৫৪৩ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকার পর আজ রোববার সশরীরে ক্লাস শুরু হচ্ছে। তবে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর আওতায় আসতে পারছে না। দেশের উত্তর ও মধ্যভাগে চলমান বন্যা পরিস্থিতির কারণে ১৪ জেলার সাত শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে পানি নেমে গেলেও সেগুলো এখনো পাঠদানের উপযোগী হয়নি। তা ছাড়া বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই অবস্থায় এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
দৈনিক আমাদের বার্তার প্রতিনিধিরা জানাচ্ছেন, জামালপুরের ছয়টি উপজেলায় তলিয়ে যাওয়া ১৯০টি বিদ্যালয়ে চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চসহ বিভিন্ন আসবাবের ক্ষতি হয়েছে। যমুনা বেষ্টিত চরাঞ্চলে এখনো অনেক বিদ্যালয়ে পানি রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনার পানিতে ইসলামপুর উপজেলার ডেবরাইপ্যাচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন তলিয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের সব আসবাব পানির নিচে। একই উপজেলার দেলিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতর পানির স্রোত। একই উপজেলার পূর্ব বামনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আসবাব পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ১৯০টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত হলেও রবিবার থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে চরাঞ্চলের অনেক বিদ্যালয়ে এখনো পানি রয়েছে। চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও জেলার চারটি উপজেলার ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ফলে বিদ্যালয়ের বেঞ্চসহ আসবাবের ক্ষতি হয়েছে। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসেন আলীর দাবি, বেশিরভাগ বিদ্যালয় থেকে পানি নেমে গেছে। পদ্মার পানিতে শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়ার ১৫টি গ্রামের পাশাপাশি ৪৯টি প্রাথমিক ও ৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এতে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ১২ সেপ্টেম্বর এসব বিদ্যালয় খোলা যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা জেগেছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুই উপজেলার কোনো কোনো বিদ্যালয়ের মাঠ ও রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়েছে। আবার কোনো বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকেছে। বন্যার পানি নেমে না গেলে এসব বিদ্যালয় আপাতত বন্ধ রাখা হবে।
যমুনার পানি বাড়ায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার ২৮টি প্রাথমিক এবং দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম কবির বলেন, উপজেলার ২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া দুর্গম চরে মানিকদাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভাঙ্গুরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন যমুনার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
রাজবাড়ীর চারটি উপজেলার ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পদ্মা নদীর পানি প্রবেশ করেছে। এতে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ী সদর উপজেলায় চারটি, পাংশা উপজেলায় তিনটি, গোয়ালন্দ উপজেলায় ৯টি এবং কালুখালী উপজেলায় পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। পদ্মার পানিতে ফরিদপুরে ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলায় ২৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। চরভদ্রাসনেই ১৫টি বিদ্যালয়ে বন্যার পানি উঠেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম আমাদের বার্তাকে বলেন, ফরিদপুরে তিনটি উপজেলার বিভিন্ন স্কুল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি স্কুলের কক্ষে পানি ঢুকেছে। তবে ১২ তারিখের আগেই স্কুলগুলো পাঠদানযোগ্য হবে।
সিরাজগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের যমুনা চরে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এখনো পানির নিচে। জেলা প্রথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতর এখনো পানি জমে আছে। কুড়িগ্রামে ৪৩টি বিদ্যালয়ে পানি ওঠে। ৫টি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নীলফামারীতে বন্যায় ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ডিমলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নে ৭টি, খালিশাচাপানী ইউনিয়নে ২টি, ঝুনাগাছ চাপনী ইউনিয়নে ৪টি বিদ্যালয় রয়েছে।
এদিকে সাম্প্রতিক বন্যায় কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার অববাহিকার শতাধিক চরাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে চরাঞ্চলের ৮৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া নদ-নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে আরও পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
চরাঞ্চলের স্কুলভবন থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও অনেক প্রতিষ্ঠানের মাঠে জমে আছে পানি। আবার কোথাও কোথাও কাদা। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের খানাখন্দে হাঁটুপানি জমে থাকায় সন্তানদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন অভিভাবকরা। স্কুল কার্যক্রম শুরুর আগে অন্তত যোগাযোগের রাস্তাগুলো মেরামতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
টাঙ্গাইল জেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, জেলার ৩৩২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে ও ৩৪টির শ্রেণিকক্ষের ভেতরে পানি জমে আছে। এছাড়া গত জুলাইয়ে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে চলে গেছে। অন্যদিকে মাধ্যমিক পর্যায়ের ৯৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে পানি রয়েছে।