বিদায় হজ্জকে আরবিতে বলা হয় ‘হাজ্জুল ওয়াদায়ে’। হজ্জ শব্দের অর্থ হজ্জ করা, ইচ্ছা করা, গমন করা প্রভৃতি আর ওয়াদা শব্দের অর্থ বিদায় (আল-মু’জামুল ওয়াফী)। পরিভাষায় বিদায় হজ্জ বলতে বুঝায় রাসুল (স,) এর জীবনের শেষ হজ্জ আদায়কে। রাসুল (স.) জীবনে মাত্র একবার হজ্জ আদায় করার সুযোগ পেয়েছিলেন, ইসলামের ইতিহাসে এই হজ্জ বিদ্য়া হজ্জ নামে খ্যাত। রাসুল (স.) যুল-কদা মাসের পাঁচ দিন বাকি থাকতে হজ্জ উপলক্ষে রওনা করেন। হজ্জের প্রারম্ভে তিনি মানুষদেরকে হজ্জের নিয়ম কানুন শিক্ষা দেন। তারপর তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ প্রদান করেন। নিন্মে এ ভাষণের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ও শিক্ষা সর্ম্পকে আলোচনা করা হলো ঃ
আল্লাহর প্রশংসার পর মহানবী সা. বলেন, ”হে জনগণ, আমার কথা শোন। আমি সম্ভবতঃ এই স্থানে এ বছরের পর আর কখনও তোমাদের সাথে মিলিত হতে পারব না। হে জনতা আজকের দিেেন ও এই মাসে যেমন অন্যের জান মালের ক্ষতি সাধন তোমাদের ওপর হারাম তেমনি কিয়ামত পর্যন্ত তা হারাম রয়ে গেল। যার কাছে কারো গচ্ছিত জিনিষ রয়েছে সে যেন মালিকের কাছে তা ফেরত দেয। তোমরা কারোর ওপর জুলুম করবেনা, জুলুমের শিকারও হবেনা। সকল সুদ রহিত করা হলো। তোমরা শুধু মুলধন পাবে। তোমাদের নারিদের প্রতি তোমাদের কিছু কর্তব্য এবং অধিকার রয়েছে। নরিরা তোমাদের বিছানায় অন্য কাঊকে শোয়াবেনা। এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত অশ্লীল কর্মকা-ে লিপ্ত হবেনা এটা তার কর্তব্য। কেননা এটা তোমাদের ঘৃণার ঊদ্রেক করে থাকে। আর তা যদি করেই বসে তবে তাদের থেকে আলাদা বিছানায় শোয়া এবং মৃদু প্রহার করার অধিকার আল্লাহ তোমাদের দিয়েছেন । কেননা তারা তোমাদের কাছে অক্ষম বন্দী স্বরূপ আল্লাহর আমানত হিসেবে তাদের গ্রহণ করেছ। আল্লাহর বিধান অনুসারেই তোমরা তাদেরকে বৈধ করে নিয়েছ। আর তোমাদের কাছে এমন জিনিস রেখে যাচ্ছি যা দৃঢ়ভাবে ধারণ করলে তোমরা কখনো বিপথগামী হবেনা। প্রকাশ্য সুস্পষ্ট জিনিস আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসুলের সুন্নাহ। জেনে রাখ, প্রত্যেক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। মুসলমানরা ভাই ভাই। (সীরাতে-ইবনে হিশাম /৩৩০Ñ৩৩১)।
শিক্ষাঃ
* বক্তব্য বা আলোচনার শুরুতে মহান আল্লাহর প্রশংসা করা ও তাঁর রাসুলের প্রতি দরুদ পেশ করা। রাসুল (স.) বলেন “যে কাজ বিসমিল্লাহ ব্যতিত আরম্ভ করা হয়, তাতে কোন বরকত থাকে না” (কুরতুবি)।
* জীবনের প্রতিটি কাজ শেষ কাজ হিসেবে মনে করে সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে আদায় করা। রাসুল (স.) বলেন “বস্তুত মানুষের আমল তার শেষ কর্মের ওপর নির্ভরশীল” (বুখারি মুসলিম)।
* আমানাতের খেয়ানত না করা । রাসুল (স.) বলেন, “মোনাফেকের আলামত হলো যখন তার কাছে কোন কিছু আমানাত রাখা হয় তখন সে তা খিয়ানত করে” (বুখারি ও মুসলিম)। মুনাফেকদের স্থান হলো জাহান্নামের সব্ নি¤েœ। আল্লাহ বলেন,“ নিশ্চয় মুনাফিকেরা জাহান্নামের সর্ব্ নি¤œ স্থানে অবস্থান করবে”( সুরা নিসা ১৪৫)।
* মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতিত্ব বোধ জাগ্রত রাখা। রাসুল (স,)“ বলেন,পারস্পারিক দয়া ভালবাসা ও সহানুভুতি প্রদর্শনে তুমি মুমিনদের একটি দেহের মত দেখবে যখন শরীরের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয় তখন শরীরের সকল অঙ্গÑপ্রতঙ্গ রাত জেগে জ¦রে অংশ নেয়”(বুখারি ও মুসলিম) ।
* বিদায় হজ্জের ভাষণ বিশে^র সকল^ মুসলমানদের জন্য বড় এক নেয়ামত বা সম্পদ। রাসুল (স.) এ ভাষণে তিনি ঊপস্থিত সাহাবি আজমাইন (রা.) ও অনাগত মুসলমানদের করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। তাদের দুনিয়া জীবনের শান্তি ও পরকালিন জীবনের মুক্তির জন্য এ ভাষণের অনুসরণ ও বাস্তবায়নই যথেষ্ট। অথচ আজ তারা এ মহামূল্যবান ভাষণকে পাশ কাটিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের ভাষণের মধ্যে শান্তি ও মুক্তি খুেজ বেড়াচ্ছে। যেটা প্রকারন্তে রাসূল (স.) কে অবমননার শামিল। অথচ মহান আল্লাহ বলেন“হে নবী!লোকদের বলে দাও তোমরা যদি প্রকৃতই আল্লাহর প্রতি ভালবাসা পোষণ কর তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন। তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াময়”(সুরা আলে ইমরান ৩১)। তাই আসুন যদি আমরা সত্যিকার অর্থেই রাসুল (স.) কে ভালাবসি এবং শান্তিময় জীবন যাপন করতে চাই তাহলে আমাদের কর্তব্য হলো রাসুল (স.) এর বিদায় হজ্জের ভাষণের শিক্ষাকে আমাদের ব্যক্তিগত , পারিবারিক ,সামাজিক, রাষ্টিয় ও আর্ন্তজাতিক জীবনের সকলক্ষেত্রে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন । আমিন!
মাওঃ মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম
উপধ্যক্ষ
গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, অভয়নগর, যশোর।