আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: টানা বর্ষণ ও উপকূল রক্ষার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাতক্ষীরা জেলার নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সর্বস্বান্ত হয়েছে উপকূলবাসী। একটি আঘাতের রেশ কাটতে না কাটতেই প্রকৃতির আরেকটি আঘাত। এভাবেই সবকিছু হারিয়ে এখন নিঃস্ব সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষ।
প্রাকৃৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই এসব মানুষের। আইলা থেকে আম্ফান সব দুর্যোগেই ভেঙেছে উপকূল রক্ষার বেড়িবাঁধ। ভেসে গেছে মাছের ঘের, ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। নিরুপায় হয়ে বসতভিটা ছাড়ছেন অনেক উপকূলের বাসিন্দা।২০০৯ সালের ২৫ মে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ আইলায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় সাতক্ষীরার উপকূলীয় জনপদ। ২৮ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এলাকা। নিহত হয় শিশুসহ ৭৩ জন নারী-পুরুষ। এর মধ্যে ৫৩ জন মারা যায় শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে। বাকি ২০ জন পার্শ্ববর্তী পদ্মপুকুর ইউনিয়নের বাসিন্দা।১৯৮৮ সালের ভয়ঙ্কর ঝড়ের পর আইলা সব থেকে বিধ্বংসী হয়ে সাতক্ষীরা উপকূলে আঘাত হানে। এরপর ২০১৯ সালের ৪ মে ফনি, ওই বছরের ১০ নভেম্বর বুলবুল ও সবশেষ ২০২০ সালের ২০ মে আম্ফান আঘাত হানে। ফনি ও বুলবুলের প্রভাবে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি না হলেও আম্ফানে আবারও তছনছ হয়ে যায় উপকূল। এর পর থেকে আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারিনি উপকূলের কয়েক লক্ষ মানুষ। গত দুদিনের টানা বৃষ্টিতে নাস্তানাবুদ হয়ে গেছে সেইসব জনপদ।
শ্যামনগর, কালীগঞ্জ, আশাশুনি ও সদর উপজেলায় ২৩টি স্থানে ৩১ কিলোমিটার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যে ৫০টি গ্রাম ভেসে যায় তারা এখনো বাস্তুভিটায় ফিরতে পরিনি। অতিবৃষ্টি ও প্রবল জোয়ারের তোড়ে আবারও জোড়াতালি দিয়ে দেয়া রিং বাঁধ পুনরায় ভেঙে আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা, প্রতাপনগর ও আশাশুনি সদরের ৪১টি গ্রাম এখনো পানির মধ্যে হাবুডুবু খাচেছ। দিশেহারা হয়ে পড়েছে এসব এলাকার লক্ষাধিক মানুষ। কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদী এখন উপকূলীয় এ অঞ্চলের মানুষদের কাছে অভিশাপে পরিণত হয়েছে।
শ্যামনগর উপজেলার দক্ষিণের শেষ ইউনিয়ন গাবুরা ও আশাশুনির প্রতাপনগর । এদেরকে দ্বীপ ইউনিয়নও বলা হয়। এই জনপদের মানুষ গুলো চলতি বর্ষায় চরম দুভোর্গে পড়েছে। গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, একের পর এক প্রাকৃতিক দূর্যোগে দিশেহারা মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অনেকেই হারিয়েছে বসতভিটা।তিনি বলেন, এলাকায় এখন কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই, খাবার পানির সংকট। জীবিকার তাগিদে এলাকার হাজারো মানুষ এলাকা ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছেন। উপকূলীয় বাঁধ ভাঙন যদি স্থায়ীভাবে রোধ করা যায় তবেই এ জনপদ আগামী দিনে বসবাসের উপযোগী হবে। ‘এলাকায় কোনো রাস্তাঘাট ভালো নেই, মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মানুষের ক্ষয়ক্ষতি বন্ধে স্থায়ী সমাধান দরকার। আর সেটি করতে হলে একমাত্র উপায় টেকসই বাঁধ নির্মাণ। আমরা ত্রাণ চাই না, উপকূল রক্ষা টেকসই বাঁধ চাই।’আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাত বছর পার হয়েছে। এখনো ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ হয়নি। ৯টি ওয়ার্ডে নদীর জোয়ারের পানি উঠানামা করছে। কিছু মানুষ এলাকা থেকে বিভিন্ন জায়গায় চলে গেছে।
অন্যদিকে কুড়িকাউনিয়া এলাকায় ৫০০ মিটার বাঁধ আজও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। আম্ফান ও তারপর নদীর জোয়ারের তোড়ে এসব বাঁধ ভেঙে যায়। চাকলা পয়েন্টে দুই কিলোমিটার বাঁধও ভাঙনের মুখে রয়েছে।সূত্র জানায় সাতক্ষীরা জেলায় উপকূল জুড়ে রয়েছে প্রায় ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জেলায় দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড-২।সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ (কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলা) আবুল খায়ের জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর আওতায় উপকূলীয় এলাকায় ৩৮০ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৪ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্থায়ী বাঁধ সংস্কারের জন্যও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে স্থায়ী সমাধান হবে। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-২ (আশাশুনি) সুধাংশু সরকার বলেন, আম্ফান পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর আওতাধীন ২৮৪টি পয়েন্টে ৮৩.৮২৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বর্তমানে ৮২টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে ২০.১৪৮ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে।
সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক ও উপপরিচালক স্থানীয় সরকার) বলেন, সাতক্ষীরা একটি দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত প্রথমে পড়ে এ জেলার উপকূলীয় এলাকায়। ভাঙন কবলিত বাঁধ রক্ষার জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
Check Also
আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …