চরম জনবল সংকট নিয়ে চলছে সাতক্ষীরা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সরকার অনুমোদিত ২০টি পদের বিপরীতে ১৭টি পদ শুন্য। ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর, প্রশিক্ষক (পশুপালন) ও ক্যাশিয়ার দিয়ে চলছে জেলার যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি। জনবলের অভাবে প্রশিক্ষণার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য পশুপালন কেন্দ্রে পালন করা হচ্ছেনা কোন পশু। হাঁস-মুরগি পালন কেন্দ্রেও নেই কোন হাঁস-মুরগি। বহিরাগত প্রশিক্ষক দিয়ে কোনভাবে চালানো হচ্ছে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে হচ্ছে বাইরের কোন গরু-ছাগল বা হাঁস মুরগির খামারে।
জেলা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অডিনেটরের কার্যালয় থেকে জানা যায়, জেলা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সরকার অনুমোদিত পদ আছে ২০ টি। সেগুলো হলো-ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট অফিসার, সিনিয়র প্রশিক্ষক (পশুপালন), সিনিয়র প্রশিক্ষক (মৎস্য), সিনিয়র প্রশিক্ষক (কৃষি), প্রশিক্ষক (পশুপালন), প্রশিক্ষক (মৎস্য), সহকারী প্রশিক্ষক (কৃষি), প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক, প্রদর্শক দুই জন, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক, ইলেকট্রিশিয়ান কাম পাম্প অপরেটর, বাবুর্চি, কিচেন কাম ডাইনিং এটেনডেন্ট, অফিস সহকারী, ক্যাটল এন্ড পোল্ট্রি এটেনডেন্ট, ফরাস কাম নৈশ প্রহরী এবং ঝাড়–দার। এর মধ্যে ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর, প্রশিক্ষক (পশুপালন) ও ক্যাশিয়ার পদে একজন করে তিন জন কর্মরত আছেন। বাকি ১৭ টি পদই দীর্ঘ দিন যাবত শুন্য রয়েছে। জনবল সংকটের বিষয়ে সর্বশেষ সাতক্ষীরা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অডিনেটর আশুতোষ কুমার বিশ্বাস গত ২৪ আগস্ট যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) কে তথ্য প্রেরণ করেণ। এর আগে কয়েক বার এবিষয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরকে অবহিত করা হলেও আজও পর্যন্ত কোন জনবল পাওয়া যায়নি।
অফিস থেকে আরও জানাযায়, সাতক্ষীরা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তিন অর্থ বছরে প্রশিক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ছয়শ জনের। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৫৬৮ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে পুরুষ ৪৯২ জন নারী ৭৬ জন।
অফিস থেকে আরও জানাযায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে তিন মাস মেয়াদি গবাদি পশু পালনে দুটি ব্যাচে লক্ষ্যমাত্র ছিলো দুইশ জন। এ অর্থ বছরে মোট ১৭১ জন উত্তীর্ণ হয়। উত্তীর্ণ মধ্যে পুরুষ ১৩৯ জন এবং মহিলা ৩২ জন।
২০১৯-২০ অর্থ বছরে তিন মাস মেয়াদি গবাদি পশু পালনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬০ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৫৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৫ জন এবং মহিলা তিন জন। এক মাস মেয়াদি গবাদি পশু পালনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪০ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৬ জন এবং মহিলা চার জন। এক মাস মেয়াদি হাঁস মুরগি পালনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪০ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩২ জন এবং মহিলা আট জন। এক মাস মেয়াদি মৎস্য চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪০ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৩৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৭ জন এবং মহিলা দুই জন। এক মাস মেয়াদি কৃষি ও হার্টিকালচারের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪০ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৭ জন এবং মহিলা তিন জন।
২০২০-২১ অর্থ বছরে তিন মাস মেয়াদি গবাদি পশু পালনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬০ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৬০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৬ জন এবং মহিলা চার জন। এক মাস মেয়াদি গবাদি পশু পালনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪০ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৪ জন এবং মহিলা ছয় জন। এক মাস মেয়াদি হাঁস মুরগি পালনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪০ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩১ জন এবং মহিলা নয় জন। এক মাস মেয়াদি কৃষি ও হার্টিকালচারের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪০ জন। উত্তীর্ণ হয়েছে ৪০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩৫ জন এবং মহিলা পাঁচ জন।
শিক্ষার্থীরা বলছে, এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা বাস্তর জীবনে তা’ প্রয়োগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু এখানে জনবলেন সংকট থাকায় আমার কাঙ্খিত প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এখান সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা থাকা শর্তেও আমাদের ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য বাহিরের খামারে যেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে একজন প্রশিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্তরিকভাবে প্রশিক্ষণ দেয়ার চেষ্টা করছি। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই সনদ গ্রহণ করে তা’ প্রয়োগ করছে না। আবার কোনো কোনো যুবক প্রশিক্ষণ শেষে তা’ কাজে লাগিয়ে নিজের এবং পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন।
সাতক্ষীরা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অডিনেটর আশুতোষ কুমার বিশ্বাস বলেন, বেকারত্ব দূর করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলেন। এখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে অনেক বেকার তরুণ-তরুণী তাদের জীবনের স্বচ্ছলতা ফিরে এনেছে। জনবল সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জনবলের সংকট আছে। তবে, জনবল চেয়ে অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কোন উত্তর পাওয়া যায় নি বলে তিনি জানান।