ভারি বর্ষণে ভবদহ অঞ্চল প্লাবিত : দুর্ভোগে নিম্ন আয়ের মানুষ

বিলাল মাহিনী, যশোর :

যশোরের ভবদহ বিল অঞ্চলের মানুষ এখন দিশেহারা।
১৯ সেপ্টেম্বর রবিবার রাত থেকে টানা ভারি বর্ষণে পানির নিচে নিচে তলিয়ে গেছে ভবদহ অঞ্চলের শত শত ঘর বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। খোজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর ও খুলনার ফুলতলা-ডুমুরিয়া উপজেলার লাখ লাখ মানুষ ভবদহের বিলের পানি নিষ্কাশন সমস্যার কারণে দীর্ঘ দিন যাবৎ দুঃখ-কষ্টে জীবন যাপন করছেন।

চলতি বর্ষায় অভয়নগরের সুন্দলী ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত। রবিবার রাত আনুমানিক ৯টা থেকে ভারি বর্ষণ শুরু হয়ে চলতে থাকে প্রায় ২টা পর্যন্ত। এতে রাতের আঁধারেই তলিয়ে যায় অভয়নগর উপজেলার সুন্দলী ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামের বাড়িঘর, স্কুল, কলেজ, মন্দির, মসজিদসহ রাস্তাঘাট।

পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় এলাকার জনগণকে ডুবে থাকতে হয় প্রায় ২মাস। ফলে বিপর্যস্ত এখানকার জনজীবন। শিক্ষার্থীরা আবারও পড়েছে বিপাকে, যেতে পারছেনা তাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

অনেক প্রতিষ্ঠানকর্তৃপক্ষ তৈরী করেছে বাঁশের সাঁকো। মন্দিরে যেতে পারছেনা ভক্তরা। সবচেয়ে বেশি দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ইউনিয়নের ডহরমশিয়াহাটি (দক্ষিণ) গ্রামের মানুষের।

এখানকার প্রায় সকল বাড়ি-ঘর পানির নিচে।

তাদের বাস করতে হচ্ছে ব্যাঙ আর সাপের সাথে। ভবদহ ও আমডাঙ্গা খাল দিয়ে পর্যাপ্ত জল যাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় এবং জল বেড়ে যাওয়ায় ভেঙ্গে পড়ছে মাটির তৈরী ঘরগুলো। ভেসে গেছে এলাকার প্রায় সকল মাছের ঘের। ফলে ক্ষতির সম্মুখিন এলাকার ঘের ব্যবসায়ীরা। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের জন্য সুন্দলী এলাকার সকল মহল থেকে ৮৮ যশোর ৪এর বারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট আশু হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।

ভবদহ অঞ্চল বর্তমানে জলাবদ্ধায় পরিণত হয়েছে। বরাবর এ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা থাকলেও গত কয়েকদিনের ভারি বর্ষণে তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। রবিবার রাত ৮ ঘটিকা থেকে শুরু হওয়া ভারি বর্ষণে ইতি মধ্য অনেক বাড়িতে পানি ডুকে পড়েছে।

গত দুই দিনে পানি বেড়েছে ১৯ সেমি:।
নতুন করে তলিয়ে গেছে ৪০০-৫০০ বাড়ি-ঘর ও স্কুল-কলেজ।

ভারি বর্ষণে গত দু’ দিনে ভবদহ এলাকার বিল কেদারিয়া ও বিল বোকড় এলাকায ১৯ সেমি এর একটি রেকর্ড পরিমান পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবদহের নাইন ভেন্টের জোয়ার ঢোকা ও অতি বৃষ্টি মূলত: এই হঠাৎ জলবৃদ্ধির কারন। আর ৬ সেমি জল বৃদ্ধি পেলেই গতবারের সমান জলাবদ্ধতা হবে যা মাত্র তিন দিনের আপেক্ষা মাত্র। কারন, যশোর সদর, বিল হরিণা সহ আরো ৫ বিলের জল গড়িয়ে আসছে ধীরে ধীরে ভবদহের দিকে।

অত্র এলাকার অপেক্ষাকৃত নিচু বাড়ি ঘর গুলির উঠান এখন পানি বন্দী।

জলাবদ্ধ এলাকা হওয়াই এ অঞ্চলেন মানুষের প্রধান পেশা হয়ে দাড়িয়েছে মৎস্য চাষ কিন্তু রাতেই এ পানি বৃদ্ধি পাওয়াই তাদের ঘের ভেড়ি তলিয়ে গিয়েছে। ইতি মধ্য চোখে পড়ছে চাষিরা তাদের মৎস্য ঘেরে নেট পাটা দিতে ব্যাস্ত সময় পার করছে।

এলাকা ঘুরে দেখা যায় অপেক্ষাকৃত নিচু বাড়ি গুলো এখন পানির নিতে। অল্প পানি বাড়লেইতা ঘরে প্রবেশ করবে। এ মত অবস্থাতে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এই বুঝি ঘরে পানি উঠলো।

এ বিষয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় ভবদহের অব্যাবস্থাপনার কারণে আমাদের এ পরিণতি। ভবদগ গেটে বাঁধ প্রদান করে সেচের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করার চেষ্টায় আরো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি আমরা। ওই টুকু সেচে কি ভাবে এত বড় জলাবদ্ধতার সমাধান হবে আমাদের বুজে আসে না। বলছিলেন ভবদহ পাড়ের মানুষ।

এ বিষয়ে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিৎ বাওয়ালী জানান, কিসের পাম্ব সেচ, এটাতো লোক দেখানো মাত্র, ২৭ বিলের পানি কি আর সেচের মাধ্যমে সমাধান হয়? দরকার টি আর এম প্রকল্প চালু করা। তা হলেই মিলতে পারে মুক্তি। অন্যথায় জলা ভুমিতে পরিণত হবে ভবদহ অঞ্চল।

Check Also

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সচিবালয় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।