সুদানের সভরেইন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও দেশটির সামরিক বাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল-বুরহান সুদানে জরুরি অব্স্থা জারি করেছেন। একইসাথে ক্ষমতাসীন সরকারকে বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
সোমবার এক টেলিভিশন ভাষণে এই ঘোষণা দেন তিনি।
ভাষণে তিনি বলেন, ২০১৯ সালের সমঝোতা অনুযায়ী সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্বের সমন্বয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে বিভিন্ন বিষয়েই বিবাদ চলছে যা শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে।
তিনি বলেন, সংবিধানে ঘোষিত রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার সংরক্ষণের প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
একইসাথে সুদানে ক্ষমতাসীন থাকা সামরিক ও বেসামরিক নেতৃত্বের অংশীদারভিত্তিক সভরেইন কাউন্সিলের বিলুপ্তির ঘোষণা দেন তিনি।
জেনারেল আবদুল ফাত্তাহ আল-বুরহান আরো জানান, ২০২৩ সালের জুলাইয়ে সুদানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
অপরদিকে সুদানের প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ হামদুকের দফতর থেকে এক বিবৃতিতে বিক্ষোভকারীদের সড়ক দখল করার আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘আমরা সুদানের জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের মাধ্যমে চোরদের কাছ থেকে অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ হামদুককে গ্রেফতার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গিয়েছে সামরিক বাহিনী। সুদানের সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের পক্ষে বিবৃতি দিতে অস্বীকার করার কারণে তাকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে সুদানের তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
এর আগে সোমবার আবদুল্লাহ হামদুককে গৃহবন্দী করে সুদানের সামরিক বাহিনী। এছাড়া দেশটির শিল্পমন্ত্রী ইবরাহিম আল-শেখ, তথ্যমন্ত্রী হামজা বালুল ও যোগাযোগমন্ত্রী হাশেম হাসিব আল-রাসুলসহ অন্তর্বর্তী সরকারের বিপুল বেসামরিক নেতৃত্বকে গ্রেফতার করা হয়।
সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে সুদানের রাজধানী খার্তুমের রাস্তায় বিক্ষোভে নেমেছে সাধারণ মানুষ। খার্তুমের বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে তারা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদ করছে।
সুদানিস ডক্টরস কমিটি এক ফেসবুক বার্তায় জানিয়েছে, খার্তুমে অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে চলা বিক্ষোভে সংঘর্ষে অন্তত ১২ ব্যক্তি আহত হয়েছে।
এদিকে খার্তুম থেকে আলজাজিরার প্রতিনিধি হিবা মরগান জানান, সুদানে টেলিযোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগাযোগ করাই কঠিন হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘সামরিক বাহিনী খার্তুম অভিমুখি সব সড়ক ও সেতু যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা সৈন্যদের রাস্তা আঁটকে রাখতে দেখি এবং তারা আমাদের জানায়, প্রাপ্ত নির্দেশ অনুসারেই তারা কাজ করছে।’
এর আগে গত মাসে সুদানে এক সামরিক অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়। ২০১৯ সালে সুদানের সাধারণ জনতার বিক্ষোভের জের ধরে সামরিক বাহিনী দেশটির দীর্ঘকালীন শাসক ওমর আল-বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করে।
তখন থেকে সামরিক ও বেসামরিক যৌথ নেতৃত্বের অন্তর্বর্তীকালীন সভরেইন কাউন্সিল সুদানের শাসন পরিচালনা করে আসছিলো। ২০২৩ সালে দেশটির সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
সূত্র : আলজাজিরা