সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের ধলবাড়িয়ায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৬০ লক্ষাধিক টাকা অনিয়মের অভিযোগ

আবু সাইদ,সাতক্ষীরা: ভাতাভোগী ১৯৭ জনের তথ্য গোপন করে প্রায় ৬০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। ভাতাভোগী মৃত ব্যক্তিদের বিপরীতে ভুয়া নমিনি দেখিয়ে এ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকতার যোগসাজশে ভাতাভোগীদের এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান। সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রতেœশ্বরপুর গ্রামের ভাতা ভোগী মৃত জেলেখা বিবির পরিবারের সাথে কথা তারা জানান, তিনি ২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন করেছেন। কিন্তু তারা মৃত্যুর পর কোন টাকা উত্তোলন করেননি। কিন্তু বহি নং ১৫৮ হি: নং ৫৭১৬৯৯ বইতে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির ২ তারিখে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টাকা উত্তোলণ করা হয়েছে। ২নং ওয়ার্ডের কাশিমপুর গ্রামের সন্তোষ মন্ডল দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর পূর্বে ভারতে চলে গেলেও ভাতা ভোগীর তালিকায় তার নাম ৫৫নং ক্রমিক লিপিবদ্ধ রয়েছে। যার বই নং ৫০২ হি: নং ৫৮২১৯ এদিকে বয়স্কভাতার তালিকাভুক্ত করে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তার নামে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। সরেজমিনে উক্ত সন্তোষ মন্ডলের বাড়িতে গেলে তার পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা জানান, তিনি কমপক্ষে ৩০ বছর আগেই ভারতে চলে গেছে। ধলবাড়িয়া গ্রামের হারান ঘোষ বিগত ০৮-০২-২০১৮ তারিখে মৃত্যুর পর তার বইটি এটি গাড়িতে এসে নিয়ে যায়। কিন্তু ফেরত দেয়নি বলে তার পরিবার থেকে জানান উক্ত মৃত হারাণ ঘোষের মৃত্যুর পর ও তার টাকা উত্তোলণ করা হলেও তার পরিবার বিষয়টি জানানে না। গোবিন্দপুর গ্রামের জুলেখা বিবি তিনি মৃত্যুবরণ করেন ২০১৬ সালে কিন্তু বই নং ৭৫ হি: নং ৭৬১১২ হিসাবে ২০১৯ সালের ডিস্বেম্বর পর্যন্ত তার টাকা উত্তোলণ করলেও তার পরিবার বিষয়টি জানেনা বলে তার পরিবার জানান। গণেশপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনছার আলী গাজীসহ অধশতাধিক সরকারি ভাতাভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনছার আলী জানান, তাঁর মা সফুরা বিবি (বই নং-২৩৬, ব্যাংক হিসাব নং-৫৬৮৮৮) পাঁচ বছর আগে মারা যান। মারা যাওয়ার পর ইউপি চেয়ারম্যান গাজী শওকত হোসেন গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে বয়স্ক ভাতার কার্ডটি নিয়ে যান। এর পর থেকে তিনি প্রতি মাসে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে ভুয়া নমিনি দেখিয়ে ভাতার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে আসছেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ইউপি চেয়ারম্যান বাড়াবাড়ি না করার জন্য তাঁকে হুমকি দেন। ইউনিয়নের রঘুরামপুর গ্রামের নমিতা রাণী ২০১৬ সালে মৃত্যুবরণ করেছেন মর্মে চেয়ারম্যান মৃত্যুসনদ প্রদান করেছেন কিন্তু উক্ত ব্যক্তি নামেও ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত টাকা উত্তোলণ করা হয়েছে। আহম্মদ গাজী, নুর ইসলাম, আয়নাল গাজীসহ অনেকে জানান, ভাতাভোগী অসহায় বয়স্ক বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তারা মারা যাওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার এক সপ্তাহের মধ্যেই ভাতার কার্ড নিয়ে যান। পরে তাঁরা সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে নিয়মিত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে আসছেন। বিষয়টি জানার পর প্রতিবাদ করতে গেলে চেয়ারম্যানের লোকজন বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধামকি দেন। ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ওয়ার্ডেই ১৫ থেকে ২৫ জন করে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও বয়স্ক ভাতার টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নেওয়া হচ্ছে। অথচ ওই ব্যক্তিরা তিন থেকে পাঁচ বছর আগে মারা গেছেন। তাঁদের নামের বিপরীতে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সুপারিশে ইউপি চেয়ারম্যান এসব টাকা উত্তোলন করে আসছেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই ও ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী যুব লীগের সভাপতি মো: আমিনুর রহমান জানান, ভাতাভোগীদের কেউ মারা গেলে সেই ওয়ার্ডের অন্য কোনো ব্যক্তির নাম নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করার নিয়ম থাকলেও চেয়ারম্যান তা না করে মৃত ব্যক্তির নমিনি সাজিয়ে সমাজসেবা কার্যালয়ে সুপারিশ করেন। মাসের পর মাস এমন ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া সরকারি ভাতা পাওয়ার জন্য ইউনিয়নের প্রায় ২ শতাধিক গরিব ও অসহায় মানুষ চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করলেও কিন্তু সেসব আবেদন জমা দেওয়া হয়নি সে সময়। ধলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সজল মুখার্জী জানান, ইউনিয়নের ১৯৭ জন মৃত ব্যক্তির নামে ভাতার টাকা ওঠানো হচ্ছে। তিনি ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান গাজী শওকত হোসেন সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এবিষয়ে কালিগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি এখন মিটিংয়ে আছি আপনি অফিসে আসেন, একসময় দেখা করেন। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখব, অসহায় বয়স্ক বিধবা ভাতার টাকা কেউ আত্মসাৎ করলে আমরা তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ আইগত সকল ব্যবস্থা নিব

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।