কবরস্থান, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান
এসএম শহীদুল ইসলাম: সাতক্ষীরার দিকে দিকে যখন জলাবদ্ধতা, পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে লক্ষ মানুষ তখন পানি নিষ্কাশনে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন সুখবর না দিয়ে জনবিরোধী একের পর এক অপরিকল্পিত স্লুইস নির্মাণ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপব্যয় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিবেশ ও জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে নির্মাণ করেই যাচ্ছে স্লুইস গেট।
অথচ কাজে লাগছে না নতুন নির্মিত স্লুইস গেট। অথচ সরকারের কোটি কোটি অপব্যয় করে পানি উন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিতভাবে একটি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়েছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের কোমরপুর হাজিখালি খালের মুখে। তিন বছর আগে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এই স্লুইস গেট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিগত তিন বছরে একফোটা পানিও বিল থেকে নদীতে নিষ্কাশন করতে পারেনি নতুন স্লুইস গেটটি। বরং নদীর পানি বিলে ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত করেছে।
সাতক্ষীরা একটি অবহেলিত, দুর্যোগপূর্ণ, বন্যা কবলিত লবণাক্ত উপকূলীয় এলাকা। এ উপকূলীয় এলাকাকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন, কৃষি জমি সম্প্রসারণ ও লবণাক্ততার হাত থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা বিভাগ-২ এর আওতায় পোল্ডার রয়েছে ৭টি। এর মধ্যে পোল্ডার নং ২ ও ২ (সম্প্রসারণ) এর অধীনে রয়েছে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও আশাশুনি উপজেলা। পোল্ডার নং ২ ও ২ (সম্প্রসারণ) এর পূর্বে বেতনা নদী এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে মরিচ্চাপ নদী দ্বারা বেষ্টিত। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন, লবণাক্ততা রোধ। পাওবো সূত্রে জানা যায় এ প্রকল্পের আওতায় উপকৃত এলাকার জমির পরিমাণ ১১ হাজার ২৯৬ হেক্টর।
এখানে বাঁধ রয়েছে ৬২ দশমিক ৯৫০ কিলোমিটার এবং স্লুইস গেট রয়েছে ২১টি। খাল রয়েছে ৬৫ দশমিক ২২০ কিলোমিটার। স্থানীয়রা জানান, এসব স্লুইস গেটের দুই একটি ছাড়া প্রায় সব ক’টি অকেজো।
সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহে গেলে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, কলারোয়া থেকে সাতক্ষীরা সদর হয়ে আশাশুনি পর্যন্ত বেতনা নদীর দুই তীরের গ্রামগুলো পানিতে ডুবে আছে। গত জুলাই মাসের তিনদিনের বৃষ্টিতে গ্রামের পর গ্রাম পানিতে ডুবে গেলেও পানি নিষ্কাশনের কোন উপায় হয়নি। তিন উপজেলার শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, কবরস্থান, রাস্তাঘাট ডুবে রয়েছে প্রায় একমাস। রান্না ঘরের চুলা ডুবে থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন হাজারো পরিবার। বাড়িতে যাতায়াত করতে রাস্তার উপর সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। কলারোয়া থেকে আশাশুনি পর্যন্ত বেতনার তীরে তীরে জলাবদ্ধতা। চলছে বোবা কান্না। ফসল ও ঘর হারা মানুষের দুর্দশার অন্ত নেই। পানিতে ভাসছে বাড়িঘর, পুকুর, মাছের ঘের, কবরস্থান, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
একই গ্রামের নূর ইসলাম সরদার বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় আমাদের আয়ের উৎস মৎস্য ঘের। আমরা নি:স্ব হয়ে গিয়েছি। এবছর সামান্য বৃষ্টিতে সব তলিয়ে যায়। এখনো গ্রামের পর গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে হাজিখালি বিলের স্লুইস গেট পানি নিষ্কাশনে কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। তিন বছর আগে গেটটি নির্মিত হয়। স্থানীয়রা বলেন, কোন আক্কেল জ্ঞানে এখানে স্লুইস গেট নির্মাণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড তা আমাদের জানা নেই। গ্রামবাসি বলেন, যেখানে বিল ছাড়া নদী উঁচু সেখানে স্লুইস গেট নির্মাণের মানে সরকারি টাকা লুটপাট করা ছাড়া আর কিছুই নয়। অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে চলছে সীমাহীন দুর্নীতি। কী দরকার ছিল দুই টাকা পুতে রাখার? যে স্লুইস গেট একফোটা পানি নিষ্কাশনের ক্ষমতা রাখে সেই স্লুইস গেট নির্মাণের কোন প্রয়োজন নেই। এলাকাবাসি মনে করেন, নদী খনন করতে হবে।
বেতনা নদীর আদি ম্যাপ অনুযায়ি সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে। দখলকারীদের হাত থেকে বেতনা নদীকে রক্ষা করতে না পারলে ডুবে মরতে হবে।
স্থানীয় জাপা নেতা জাহাঙ্গীর কবির বলেন, বেতনা নদীর হাজিখালি বিলের খালের মুখে এককোটি সাতাশি লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে যে স্লুইস গেটটি নির্মাণ করা হয়ে তা জনগণের জন্য কোন সুফল বয়ে আনতে পারছে না। আর কোনদিন পারবেও না, যদি নদীর আদি প্রবাহ ফিরিয়ে আনা না যায়।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেন, আমি নতুন এসেছি। নতুন স্লুইস কোথায়, কয়টি, কত টাকায় নির্মিত হয়েছে তা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানাবো।