আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা : জলমগ্ন জমিতে ধান চাষ করে ঈর্ষনীয় সাফল্য পেয়েছে সাতক্ষীরার আউশ চাষিরা। আকাশ ভাল থাকায় চাষিদের ঘরে যেন আউশের সূর্য উঠতে শুরু করেছে। কাটতে শুরু করেছে আশ্বিনের আকাল। গত কয়েক বছরে জেলায় আউশ চাষে মাইল ফলক রেখে চলেছে এখানকার চাষিরা। খাদ্য সংকট কাটাতে কৃষকের ঘামঝরা পরিশ্রম আর সরকারের দেয়া কৃষি প্রণোদনা আউশ চাষে নবদিগন্তের দ্বার উন্মোচন হয়েছে। যদিও বেঁড়ি বাঁধ ভাঙ্গন, জলাবদ্ধতা,কৃষি পণ্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ নানা সমসায় জর্জরিত এখানকার কৃষকরা। জেলার বেশির ভাগ এলাকায় আউশ ধান ঘরে তুলে ব্যস্থ সময় পার করছে চষিরা। অন্য যে কোন বছরের তুলনায় এ বছর আউশের আবাদ বেশি হয়েছে দাবী জেলা কৃষি খামার বাড়ির।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতে চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে ৮ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধান চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৫৮০ হেক্টর, কলারোয়ায় ২ হাজার ৩১৫ হেক্টর, তালায় ১ হাজার ২৭০ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৫০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৩৮০ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪০ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলাতে ২৫০ হেক্টর।
চলতি মৌসুমে জেলাতে ২২ হাজার ৬৪২ মে.টন আউশ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রি নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে সদরে ৯৭৮১ মে.টন, কলারোয়ায় ৬৩৭৮ মে.টন, তালায় ৩৪৪২ মে.টন, দেবহাটায় ১০০৬ মে.টন, কালিগঞ্জে ১০০০ মে.টন, আশাশুনিতে ৩৭৪ মে.টন ও শ্যামনগরে ৬৬১ মে.টন ধান উৎপাদন হয়।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন কয়েক বছরে আউশের আবাদ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। কারণ আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার আপলিফট করা লাগছে না। সুতরাং বোরোর তুলনায় আউশের উৎপাদন খরচ অনেক কম। তবে কৃষকরা বলছেন মজুদদারি সিন্ডিকেট ভেঙে সরকার নিজস্ব প্রভাব বলয় গড়ে তুলতে না পারলে এই সাফল্য কৃষকের উপকারে আসবে না। আউশের সংযুক্তিতে ধানের দুই ফসলি জমিগুলো তিন ফসলিতে উন্নীত হওয়ায় বদলে যাচ্ছে এ অঞ্চলের ফসল-বিন্যাস।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতে চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে দুই হাজার আউশ চাষিকে জনপ্রতি ৫ কেজি বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও এমওপি ১০ কেজি প্রদান করা হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৫৫০ জন , কলারোয়ায় ৪৮০ জন, তালায় ৪৫০ জন, দেবহাটায় ১৩৯ জন, কালিগঞ্জে ১৫০ জন, আশাশুনিতে ১১০ জন ও শ্যামনগর উপজেলাতে ১৩০ জন চাষীকে প্রণোদনা দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা জেলায় ক্রমাগত আউশ ধানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ১০ বছরে আউশ আবাদ বেড়েছে দ্বিগুণ। ২০১০-১১ সালে জেলায় আউশ আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার হেক্টর জমিতে, চলতি বছর ২০২০-২১ সালে আবাদ হয়েছে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে।
সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের কুন্দুড়িয়া গ্রামের ভ্যানচালক মফিজুল ইসলামের স্ত্রী ফিরোজা বেগম। তিনি চলতি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা পেয়ে সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে আউশ চাষ করে। ফলন ও দাম দুটই ভাল পেয়েছে। তিনি বলেন এতে তার খরচ বাদে ভাল টাকা লাভ লাকবে।
বুধহাটা অঞ্চলের কৃষি উপসহকারী কৃষিকর্মকতা জাহিদুল ইসলাম জানান, গত কয়েক বছরে আশাশুনিতে জনপ্রিয়তা পেয়েছে আউশের আবাদ। এ বছর বোরো মৌসুমে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় আউশের বাড়তি আবাদ করেছেন কৃষকেরা। আউশের বাম্পার ফলন ও পেয়েছে চাষিরা। তিনি আরো জানান সরকারের দেয়া কৃষি প্রণোদনার কারণে চাষীরা আউশ চাষে আগ্রহী হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় আউশ ধানের ফলন ভালো হয়েছে। তিনি আরো জানান, ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার বীজ, সার, সেচসহ কৃষি উপকরণে বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়ায় জেলায় আউশের আবাদ বেড়েছে। সেই সাথে কৃষি বিজ্ঞানীরা অনেকগুলো উচ্চফলনশীল জাতের উদ্ভাবন করেছে, যেগুলো চাষের ফলে গড় ফলনও বেড়েছে । তিনি বলেন ‘আজকের ক্রপ কাটিং দেখা যাচ্ছে প্রতি বিঘা জমিতে এখন ১৮-১৯ মণ ধান হচ্ছে। অথচ এক সময় আউশ উৎপাদন বিঘা প্রতি ছিল মাত্র ২-৩ মণের মতো।’
এদেশের কৃষিপণ্যকে ইউরোপ-আমেরিকাসহ উন্নত দেশের বাজারে রপ্তানি করতে পারলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব । সেজন্য অ্যাগ্রো প্রসেসিং সেন্টার করার দাবী সংশ্লিষ্টদের। যাতে করে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী দেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি করা যায়।