২০৫০ সালে বাংলাদেশের ৫৩ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হবে

বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের বড় শিকারে পরিণত হতে যাচ্ছে৷ বিশ্বব্যাংকের সূত্র অনুযায়ী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৫৩ লাখ মানুষ সরাসরি এর নেতিবাচক প্রভাবের স্বীকার হবে৷

    
Sundarbans Bangladesch Indien UNESCO Welterbe

বিশ্বব্যাংকের পরিবেশ অর্থনীতিবিদ সুস্মিতা দাসগুপ্ত বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক গবেষণা এবং তথ্য উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছেন যে এখনই গুরুত্ব না দিলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৫৩ লাখ মানুষ সরাসরি এর নেতিবাচক প্রভাবের স্বীকার হবে৷

বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় চার কোটি ৩২ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করেন৷ যা মোট জনসংখ্যার ৩০ ভাগ৷ আর আশঙ্কার বিষয় হল, এর মধ্যে চরম দরিদ্র দুই কোটি ৪৪ লাখ মানুষ তাদের মৌলিক প্রয়োজন খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পারে না৷ তবে এই সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে, যদি জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেয়া হয়৷ সত্যিকার অর্থে দারিদ্র্য দূর করতে হলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি প্রয়োজন৷

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, এবং বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দারিদ্র্যের হার বেশি৷ ১টি উপকূলীয় জেলায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১৮ লাখ৷

এই উপকূলীয় এলাকার সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের শিকার৷ বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে মাটি এবং পানি লবণাক্ত থাকে৷ এখানকার জীবনযাত্রাও দুর্ভোগপূর্ণ৷ পরিবারে কর্মক্ষম ব্যক্তিরা, যাদের অধিকাংশই পুরুষ, তারা প্রায়ই কাজের জন্য উপকূলীয় এলাকায় চলে যান৷ আর তাদের পরিবারে সদস্যরা, যারা তাদের পাঠানো অর্থের ওপর নির্ভরশীল, তাদের চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটানোর আশঙ্কা থাকে৷

উপকূলীয় এলাকায় বন্যা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততার এই দুর্ভোগ আরো বাড়বে বলে মনে করে ক্লাইমেট প্রোজেকশন অফ দ্য ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ এবং বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা৷ আর জলবায়ু পরিবর্তন উপকূলীয় এলাকার গরিব মানুষের জীবনধারণের জন্য চরম হুমকি৷ প্রধানত তাদের জমি না থাকা এবং দারিদ্র্যের কারণে তাদের জায়গা পরিবর্তনের সুযোগ কম৷

বিশ্বব্যাংকের পরিবেশ অর্থনীতবিদ সুস্মিতা দাসগুপ্ত বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন এবং ২০৫০ সালে তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে বিশ্বব্যাংকের গবেষণা প্রকল্পে কাজ করেছেন৷

আর সেই গবেষণায় দেখা গেছে ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে যাবে৷ এবং বাতাসের গতি এবং জমির ক্ষয় আরো ১০ ভাগ বেড়ে যাবে তীব্র জোয়ারের সময়৷ এর ফলে নতুন করে আরো শতকরা ৯ ভাগ মানুষ বিপদে পড়বেন৷ যা মোট হবে ২২ ভাগ৷

বাংলাদেশে বর্তমানে উপকূলীয় এলাকার ৪৩ লাখ মানুষ সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার৷ আর ২০৫০ সালে এই হতভাগ্য মানুষের সংখ্যা ৫৩ লাখে দাঁড়াবে৷

উপকূলীয় এলাকায় ৩ মিটার জলোচ্ছ্বাসে এখন ২০ লাখ মানুষ এর শিকার হয়৷ আর এর চেয়ে বেশি জলোচ্ছ্বাস হলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা আরো ৬০ ভাগ বেড়ে ৩২ লাখ হবে৷

বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৫ লাখ গরিব মানুষ – যাদের মধ্যে ১৪ লাখ চরম দরিদ্র – তারা লবণ পানির কারণে পানীয় জল ও শুকনা মৌসুমে চাষাবাদের জন্য পানি সংকটে আছে৷ আর পানির চরিত্রও পরিবর্তন হয়ে গেছে , বদলে গেছে পরিবেশ ও প্রাণ বৈচিত্র্য৷

২০৫০ সাল নাগাদ পানির এই লবণাক্ততা আরো বাড়বে৷ তখন ৫২ লাখ গরিব মানুষ এর নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হবে৷ যাদের মধ্যে ৩২ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র অবস্থার মধ্যে থাকবে৷

বাংলাদেশ এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে শীর্ষে রয়েছে৷ ২০৫০ সালে যে পরিস্থিতি হবে তা মোকাবিলায় এখনই সরকারের নীতি নির্ধারকদের কাজ শুরু করা উচিত৷

বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের এখনই এজন্য টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন৷

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।