আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: অনাবাদি জমিতে শীতের আগাম সবজি চাষ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে সাতক্ষীরার সবজি চাষিরা। মাঠের পর মাঠ জুড়ে আগাম জাতের ওলকপি,ফুলকপি,বাঁধাকপি টমেটোসহ হরেক রকমের সবজিতে দোল খাচ্ছে কৃষকের মাঠ। এসব সজবি পরিচর্যায় কৃষাণ কৃষাণিরা ব্যস্ত সময় পার করছে। ইত্যো মধ্যে বাজারেও উঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের এসব সবজি। দামও বেশ ভাল পাচ্ছে চাষিরা। নতুন জাতের এসব সবজি বাজারে সাড়া ফেলে দিয়েছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে সবজির উৎপাদন। দেশে গত এক যুগে বাংলাদেশে সবজিতে যে বিপ্লব ঘটে গেছে তার মূলেই রয়েছে এখানকার সবজি চাষিরা। এখানকার চাষির সবজি উৎপাদনে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। সঠিক নিয়মে সবজি সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ করতে পারলে চাষিদের পাশাপাশি সবল হবে জাতীয় অর্থনীতি।
জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। একসময় দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোরেই কেবল সবজির চাষ হতো। এখন দেশের প্রায় সব এলাকায় সারা বছরই সবজির চাষ হচ্ছে। এখন দেশে ৬০ ধরনের ও ২০০টি জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার রয়েছে কমবেশি সবজি চাষ করেন।
জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার স্ট্যাটিসটিক্যাল ইয়ারবুক- অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি হারে সবজির আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে বাংলাদেশে, বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ। পাশাপাশি একই সময়ে সবজির মোট উৎপাদন বৃদ্ধির বার্ষিক হারের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাবে ১৯৯৪ সালে দেশে মাথাপিছু দৈনিক সবজি খাওয়া বা ভোগের পরিমাণ ছিল ৪২ গ্রাম। বর্তমানে যার পরিমাণ বেড়ে দাড়িয়েছে ৭০ গ্রাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিদিন একজন সুস্থ সবল মানুষের ২২০ গ্রাম সবজি গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু দেশে মাথাপিছু সবজি সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে তার পরিমাণ অনেক কম।সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর সবজির অপচয় রোধ, চাষাবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নিজেদের সবজি খাওয়ার অভ্যাস বাড়ানোর দরকার। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দেশে প্রায় শতকরা ৩৫ ভাগ সবজি বিভিন্নভাবে অপচয় হয়ে থাকে। এছাড়া সবজির ব্যবহারও খুব সীমিত। ফলে সবজি গ্রহণে আমরা একেবারেই পিছিয়ে আছি।অনেক বেশি সবজি উৎপাদন করলাম, কিন্তু তা খেতে পারলাম না। তাহলে এই সফলতা দিয়ে কী হবে!
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়নের মাহমুদপুর গ্রামের মাওলা বক্সের ছেলে জাকির হোসেন জানান, এবছর সে ৬ বিঘা জমিতে আগাম জাতের সবজির চাষ করেছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে কয়েক লক্ষ টাকার সবজি বিক্রি করতে পারবে সে। এতে সে ভাল লাভ পাওয়ার আশা করছে।
জেলা কৃষিখামার বাড়ি সূত্র জানায়, চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে জেলাতে জেলাতে ৭ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক ভাবে গ্রীষ্ম কালিন সবজির চাষ হয়েছে। ২০২০-২১ শীত কালিন মৌসুমে জেলাতে ৯ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ২ হাজার ২শ হেক্টও,কলারোয়াতে ১ হাজার ৭৫০শ হেক্টর, তালাতে ১ হাজার ৬৮০ হেক্টর, দেবহাটাতে ৫১০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ২ হাজার হেক্টর, আশাশুনিতে ৬৩০ হেক্টর, এবং শ্যামনগরে ৭শ ৩০ হেক্টর জমিতে শীতকালিন সবজির আবাদ হয়েছে। যদিও ২০১৭-১৮ মৌসুমে জেলাতে ৯ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে শীত কালিন শাক সবজির আবাদ হয়ে ছিল। ফলে চলতি মৌসুমে আবাদ কমেছে।
কৃষকরা মনে করেন, সুস্থ সবল বীজ আর যতেœ জেলায় সব ধরনের মাটিতেই নানা রকম সবজি ফলানো সম্ভব হয়। গবেষণা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন নতুন উদ্ভাবিত জাতের সবজি কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে সবজির চাষের পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে।
শীতকালীন সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি। বেশি বেশি সবজি খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশে দূর করে। রক্তে কোলেস্টরোলের মাত্রা কমায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে পাকস্থলীর শক্তি বাড়ায়। লিউকোরিয়াসহ মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে, শিশুদের অপুষ্টি দূর করে এবং পুষ্টি প্রদান করে থাকে।
সাতক্ষীরা জেলাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নুুরুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম জাতের শাকসবজির ভালো উৎপাদন হয়েছে। আগাম জাতের শাকসবজি বাজারে উঠতে শুরু করেছে। ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছে চাষীরা।
Check Also
সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান
নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। …