নিত্যপণ্যের বাজার লাগামহীন। বেড়েই চলেছে নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম। তেল, চিনি, চাল-ডালের দাম বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে গোশতের দামও। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে অক্টোবরে কয়েক দফায় বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। এতে স্বাভাবিকভাবেই মধ্যবিত্তসহ নি¤œ আয়ের মানুষের ওপর চাপ বেড়েছে। খেটে খাওয়া মানুষের নভিশ্বাস উঠছে। সয়াবিন তেলের খুচরা মূল্য ১৫০-১৬০ টাকা। আলু-পেয়াজের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আসলেও সবজির দাম এখনো চড়া। কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতকালিন সবজি না আসা পর্যন্ত সবজির দাম কমার সম্ভাবনা কম। তাছাড়া সাম্প্রতিক অতি বৃষ্টিতে বহু সবজির ফসল নষ্ট হয়েছে। যার ফলে দাম বাড়ছে দিন দিন। কিন্তু আমদানি নির্ভর পণ্যের দাম বাড়ায় অস্বস্তিতে সাধারণ মানুষ। বাজারে মোটা চালের দামও নিয়ন্ত্রনের বাইরে। ৫০-৫৫টাকায় বিক্রি হচ্ছে মোটা চাল।
নিত্যপণ্যের দাম ওঠা-নামা করবে, এটা বাজার অর্থনীতির নিয়ম। এটা ঠিক। কিন্তু আমাদের দেশে পণ্যের দাম বাড়া বা কমা সাধারণ বাজারনীতিও মানে না। এর কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে, আমাদের দেশে বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেও সু-সংগঠিত নয়। এ সুযোগে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বাজারে কৃত্রিম মূল্য বৃদ্ধি করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাহলে, প্রশ্ন উঠতে পারে, বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর কাজ কী? তারা কি ঠিকঠাক মতো নজরদারি করছেন? পণ্য যৌক্তিক দামে বিক্রি না হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি? তদারকি আদৌ ঠিকমতো হচ্ছে না বলে ধারণা সাধারণ ক্রেতাদের।
দেশে করোনায় প্রাণহানির ভয় এখন অনেকটাই কমে গেছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে অর্থনীতি। ঝিমিয়ে পড়া মানুষ জেগে উঠেছে, বেড়েছে কর্মব্যস্ততা। গণহারে টিকা নিচ্ছেন, ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলছে পুরোদমে। করোনার দীর্ঘ ঘাত-প্রতিঘাতের পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে এরই মধ্যে চিড়ে-চ্যাপটা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। চলমান সমম্যা অনুধাবন করে সরকার আমদানি শুল্ক হ্রাস করলেও কাজে আসছে না কিছুই। বরং উল্টো পথে হাটছে বাজার অর্থনীতি। দেশে উৎপাদন বেড়েছে আগের চেয়ে বহুগুনে। কিন্তু, সিন্ডিকেট বাণিজ্য ও পর্যাপ্ত তদারকির অভাবে বছরে কয়েক দফায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা হলো, পর্যাপ্ত উৎপাদন বৃদ্ধি, প্রয়োজনীয় আমদানি ও অভ্যন্তরীণ স্বয়ম্ভরতা অর্জন করাই হলো দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার অন্যতম উপায়।
দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মানুষ অস্বস্তিতে রয়েছে। কাজেই বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাছাড়া পরিবেশ ও আবহাওয়া উপযোগী নতুন জাতের ধান, গম, ডাল ও তৈলজাত ফসল উদ্ভাবন ও তা সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশীয় চাহিদার ঘাটতি মেটানো সম্ভব। এরফলে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখাও সহজ হবে। এছাড়া কৃষি ও কৃষকদের কল্যাণে উপকরণ ও নগদ সহায়তা বাড়াতে হবে। তাহলে হ্রাস পাবে আমদানি। ন্যায্য মূল্যে ক্রয় করতে সক্ষম হবেন দেশের গরিব ভোক্তাগণ। এর জন্য একটি সমন্বিত কৃষি ও বাজার ব্যবস্থাপনা নীতি প্রনয়ন করা দরকার।
বিলাল মাহিনী
নির্বাহী সম্পাদক : ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, যশোর।