সীমান্তের বেঁড়িবাধ নির্মাণে বিএসএফ’র বাধা

এম জিললুর রহমান: সাতক্ষীরা জেলার অধিকাংশ বিল ও গ্রাম জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে কয়েক লক্ষ মানুষ। জলাবদ্ধতায় বাড়িঘর, মাছের ঘের, ফসলের ক্ষেত, কবরস্থান, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে রয়েছে প্রায় এক মাস। সাতক্ষীরা পৌরসভার তিন ভাগের দুই ভাগ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে দিশেহারা মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ড পানি নিষ্কাশনে কোন ভূমিকা রাখতে না পারলেও সীমান্তে বেড়িবাঁধ নির্মাণে বেশ আগ্রহী। কিন্তু সীমান্তে বেড়িবাঁধ নির্মাণে বাঁধা দিয়েছে বিএসএফ।

সীমান্ত সূত্রমতে, সাতক্ষীরা সদরের পশ্চিমে বৈকারি ও কুশখালি ইউনিয়ন সীমান্ত ঘেষা ৮ কি:মি: বেঁড়িবাধ নির্মাণ কাজের আংশিক বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। সীমান্তের ১৫০ গজ অভ্যন্তরে হওয়ায় আন্তজার্তিক সীমানা চুক্তির লংঘন বলে দাবী তাদের। এনিয়ে দফায় দফায় বিজিবি ও বিএসএফ’র পতাকা বৈঠকে সমাধান না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১২টি স্কেভেটরসহ সকল জনবল ইতোমধ্যে সরিয়ে নিয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ সীমান্তের এই বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় এলাকার কয়েক হাজার মানুষ যেমন হতাশ, তেমনি কয়েকটি বিলের জমির ফসলও অনিশ্চিত। ফলে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে হস্তক্ষেপে দ্রুত এই বাঁধ নির্মাণের দাবী ভুক্তভোগিদের।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিগত অর্থ বছরে সাতক্ষীরা সদরের বিভিন্ন নদী ও খাল খনন এবং বাঁধ নির্মাণের জন্য ৪৭৫ কোটি ২৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। এরই অংশ হিসেবে গেল বছর ৩ কোটি এবং এবছর ৪০ কোটি টাকার প্যাকেজ হিসেবে অর্থ ছাড় হয়েছে। বরাদ্দকৃত এই অর্থে বিপরিতে বৈকারি সীমান্তের বাগধাড়ানি থেকে খইতলা হয়ে কুশখালি ছয়ঘরিয়া তলুইগাছা সীমান্তের ৮কি: ৩০০ মিটার বেঁড়িবাধ পূর্ণ নির্মাণের জন্য পাউবো-১, ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার টেন্ডার আহবান করে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোড-১ এর ইজিপি টেন্ডারে অংশ নেওয়া নেত্রকোনার মেসার্স অসিম সিং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশটি পেয়ে মে মাসেই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ৮কি:মি: ৩০০ মিটার বাঁধের ১৪ ফুট উচ্চতা ও ১৪ ফুট বেড নির্মাণ ব্যায় বরাদ্দের ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকার মধ্যে ১কোটি ২৯ লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।

কিন্ত ৪ কি:মি: বাঁধ নির্মাণের পর বিএসএফ’র বাঁধার মুখে পড়লে দু’দেশীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ একাধিকবার পতাকা বৈঠকে মিলিত হয় কিন্তু কোন সুরাহা হয়নি। এরফলে সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি’র কমান্ডিং অফিসার লে: কর্নেল আল মাহমুদ ১মাস আগেই বিজিবি’র উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করেন। এখনও পর্যন্ত উচ্চ পর্যায় থেকে কোন নির্দেশনা না আসায় জনবল ও যন্ত্রাংশ সরিয়ে নিয়েছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। কাজ শেষ না হওয়ায়, যা হয়েছে তাতে মানুষের চলাচলে বাঁধটি অনুপযোগি হওয়াসহ নানান কারণে হতাশ এলাকাবাসী।

সদরের ছয়ঘরিয়া গ্রামের আনারুল ইসলাম জানান, স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশের পুরাতন একটি মাটির বাঁধের সংস্কার কাজ করা সম্ভব হচ্ছেনা। বিএসএফ’র বাঁধায় বন্ধ থাকায় কয়েকটি বিলের ফসল অনিশ্চিত। একমাত্র সীমান্তের পথও বন্ধ। তিনি দ্রুত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে এই বাঁধ সংস্কারের দাবী জানান।
কুশখালি ইউনিয়নের শিকড়ী গ্রামের ডা: শফিকুল ইসলাম বলেন, ৪কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দের এই কাজের প্রায় আংশিক ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি অর্ধেক বিএসএফর বাধায় নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তিনি বলেন এই বাঁধ নির্মাণ না হলে এলাকার কয়েকটি বিলের কয়েক হাজার মানুষ ও কৃষক মারাত্তকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে। তিনি দ্রুত এই বাঁধ সংস্কারের জোর দাবী জানান।

নেত্রকোনার মেসার্স অসিম সিং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারি বাবু অসীম কুমার সিং বলেন, ভারত বাংলাদেশের সীমানা জটিলতায় অর্ধেক কাজ বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়ে ২মাস পর যন্ত্রাংশ ও জনবল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এরআগে খইতলা বাঁধ ভেঙে পুরো সাতক্ষীরা জুড়ে ভারতীয় পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এলাকার মানুষের জন্য বাঁধটি অত্যন্ত প্রয়োজন। তারপরও নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তিনি বলেন ভারতীয় পার্শে বিএসএফর কৈজুড়ি ক্যাম্প ১৫০ গজের মধ্যে পাকা ও স্থায়ী নির্মাণ করলেও আমাদের দেশীয় অভ্যন্তরে অস্থায়ী মাটির পুরাতন বাঁধ সংস্কারে বাঁধা এটি অত্যন্ত দু:খজনক। তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, শুরুতেই দ্রুত কাজ শেষ করার চিন্তাভাবনা নিয়েই এগিয়ে ছিলাম। কিন্তু বাঁধের দুই ধারে সরকারি গাছ রয়েছে। বন বিভাগকে উক্ত গাছ দ্রুত কাটার জন্য বলা হলে গাছ কাটায় গাফিলতি দেখা যায়। যেখানে বিএসএফ কাজ বন্ধ করেনি সেই জায়গায় বনবিভাগ বাংলাদেশ পার্শের গাছ কাটলেও ভারতীয় অংশের গাছ রেখে দিয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বনবিভাগকে দ্রুত গাছ কাটার জন্য অনুরোধ করলে বনবিভাগের কর্মকর্তা মারুফ হোসেন আমাকে তিনি দেখা করতে বলেন। এখনও যেখানে বিএসএফর বাঁধা নেই সেখানের ভারতীয় অংশের গাছ রয়েছে। এসমস্ত নানান কারণে কাজটি জটিল হয়ে পড়েছে। চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিএসএফর বাধা এবং বনবিভাগের গাফিলতি ও অনৈতিক লক্ষ থাকায় যথা সময়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেখ না হওয়ার আশংকা করলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সাতক্ষীরা ৩৩ বিজিবি’র অধিনায়ক লে: কর্নেল আল মাহমুদ জানান, বৈকারি এলাকায় বেঁড়িবাধ নির্মাণে দেড়শ’ গজের বাইরের অংশ শেষ হলেও ভিতরের অংশ নিয়ে বিএসএফ কর্তৃক বাঁধার পর একাধিক পতাকা বৈঠকে সমাধান হয়নি। ফলে অমিমাংশিত বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করেছি। নির্দেশনা পেলেই কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা পনি উন্নয়ন বোর্ড-১এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের বলেন, বিএসএফ’র বাঁধাসহ গুলির মুখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্রমিকরা যে পরিমাণ কাজ করেছে তা সন্তোষজনক। বিষয়টি বিজিবি’র মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা পেলেই সীমান্তের বাঁধ নির্মাণ কাজ আবারো শুরু হবে।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।