- উখিয়া (কক্সবাজার)
রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহ আততায়ীদের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনায় কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে অস্থিরতা থামছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। এরপরও থেমে নেই রোহিঙ্গাদের নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, আধিপত্য বিস্তার, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও গুলাগুলিতে খুন। এর পেছনে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে জানা গেছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প সূত্র নিশ্চিত করেছে শুক্রবার ভোরে ক্যাম্পের একটি মাদরাসায় হামলা ও গুলির পেছনে ওই একই কারণ রয়েছে। এ দিকে শুক্রবারের হামলা ও গুলিতে নিহত সাতজন রোহিঙ্গাই মাদসারার ছাত্র ও শিক্ষক।
সূত্র বলছে, প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে থাকা ক্যাম্পে ফের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ভোরে। এ সময় হামলাকারীদের গুলিতে মাদরাসার সাত ছাত্র-শিক্ষক নিহত হন। আহত হয়েছেন আরো কয়েকজন। উখিয়ার ১৮ নম্বর ক্যাম্পে একটি মাদরাসায় এ হামলা ও হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১২, ব্লক-জে-৫-এর বাসিন্দা ও মাদরাসা শিক্ষক হাফেজ মো: ইদ্রীস (৩২), ক্যাম্প-৯ ব্লক-১৯-এর মৃত মুফতি হাবিবুল্লাহর ছেলে ইব্রাহীম হোসেন (২৪), ক্যাম্প-১৮, ব্লক-এইচ-৫২-এর নুরুল ইসলামের ছেলে মাদরাসাছাত্র আজিজুল হক (২২), একই ক্যাম্পের ভলান্টিয়ার আবুল হোসেনের ছেলে মো: আমীন (৩২)।
এ ছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ‘এফডিএমএন’ ক্যাম্প-১৮, ব্লক-এফ-২২-এর মোহাম্মদ নবীর ছেলে মাদরাসা শিক্ষক নূর আলম ওরফে হালিম (৪৫), এফডিএমএন ক্যাম্প-২৪-এর রহিম উল্লাহর ছেলে মাদরাসা শিক্ষক হামিদুল্লাহ (৫৫) ও ক্যাম্প-১৮, ব্লক- এইচ-৫২-এর নূর মোহাম্মদের ছেলে ও মাদরাছাত্র নূর কায়সার (১৫)।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ৮ আর্মাড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার শিহাব কায়সার জানান, শুক্রবার ভোরে উখিয়া বালুখালী ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে গোলাগুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে চার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছে আরো ১০-১২ জন রোহিঙ্গা। তিনি আরো জানান, শুক্রবার ভোরে ‘এফডিএমএন’ ক্যাম্প-১৮ এইচ-৫২ ব্লকে অবস্থিত ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদরাসায় রোহিঙ্গা দুষ্কৃতিকারীরা হামলা চালায়। হামলায় মাদরাসায় অবস্থানরত চারজন এফডিএমএন সদস্য নিহত হন।
তিনি আরো জানান, খবর পেয়ে ময়নারঘোনা পুলিশ ক্যাম্প-১২-এর পুলিশ সদস্যরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো তিনজন মারা যান।
এ সময় পুলিশ হামলাকারীদের একজনকে একটি দেশীয় লোডেড ওয়ান শুটারগান, ৬ রাউন্ড গুলি ও একটি ছুরিসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
ঘটনার পরপরই ময়নারঘোনা পুলিশ ক্যাম্প-১২-এর পুলিশ সদস্যরা ‘মদুতুল উম্মা’ মাদরাসা ও আশপাশের এলাকায় ব্লকরেইড পরিচালনা করে আসছে। অন্যান্য ক্যাম্প এলাকায়ও একইসাথে ব্লক রেইড পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা শিহাব কায়সার।
এ দিকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে সাতজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।
তবে কী কারণে এ মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর এই হামলা তা তাৎক্ষণিক নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ বলছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।