আবু সাইদ: সাতক্ষীরা :বেশ কয়েকটি সহিংস ঘটনা, গোলা-গুলি, প্রার্থীদের ভোট বর্জন ও ভোটগ্রহণ স্থগিতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সাতক্ষীরার দু’উপজেলার ২১ টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোট। নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচনের দিনের সহিংসতায় পুলিশসহ আহত কমপক্ষে ৩০ জন। গুলিবিদ্ধ সুজিত কাগুজি ও দুই পুলিশ সদস্যকে চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।সরেজমিনে পাটকেলঘাটার হারুন-অর-রশিদ কেন্দ্রে দেখা যায়, বৃষ্টির কারনে সকালে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারেননি ভোটাররা। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটারদের উপস্থিতি বেড়েছে। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্য করার মত।জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, অনিয়মের অভিযোগে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কয়লা ইউনিয়ন পরিষদের আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ভোট বর্জন করেছেন। এছাড়া একই ইউনিয়নে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। একই অভিযোগে তেতুলিয়া ইউনিয়নের চশমা প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আফতাব আহমেদ দুপুর ১টার দিকে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন। এদিকে,অনিয়মের অভিযোগে কেড়াগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট স্থগিত করেছে উপজেলা প্রশাসন। অপরদিকে, তালার জালালপুর ইউনিয়নের ১নং মক্তব কেন্দ্রে বোমা ফেলে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জানান,তালার জালালপুর ইউনিয়নের ১ নং মক্তব কেন্দ্রের পাশে বোমা বিস্ফোরন করে কেন্দ্র দখলে নেয়ার চেষ্টা করে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা। এসময় তারা হাতুড়ি ও লাটি-সোটা নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে র্যাব সদস্যরা উপস্থিত হয়ে ফাঁকা গুলি বর্ষন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এঘটনায় নৌকা প্রতীকের কর্মী আজহার হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া কানাইদিয়া ওয়ার্ডে হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সুজিত কাগুজি নামের এক যুবক।তালা থানার ওসি মেহেদি রাসেল জানান,জালালপুর ইউনিয়নের দোহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিদুল হক লিতুর কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে বাবুল হোসেন ও ইমদাদুল হক নামের দু’পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আটক গুলিবিদ্ধ সুজিত কাগুজিকে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা চলছে বলে জানান ওসি।
এর আগে সকালে শ্রীমন্তকাটি কেন্দ্রের পাশে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্র্ম-সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে। এছাড়া মারপিটে স্বতন্ত্র প্রার্থীর দু’কর্মী আহত হয়েছেন।এদিকে,রাতে কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ও একজন ইউপি সদস্য প্রার্থীসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। অপরদিকে,অনিয়মের অভিযোগে কলারোয়ার কেড়াগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে উপজেলা প্রশাসন।কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন হোসেন চৌধুরী জানান, কেড়াগাছি কেন্দ্রে ভোট অনিয়মের অভিযোগ আসে। সে কারণে ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। জেলা নির্বাচন অফিসার নাজমুল কবির জানান, কলারোয়া ও তালা উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৪টি ইউনিয়নে ইভিএমে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে তালায় ৩ টি ও কলারোয়ায় একটিতে ইভিএমে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আরো জানান, নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুই উপজেলায় ৮১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এছাড়া সংরক্ষিত সদস্য পদে ২৬০ জন নারী ও সাধারণ সদস্য পদে ৮৩৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।সাতক্ষীরার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক মিজানুর রহমান জানান, তালা উপজেলার সদর, জালালপুর ও খলিলনগর ইউনিয়ন এবং কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছি ও হেলাতলা ইউনিয়নকে ঝুকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে, ঝুকিপর্ণ কেন্দ্র গুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এই দুই উপজেলায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ৬ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ২৩ জন নির্বাহি মাজিস্ট্রেটসহ ১ হাজার ১০২ জন পুলিশ, ১০০ জন বিজিবি, ৩ হাজার ৩১৫ জন আনসার সদস্য, র্যাবের ৬ টি টিম নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। উল্লেখ্য, এই দুই উপজেলায় মোট ৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৯৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৪ জন ও নারী ভোটার রয়েছেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫০ জন।
Check Also
তালায় ইউপি পরিষদ কক্ষে দুই সাংবাদিকের উপর হামলা, প্রতিবাদে মানববন্ধন
তালা প্রতিনিধি তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদে সাংবাদিক আক্তারুল ইসলাম ও আতাউর রহমানের ওপর সন্ত্রাসী রমজান আলী …