মসজিদের দানবাক্সে ১২ বস্তা টাকা

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলে এবার ১২ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। শনিবার সকাল ৯টার দিকে মসজিদের আটটি দানবাক্স খুলে এসব টাকা পাওয়া যায়।

বিপুল পরিমাণ এই নগদ টাকা ছাড়াও দানবাক্স থেকে বিভিন্ন বিদেশী মুদ্রাসহ দান হিসেবে সোনা-রূপার গহনা পাওয়া গেছে। সকাল থেকে এসব টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও বিদেশী মুদ্রা গণনা শুরু হয়েছে। বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গণনা চলছিল।

গণনা সংশ্লিষ্টরা ধারণা দেন, এবার দানবাক্সে পাওয়া টাকার পরিমাণ তিন কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। সোনা, রূপা ও বিদেশী মুদ্রা মিলেও প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মতো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগে সর্বশেষ ১৯ জুন দানবাক্স খোলা হয়েছিল। তখন সর্বোচ্চ দুই কোটি ৩৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৯ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। সাধারণত তিন মাস পর পর পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা হয়। কিন্তু মহামারী করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে বিলম্বে দানবাক্স খোলা হচ্ছে। এবার ৪ মাস ১৭ দিন পর মসজিদের দানবাক্সগুলো খোলা হলো।

শনিবার সকাল ৯টার দিকে জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়। বাক্সগুলো থেকে টাকা বের করে প্রথমে বস্তায় রাখা হয়। এরপর শুরু হয় গণনার কাজ।

রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও কিশোরগঞ্জ করপোরেট শাখার প্রধান মো: রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ওই ব্যাংকের ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী টাকা গণনায় অংশ নেন। তাদেরকে টাকা ভাঁজ করে সহযোগিতা করছেন পাগলা মসজিদ অধীন মাদরাসার শতাধিক ছাত্র ও শিক্ষকরা।

পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা) গোলাম মোস্তফা টাকা গণনার কাজ দুপুরে এসে পরিদর্শন করেন।

কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানমের তত্ত্বাবধানে টাকা গণনার কাজ তদারকির দায়িত্বে আছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শফিকুল ইসলাম, শিহাবুল আরিফ, অর্ণব দত্ত ও মো: মাহমুদুল হাসান।

টাকা গণনার কাজ নিজ চোখে দেখতে শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ মসজিদে ছুটে যান এ দিন।

কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট ডেন্টাল সার্জন ডা: ফারুক আহমেদ বলছিলেন, ‘টাকার গণনার এই দৃশ্যকে রীতিমত এলাহী কাণ্ড বলা চলে।’

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা বলছেন, সকাল ৯টার দিকে প্রায় ২০০ মানুষ ১২টি বস্তায় পূর্ণ এসব মুদ্রা গণনা করতে শুরু করেন।

এসব টাকা গণনার কাজ শেষ করতে সন্ধ্যা পার হয়ে যেতে পারে বলে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

অর্থ গণনায় অংশ নিয়েছেন পাগলা মসজিদের অধীন এতিমখানার ১২০ জন ছাত্র, পাঁচজন শিক্ষক, ৫০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ও মসজিদ কমিটির ১০ জন সদস্য।

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ এসে পাগলা মসজিদে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও সোনা-রূপার গহনা দান করেন। এ ছাড়া গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করা হয়।

মানুষের ধারণা, খাস নিয়তে এই মসজিদে দান করলে মনের আশা পূর্ণ হয়। এজন্য দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে মানতের টাকা সোনা, রুপার গহনা দান করে থাকেন। অন্য ধর্মের মানুষেরাও এখানে দান করেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

টাকা গণনা কার্যক্রম তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানম জানান, পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খুলে এবার বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া গেছে। আমরা আশা করছি, এবার টাকার পরিমাণ তিন কোটি ছাড়িয়ে যাবে। বিদেশী মুদ্রা ও সোনা রূপার গহনাও পাওয়া গেছে প্রচুর। গণনা চলছে এখন।

কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে পাগলা মসজিদ অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছে বহু বছর আগে।

সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সাথে সাথে বেড়েছে এর খ্যাতি ও ঐতিহাসিক মূল্যও। অনেক বছর আগে মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে কিংবদন্তি আছে মসজিদটি গায়েবিভাবে নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি অত্যাধুনিক ধর্মীয় কমপ্লেক্স এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রসারিত হয়েছে মূল মসজিদ ভবনও।

দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে ‘পাগলা মসজিদ ও ইসলামী কমপ্লেক্স’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়েই কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদটিকে ঘিরে চলছে আরো ব্যাপক উন্নয়নকাজ। মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতেও অর্থ সাহায্য করা হয়।

মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীশ আলম নয়া দিগন্তকে বলেন, ১৯৯৭ সাল থেকে এই মসজিদটি ওয়াকফের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। তখন থেকে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে মসজিদের সিন্দুক খুলে টাকা গণনা শুরু হয়েছে।

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।