নির্বাচনে হারের পর গণধোলাই:সাতক্ষীরায় অসলে যুগের অবসান

ক্রাইমবাতা রিপোট:   সাতক্ষীরার বৈকারী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আসাদুজ্জামান অসলে। স্বর্ণ-মাদক-অস্ত্র চোরাচালান ও নারী পাচারের মাধ্যমে অঢেল অর্থসম্পদের মালিক বনে যাওয়া অসলে প্রভাব ও ক্ষমতা খাটিয়ে গতবার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে সেই পদ ধরে রাখতে পারেননি। এরই মধ্যে তাকে এবং তার ছেলেসহ ৮-১০ জনকে গ্রামবাসী খলিলনগর ভোটকেন্দ্রের সামনে পেয়ে পিটিয়ে আহত করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এদিকে আরেক অস্ত্র চোরাকারবারি জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম ভোমরা ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেছেন।

জানা যায়, সাতক্ষীরার বৈকারি সীমান্ত এলাকায় আসাদুজ্জামান অসলের একটি বড় চোরাচালান ও নারী পাচার সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেট সীমান্ত পথে প্রায়ই স্বর্ণ পাচার করে থাকে। কিছুদিন আগে দেড় কেজি স্বর্ণ ভারতে পাচারের সময় অসলের ভাই আতা বিজিবি সদস্যদের হাতে ধরা পড়ে। নারী পাচারের একটি বড় ঘটনায় সম্প্রতি অসলের সিন্ডিকেটের কয়েক সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। তাদের দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অসলে ও তার ছেলে ইনজামামুলকে ঢাকার গোয়েন্দা অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বিষয়টি কীভাবে নিষ্পত্তি হয় তা জানা যায়নি।

সূত্র জানায়, অসলের নারী পাচার সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঢাকা থেকে তরুণীদের নানাভাবে প্রলুব্ধ করে সীমান্তের কোনো বাড়িতে এনে রাখে। এরপর কোনো এক সময় ভারতে পাচার করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। সীমান্তজুড়ে রমরমা মাদক চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত অসলে সিন্ডিকেট।

সূত্র আরও জানায়, দুই দশক আগে বাংলাদেশ থেকে ভারতে সুপারি পাচারের মধ্য দিয়ে আসাদুজ্জামান অসলের চোরাচালান জগতে প্রবেশ। বৈকারি গ্রামের যে স্থানটিতে তার বাড়ি সেখান থেকে একটি ছোট্ট বাঁওড়ের ওপারেই ভারতের গাবোরডা গ্রাম। ওপারের বেড়ির রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে ওপারের মানুষের সঙ্গে সহজেই কথা বলা যায়।

২০১৩ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর আসাদুজ্জামান অসলে তার বাড়ির পাশে গড়ে তোলেন ভারতীয় গরুর খাটাল। প্রতিদিন শত শত ভারতীয় গরু পাচার হয়ে আসত এখানে। প্রতি গরুতে অসলে সিন্ডিকেটের লাভ আসত চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। এতে ফুলে-ফেঁপে ওঠেন আসাদুজ্জামান অসলে। বাইসাইকেল থেকে মোটরসাইকেল, পরে তিনি মালিক হন একাধিক দামি প্রাইভেট কার ও মাইক্রোর। সাতক্ষীরা শহরে জমি কিনে বানিয়েছেন বাড়িও।

আসাদুজ্জামান অসলের বিরুদ্ধে অস্ত্র চোরাকারবারের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা এক তালিকায় আসাদুজ্জামান অসলে ও ভোমরার সাবেক চেয়ারম্যান মো. শহিদুল ইসলামের নাম ছিল। সে সময় তারা বেশ কিছুদিন গা ঢাকা দিয়ে থাকেন। পরে তারা নিজ নিজ এলাকায় ফিরে আসেন।

সূত্র জানায়, প্রভাবশালী চেয়ারম্যান অসলে পুলিশ, রাজনীতিক এবং মিডিয়া কর্মীদের গোপনে নানাভাবে খুশি করে তার চোরাকারবার চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু নির্বাচনে হেরে যাওয়া এবং জনতার হাতে মার খেয়ে যে এমন অবস্থা হবে তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে আসাদুজ্জামান অসলে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছিল তার কোনোটিই প্রমাণিত হয়নি। জামায়াত প্রভাবিত এই এলাকার লোকজনই আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চলাচ্ছে। আমি বা আমার ছেলেরা চোরাকারবারি নই। আমাদের কোনো সিন্ডিকেটও নেই। আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসাবে রাজনীতি করি। ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। যুগান্তর।

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।