আবু সাইদ বিশ্বাস: সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী। সাতক্ষীরা জেলার একজন প্রবীণ সাংবাদিক। বর্তমানে দৈনিক যুগান্তর, এনটিভির সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি। তিনি গতরাতে একটি খোয়াব দেখেছেন। তার সেই খোয়াবটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
গত রাতে একটি খোয়াব দেখিয়াছি। রাতভর এই খোয়াব দেখিয়া সকালে ঘুম হইতে জাগিয়া ভাবিলাম খোয়াবটির কথা সবাইকে বলিয়া রাখা ভালো। কারণ খোয়াবে কোনো গুপ্তধনের সন্ধান পাইলে তো আর আমজনতাকে নিশ্চয়ই বলিতাম না। আমার দেখা গত রাতের খোয়াব গুপ্তধন নয়, স্বর্ণ খনিও নয়, রাজবাড়ি দখলও নয় যে তাহা লুকাইয়া রাখিতে হইবে। শুনুন আমার খোয়াবটি।
‘অদ্য হইতে পুলিশ সাংবাদিক হইয়াছে। এমনকি সম্পাদক ও প্রকাশকও হইয়াছে। ইহা তো অত্যন্ত সুখের খবর। আনন্দের খবর। কারণ আমরা তো চাহি আমাদের অর্থাৎ সাংবাদিকদের সংখ্যা বাড়–ক। তাহা হইলে আমরা দলে ভারি হইতে পারিব। আমাদের প্রেসক্লাবের সদস্যও বাড়িবে। ভোটার বাড়িবে। আর তাহা ছাড়া সাংবাদিকরা সংবাদের এতো বোঝা বহিতে বহিতে এমন কি রাত বেরাত ছুটিতে ছুটিতে ক্লান্ত হইয়া পড়িয়াছেন। তাই পুলিশ সাংবাদিক হইয়া দায়িত্ব গ্রহণ করিলে তো আমাদেরই সুবিধা হইল। পুলিশ আমাদের প্রেসক্লাবের সদস্য হইলে আমাদিগকে কথায় কথায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কোমরে দড়ি বাঁধিয়া ও হাতে হাত কড়া পরাইয়া ঠেলিতে ঠেলিতে লকআপে লইয়া যাইতে পারিবে না।
পুলিশ সাংবাদিকগণ অবশ্য বলিয়াছেন যে তাহারা পুলিশের অর্জনসমূহ তাহাদের নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে তুলিয়া ধরিবেন। সে ক্ষেত্রে পুলিশের বাজার আরও সম্প্রসারিত হইবে। বাজারে প্রতিযোগিতা হইবে। ফলে বাজার দরে ভারসাম্য থাকিতে বাধ্য হইবে। হঠাৎ কে যেনো প্রশ্ন করিল ‘পুলিশ কি সাংবাদিক হইবার যোগ্যতা রাখে’। জবাব আসিল কেনো রাখেনা। ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক, ইজিবাইক চালক, মোটরসাইকেল গ্যারেজের শ্রমিক, গ্রীল ফিট করা মিস্ত্রি, হেরোইন ইয়াবা ফেন্সিডিল খেয়ে বুঁদ হয়ে পড়ে থাকা যুবক, গোল্ড স্মাগলার, চোরাচালানি এরা যদি সাংবাদিক হইতে পারে কেনো তবে পুলিশ একটি সুশৃংখল আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত সদস্য সাংবাদিক হইতে পারিবে না। কলা কচু বিক্রেতা, ডিস ব্যবসায়ী এবং অন্যের সার্টিফিকেট ঘষিয়া মাজিয়া নিজের নাম বসাইয়া সার্টিফিকেট ধারণ করিয়া কেহ যদি সাংবাদিক হইবার যোগ্যতা রাখে কেনো তবে পুলিশ পারিবে না। যথার্থ উত্তর শুনিয়া বলিলাম আইনের কথাই বটে।
পুলিশ বলিয়াছে তাহাদের সব অর্জনের কথা তাহাদের নিউজ পোর্টালে তুলিয়া ধরিবে। পুলিশের অর্জনের কথায় সন্তোষ প্রকাশ করিলাম বটে। কিন্তু ভাবিতে লাগিলাম অর্জনের রিপোর্ট পুলিশ ডট নিউজে ছাপা হইলে অনার্জনগুলির কি হইবে। পুলিশের ব্যর্থতার কথা কে লিখিবে। সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতার খবর তো পুলিশ ডট কমে প্রকাশ করিতে পারিবে না। তাহা হইলে রিপোর্টের নিরপেক্ষতা হারাইবে।
হঠাৎ একজন মুখে মাস্ক না মুখোশ, চোখে রোদ চশমা, মাথায় ক্যাপ লইয়া উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল আমার পরিচয় আমি একজন দাগী চোর। সেই পাকিস্তান আমল হইতে চুরি পেশায় থাকিয়া বহু অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছি। বোকা পুলিশ কখনও আমাকে পাকড়াও করিতে পারে নাই। আমার ধোকায় পড়িয়া ফুলিশ পুলিশ নিরীহ মানুষকে ধরিয়া পেদান দিয়া স্বীকার করাইয়াছে যে সে চুরি করিয়াছে। ১৬১ ও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়াছে। আমি চুরি করিলাম। অথচ পুলিশ আমার কলা ছিড়িল। আমার সহিত আমার কয়েক চোর ডাকাত সহযোগী রহিয়াছে। পুলিশ সাংবাদিক হইয়াছে জানিতে পারিয়া সিদ্ধান্ত লইয়াছি ফুলিশ পুলিশকে আরও বোকা বানাইবার জন্য চোরডাকাত ডট কম নামে একটি নিউজ পোর্টাল বাহির করিব। সেই পোর্টালে নিয়মিতভাবে আমাদের চোর সফলতার কথা লিখিব। সেই সাথে পুলিশের ব্যর্থতার কথা বলা হইয়া যাইবে। এমন একটি নিউজের ভাষা শুনুন। ‘গত শনিবার দিবাগত রাত্রিতে আমার নেতৃত্বে চোরদের একটি আভিযানিক দল ‘আগরদাড়ি ইউনিয়নের গোবরদাড়ি’ গ্রামে স্বর্গীয় গোবর্ধন বাবুর বাড়ি ঘেরাও করিয়া বাড়ির সবাইকে অচেতন করিয়া দুই লক্ষ টাকার স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা মোবাইল এবং অন্যান্য সম্পদ নির্বিঘেœ লুন্ঠন করিয়া নিরাপদে বাড়িতে ফিরিয়া আসিয়া সব কিছু ভাগাভাগি করিয়া লইয়াছি। আর ফুলিশ পুলিশ পরদিন গোবর্ধন বাবুর দোতলা বাড়িতে যাইয়া সব কিছু শুনিয়া বুঝিয়া চোরদের যাতায়াতের পথের নকশা করিয়া গোবরদাড়ি গ্রাম চষিয়া ৩০ জনকে পাক্কা চোর হিসেবে ধরিয়া আনে। পরে তাহাদের মধ্য হইতে যাচাই বাছাই করিবার নামে দুই পকেটে বেশ কয়েকটি হাজার টাকার বান্ডেল লইয়া মাত্র দুই তিন জনকে রাখিয়া অন্যদের ছাড়িয়া দিয়াছে। ফুলিশ পুলিশ যাহাদের চালান করিয়াছে তাহারা কেহই চুরি করে নাই। অতএব ইহা যেমন আমার দলের সাফল্য তেমনি তাহা পুলিশের ব্যর্থতাও বটে। তাই পুলিশের এমন সকল ব্যর্থতা ও আমাদের সফলতা প্রচার করিবার জন্য চোর ডাকাত ডট কম পোর্টাল বাহির করিতেছি।
এতো শত কথা শ্রবন করিয়া মাদক কারবারী ও চোরাচালানিরা বলিল আমরাও তো ভাবিয়াছি ড্রাগ ডটকম বাহির করিয়া পাতার পর পাতায় লিখিব হাজার হাজার ইয়াবা শত শত বোতল ফেন্সিডিল বিদেশি মদ ছাড়াও বহু প্রকারের চোরাচালানে আমাদের অর্জিত সফলতার সব কথা। এতো কথা শুনিয়া মাথা উঁচু করিয়া কথা বলিল একজন গোল্ড স্মাগলার। সে বলিল আমিও তো নিত্য স্বর্ণ বাংলাদেশ হইতে ভারতে পাচার করিয়া সফলতা লাভ করিয়াছি। তবে সম্প্রতি সাতক্ষীরা সীমান্তে দুইটি পৃথক চালান মার যাওয়ায় পোশাকধারীরা আমার দুই সহকর্মী মনিরুলকে ১০০ ভরি ও বেলালকে ৮০ ভরি স্বর্ণসহ ধরিয়া লইয়া গিয়াছে। স্বর্ণ চোরাচালানে আমার এই বিরল সফলতার কথা তুলিয়া ধরিবার জন্য আপনাদের অনুরোধ জানাইতেছি। চোর ডট কম ও ড্রাগ ডট কমের কর্তারা বলিলেন অবশ্যই প্রচার করিব। এইবার একজন দুর্নীতিবাজ আসিয়া বলিলেন আমি ওসব ডট কম ফট কম বুঝি না। দুর্নীতিতে আমি তো চ্যাম্পিয়ন। দুর্নীতিই তো আমার নীতি। অতএব আমি এই নীতিতে সবাইকে আত্মসমর্পন করাইয়া স্বীয় কার্য সিদ্ধ করিব। ওই সব দমন কমিশন আমার নীতির কাছে হার মানিবে। তাকাইয়া দেখুন অনেক ঘটনাই এই রকম ঘটিতেছে।
এবার সম্মুখে আসিল একটি ক্রস ফায়ারের ঘটনা। আমজনতা বলিল পুলিশ আমাদের গেরামের নছিমউদ্দিনকে ধরিয়া লইয়া গিয়াছে। সে নাকি মাদক চোরাচালানি ও সন্ত্রাসী। আমরা অবশ্য আগে কখনও নছিমুদ্দিনের এমন বদ নাম শুনি নাই। পুলিশ তাহাকে নিজ হেফাজতে আটক রাখিয়া কয়েকদিন যাবত তাহার বাড়িতে মোবাইলে কথা বলাইতেছে। আর টাকার পারদ উঠাইতেছে। পরিবারটির তেমন সাধ্য নাই। এইভাবে দিন কয়েক টর্চারিং চালাইবার পর শনিবার দিবাগত রাতে তাহার চোখ বাঁধিয়া নছিমুদ্দিনকে বাই পাসের ধারে নির্জন স্থানে লইয়া যাইয়া তাহার হাতকড়া খুলিয়া দিয়া বলিয়াছে যা দৌড়ে পালাইয়া যা। সেই সাথে সাথে পিছন পিছন দিক হইতে ট্রিগার টিপিয়া গুড়–ম শব্দ করিল। ভোরে কৃষক ও পথচারীরা রক্তাক্ত লাশ দেখিয়া সবাইকে খবর দিল। আর পুলিশও আসিল। পুলিশ তাহার পুলিশ নিউজ ডট কমে লিখিয়াছে ‘গত রাতে দুই দল মাদক চোরাচালানি মাদক ভাগাভাগি লইয়া বিরোধে জড়াইয়া নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে নছিমউদ্দিন নামের একজন মাদক কারবারী গুলিবিদ্ধ হইয়া নিহত হইয়াছে। ঘটনাস্থল হইতে একটি পিস্তল দুই রাউন্ড গুলি ও ৫৯টি ইয়াবা পাওয় গিয়াছে। মৃত নছিমউদ্দিনের বিরুদ্ধে থানায় এক ডজন চোরাচালান ও সন্ত্রাসের মামলা রহিয়াছে।
এমন আরও একটি নিউজে পুলিশ লিখিয়াছে গোপন সূত্রে খবর পাইয়া টোনা গেরাম হইতে নরিমউদ্দিন বেপারীকে গ্রেপ্তার করিয়া আনা হয়। তাহার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাহাকে লইয়া অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে গেলে বেতনা নদীর কাছে পৌছাইলে তাহার সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করিয়া গুলি করিলে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলির এক পর্যায়ে নরিমউদ্দিন বেপারী গুলিবিদ্ধ হইয়া নিহত হয়। তাহার বিরুদ্ধে থানায় এক ডজন মামলা রহিয়াছে’।
ততক্ষণে ফজরের নামাজের আয়ানের সুর কানে আসিতেই ধড়ফড় করিয়া জাগিয়া উঠিলাম। ভাবিলাম এসব কি দেখিলাম। নিজের গায়ে চিমটি কাটিয়া জানিলাম আমার চেতনা আছে। নিজে নিজে হাসিলাম রাতের খোয়াবের কথা মনে করিয়া। ভাবিলাম খোয়াবটির কথা সকলকে জানাইয়া রাখা দরকার।
Check Also
তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ
মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : তাবলীগ জামাতে সাদপন্থীদের বর্বোরিচত হামলার প্রতিবাদ ও সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি …