শারীরিক কসরত এবং অস্ত্র প্রশিক্ষণপর্ব দেখানো হয়েছে। আধুনিক অস্ত্রের পাশাপাশি, হাল আমলের ‘ম্যানপ্যাক’, ‘নাইট ভিশন’ এমনকি, গ্যাস মুখোশও রয়েছে তাদের। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে এসব ছবি। তালেবানের দাবি, আফগানিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চল এবং মরুভূমিতে যুদ্ধের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত এই বাহিনী। ‘বদর-৩১৩ ব্যাটালিয়ন’কে অস্ট্রিয়ান গ্লক পিস্তল, আমেরিকান এম-৪ কার্বাইন, ব্যারেট স্নাইপার রাইফেল, কাঁধে তুলে ছোড়ার উপযুক্ত আনজা সিরিজের বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও তারাই জুগিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বদরি ৩১৩ সাধারণ তালেবান যোদ্ধাদের মতো নয়। ছদ্মবেশ, যুদ্ধের বুট এবং বডি বর্ম দিয়ে তাদের মার্কিন সৈন্যদের মতো দেখানোর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এলিট সৈন্য।

Check Also

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।