ন্যাশনাল ডেস্ক: বিভিন্ন সাময়িকী, ম্যাগাজিনসহ ৮৫ হাজার বইয়ের পাঠক মাত্র ১২ জন এমপি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১১ই আগস্ট পর্যন্ত এ চিত্র দেশের অন্যতম বড় লাইব্রেরি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ লাইব্রেরির। এই ৮ মাসের মধ্যে করোনার কারণে লাইব্রেরি সেবা বন্ধ ছিল এপ্রিল ও জুলাই ২ মাস।
সম্প্রতি এমপিদের জন্য অনলাইন সেবা চালু করা হয়েছে। তবে এই সেবা গ্রহণকারী এমপির সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। মাত্র কয়েক এমপি এ সেবা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে আবার রয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। বিভিন্ন বিষয়ের রেফারেন্স ও প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য তারা এই সেবা নিয়েছেন।
সংসদ সচিবালয়ের লাইব্রেরি সংশ্লিষ্টরা জানান, শেষ ৮ মাসে কোনো মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী লাইব্রেরিমুখী হননি। এমনকি অনলাইন সেবাও গ্রহণ করেননি। তাদের দাবি করোনার কারণে মন্ত্রী ও এমপিরা হয়তো লাইব্রেরিতে আসেননি। করোনার এই দুই বছর বাদ দিয়ে সংসদ লাইব্রেরির অতীতের তথ্য ঘেটে দেখা যায় প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ জন এমপি নিয়মিত সংসদ লাইব্রেরি ব্যবহার করতেন। ওই সময় ঘুরেফিরে একই এমপিদের দেখা যেতো লাইব্রেরি কক্ষে।
শেষ ৮ মাসের চিত্রও একই। যে ১২ জন এমপি জাতীয় সংসদ লাইব্রেরি ব্যবহার করেছেন তারা হলেন- জাতীয় পার্টির গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারী,
সুনামগঞ্জ-৪ আসনের পীর ফজলুর রহমান,
আওয়ামী লীগ দলীয় জামালপুর-১ আসনের আবুল কালাম আজাদ,
টাঙ্গাইল-৬ আসনের আহসানুল ইসলাম (টিটু),
লক্ষীপুর-৩ আসনের এ কে এম শাহজাহান কামাল,
যশোর-৪ আসনের রনজিত কুমার রায়,
ব্রাক্ষণবাড়িয়া-১ আসনের বদরুদ্দোজা মো. ফরহাদ হোসেন,
গণফোরাম দলীয় সিলেট-২ আসনের মোকাব্বির খান।
বাকিরা সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য। এ তালিকায় রয়েছেন- আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন (৩৪০),
ফেরদৌসী ইসলাম (৩৩৮),
আরমা দত্ত (৩১১),
বিএনপি দলীয় এমপি রুমিন ফারহানা (৩৫০)।
জাতীয় সংসদ লাইব্রেরির তথ্য অনুযায়ী, ১২ জন এমপির মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারিতে লাইব্রেরি ব্যবহার করেছেন ২ জন এমপি। সবচেয়ে বেশি ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যবহার করেছেন ৭ জন এমপি। এছাড়া মার্চে ব্যবহার করেছেন ৪ জন এমপি, মে মাসে ২ জন এমপি, জুন মাসে ৪ জন এমপি ও চলতি মাসে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত একজন এমপি। করোনার কারণে এপ্রিল ও জুলাই মাসে জাতীয় সংসদ লাইব্রেরি সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল।
এদিকে, জুন মাসে বাজেট অধিবেশনের সময় সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে এমপিদের জন্য বাজেট হেল্পডেস্ক স্থাপন করা হয়। ওই সময় ৯ জন এমপি ওই সেবা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ ছিলেন চলতি সংসদে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত।
এদিকে, করোনার কারণে শীতকালীন ও বাজেট অধিবেশনসহ সংসদের প্রতিটি অধিবেশন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বসে। গত ৮ মাসে সংসদের কয়েকটি অধিবেশন হয় মাত্র ২৭ কার্যদিবস। আর প্রতিটি কার্যদিবসে প্রায় ১০০ জন এমপি উপস্থিত ছিলেন। সাধারণত সংসদ অধিবেশন চলাকালে এমপিরা লাইব্রেরিতে যান। কিন্তু এই ২৩ কার্যদিবসে লাইব্রেরি কক্ষে এমপিদের তেমন যেতে দেখা যায়নি।
সংসদ সচিবালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, অতীতে বেশ কয়েক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে জাতীয় সংসদ লাইব্রেরিতে নিয়মিত দেখা যেতো। অনেক সময় তারা সশরীরে না আসতে পারলে পিএস বা এপিএস পাঠিয়ে নানা ধরনের বই ও ম্যাগাজিন সংগ্রহ করতেন। এখন সেই চর্চা নেই বললেই চলে। তারা জানান, চলতি বছরে এ পর্যন্ত কোনো মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীকে জাতীয় সংসদ লাইব্রেরি কক্ষে দেখা যায়নি।
এজন্য দুটি কারণ অন্যতম বলে তারা জানান। একটি হলো করোনা পরিস্থিতি আরেকটি মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের ব্যস্ততা।
এদিকে, ৮৫ হাজার বই সমৃদ্ধ লাইব্রেরি পরিচালনা করতে কাজ করছেন ২৯ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী। লাইব্রেরি কম ব্যবহার হওয়ায় এদের বেশিরভাগকে অলস সময় কাটাতে হয়। যারা বিভিন্ন গবেষণা কাজে যুক্ত তারা লাইব্রেরিতে সব সময় ব্যস্ত সময় কাটান।
পরিসংখ্যান বলছে, দশম জাতীয় সংসদের অর্ধেক মেয়াদ পর্যন্ত গ্রন্থাগারে গিয়েছিলেন ১১২ জন এমপি। আর একবারের জন্যও যাননি ২৩৮ জন। সংশ্লিষ্টরা জানান, সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিসহ সংসদীয় কার্যক্রমের নানা বিষয়ে দিক নির্দেশনামূলক বিভিন্ন গ্রন্থে সমৃদ্ধ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংসদ লাইব্রেরি। এর মধ্যে রয়েছে- বিশ্বের বিভিন্ন জার্নাল, আইন, অধ্যাদেশ, ঘোষণা, সামরিক বিধি, সরকারি গেজেট, সংসদের বিতর্ক, অ্যাটলাস, মানচিত্র, গবেষণাপত্র, আউট অব প্রিন্ট বহু দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ।
লাইব্রেরি ব্যবহারের নিয়মনীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, লাইব্রেরি ব্যবহারের কয়েক ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে রানিং এমপিরা লাইব্রেরি ব্যবহারের পাশাপাশি বই ইস্যু করে বাসায় নিয়ে চর্চা করতে পারেন। আর পুরনো এমপিরা শুধু লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারলেও কোনো বই এখান থেকে অন্যত্র নিয়ে যেতে পারেন না।
আর সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বই ইস্যু করে নিতে পারলেও তা দ্রুতই জমা দিতে হয়। এর বাইরে যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে কোনো গবেষণার কাজে এই লাইব্রেরি কেউ ব্যবহার করতে ইচ্ছুক হলে লিখিতভাবে জানালে কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে তারা লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারেন। তবে কোনো গ্রন্থ সঙ্গে নিতে পারেন না।