ইব্রাহিম খলিল: সাতক্ষীরা জেলা সদরের বুক চিরে প্রবহমান বেতনা নদী। একসময় এ নদীতে চলতো লঞ্চ, স্টিমারসহ বড় বড় গয়নার নৌকা। গ্রামগঞ্জের অধিকাংশ মানুষ নৌকায় চড়ে জেলা সদরে আসতো নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে। ব্যবসা-বাণিজ্য আর যোগাযোগের ক্ষেত্রে নদীটি জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত থাকায় বেতনার তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
এখান থেকে মাত্র ১৫-২০ বছর আগেও নদীর হিং¯্র থাবায় বর্ষা মৌসুমে দুই কূল ভাসিয়ে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হতো। নদীতে মাছ ধরে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতো। আর শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি সেচকাজে ব্যবহার করে কৃষক জমিতে ফলাতো সোনার ফসল।
কালের আবর্তনে দখল আর দূষণের কবলে পড়ে আশীর্বাদের সেই বেতনা নদী এখন মৃত। ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরের ভৈরব নদ থেকে বেতনার উৎপত্তি। নদীটি সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলা থেকে শুরু করে আশাশুনি উপজেলার চাপড়া এলাকার মরিচচাপ নদীতে গিয়ে মিশেছে। জেলার ৪৬ কিলোমিটার নদীর বুকে ইটভাটা, অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় জোয়ার-ভাটা বছর দশেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর বুকে চর ভরাট করে অসংখ্য ইটভাটা, বসতবাড়ি, মৎস্য ঘের তৈরি করায় নদীটি এখন অস্তিত্ব সংকটে। সরেজমিন দেখা গেছে, কলারোয়া উপজেলা থেকে সাতক্ষীরার সদর উপজেলার বিনেরপোতা হয়ে মাছখোলা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট বাঁধ দিয়ে দখল করে ইটভাটার কাজ করায় পলি পড়ে হুমকির মুখে এখন নদীটি। দখলদার আর ইটভাটা মালিকরা নদীকে এমনভাবে গ্রাস করেছে যে, বেতনা নদীর অস্তিত্বই এখন বোঝা মুশকিল।
তবে এসব ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোনো সময় ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের। মাঝেমধ্যে পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট হলে কর্মকর্তারা ভাটা মালিকসহ দখলদারদের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করলেও পরবর্তী সময়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায় না বলে অভিযোগ হাজারো মানুষের। ফলে বিশেষ করে ইটভাটা মালিকরা নদী দখলে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। কলারোয়া উপজেলা থেকে সাতক্ষীরার সদর উপজেলার মাছখোলা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে নদীর তীর ও নদীর বুক দখল করে প্রায় ৩৫ টির মতো ইটভাটা গড়ে উঠেছে। ইটেরভাটায় গিলে খাচ্ছে বেতনা নদী।
এসব ইটভাটা মালিকের কারণে বেতনা নদী মরণদশায় পরিণত হয়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনের অভাবে বিপাকে পড়তে হয় কৃষক ও এলাকাবাসীকে। বেতনা ও এর সংযুক্ত খাল দখলের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হয় তাদের। সরেজমিন দেখা গেছে, বিনেরপোতা থেকে মাছখোলা পর্যন্ত নদীর তীরে ও বুকে চর দখল করে অসংখ্য ইটভাটা গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালী কিছু ভাটা মালিক। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নীরব থাকায় তাদের বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন তুলছেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে ধুলিহর ইউপি সদস্য মো. মিজানুর রহমান বাবু সানা বলেন, আমার ধুলিহর ইউনিয়নের উপর দিয়ে বেতনা নদী প্রবাহিত হয়েছে। ফলে আমার এলাকার মানুষ বেতনা ও এর সংযুক্ত খাল দখলের কারণে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হয়েছে। ধুলিহর ইউনিয়নে ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছেন। এব্যাপারে আমরাও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি তারা বলেন-‘বাজেট নাই’।
খাল দখলের কারণে পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে ব্রহ্মরাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান স ম শহিদুল ইসলাম বলেন, আমার এলাকায়ও ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছেন এবং ইউএনও আমাদের এখানে এসে দেখে গেছেন। এব্যাপারে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি তারা বলেন-‘বাজেট নাই’।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।