সাতক্ষীরায় ১৩ ইউনিয়নে নৌকায় ভোট পড়েছে প্রদত্ত ভোটের ৪ ভাগের একভাগ

অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষতার মধ্যে দিয়ে শেষ হওয়া সাতক্ষীরা সদরের উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের চাপেই এ ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অযোগ্যতার অভিযোগ এনে এটাকেও কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন অনেকেই।

এ নির্বাচনে ১৩ ইউনিয়নে প্রদত্ত দুই লাখ ৯ হাজার ৯২৫টি ভোটের মধ্যে নৌকার প্রার্থীরা পেয়েছেন ৫৯ হাজার ১৬২ ভোট। যা মোট প্রদত্ত ভোটের ৪ ভাগের একভাগ মাত্র। এ নির্বাচনে সদর উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে ৭৯ শতাংশ ভোট পড়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, বাঁশদহা ইউনিয়নে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১৪ হাজার ৫টি। এ ইউনিয়নে ৭৮.৭১ শতাংশ ভোট পড়েছে। বাঁশহাদ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: মফিজুর রহমান ৫ হাজার ১৩১ ভোট পেয়েছেন (বিজয়ী)। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো: নাজমুল হাসান (মোটরসাইকেল) পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৭০ ভোট।

কুশখালি ইউনিয়নে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১৫ হাজার ৩০৪টি। এ ইউনিয়নে ৭৯.৬৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। কুশখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: তাজউল ইসলাম ২ হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র (জামায়াত) প্রার্থী মুহাম্মদ আব্দুল গফফার (টেলিফোন) ৪ হাজার ৭২৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী ১ হাজার ৯৫১ ভোটে পরাজিত হয়েছে জামায়াতের প্রার্থীর কাছে।

বৈকারী ইউনিয়নে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১১ হাজার ৯৪৮টি। এ ইউনিয়নে ৭৫.৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। বৈকারী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান চেয়ারম্যান মো: আসাদুজ্জামান (নৌকা) ১ হাজার ১২৫ ভোট পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবু মো: মোস্তফা কামাল (মোটরসাইকেল) ১০ হাজার ২৯২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে ৯ হাজার ১৬৭ ভোটে পরাজিত হয়ে জামানত হারাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী অসলে।

ঘোনা ইউনিয়নে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১০ হাজার ৩৬৬টি। এ ইউনিয়নে ৭৮.৩৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। ঘোনা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান মো: ফজলুর রহমান (নৌকা) ২ হাজার ৬৫০ ভোট পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো: আব্দুল কাদের (মোটরসাইকেল) ৪ হাজার ৫৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী এক হাজার ৯৪৯ ভোটে পরাজিত হয়েছে।
শিবপুর ইউনিয়নে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১১ হাজার ৯৮০টি। এ ইউনিয়নে ৭৮.১৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। শিবপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী (নৌকা) ৩ হাজার ৮১৭ ভোট পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রাথী সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাাদক এসএম আবুল কালাম আজাদ (আনারস) ৭ হাজার ৪৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী ৩ হাজার ৬১৭ ভোটে পরাজিত হয়েছে।
ভোমরা ইউনিয়নে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১৭ হাজার ৪৮০টি। এ ইউনিয়নে ৮১.৫৯ শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোমরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম (নৌকা) ৪ হাজার ৭০৮ ভোট পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র (জাতীয় পার্টি) প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী (মোটরসাইকেল) ৬ হাজার ৫৭১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী এক হাজার ৮৬৩ ভোটে পরাজিত হয়েছে।
ধুলিহর ইউনিয়নে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১৬ হাজার ৪৮৮টি। এ ইউনিয়নে ৮২.৩৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। ধুলিহর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো: মিজানুর রহমান (নৌকা) ৭ হাজার ৯৩ ভোট পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো: মিজানুর রহমান চৌধুরী (আনারস) ৮ হাজার ২৫৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী এক হাজার ১৬৫ ভোটে পরাজিত হয়েছে।
ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১৫ হাজার ২২৪টি। এ ইউনিয়নে ৮২.৭৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো: আলাউদ্দীন (নৌকা) ৭ হাজার ২৩৫ ভোট পেয়েছেন (বিজয়ী)। তার নিকটতম প্রার্থী সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান মো: শহিদুল ইসলাম (আনারস) পেয়েছেন ৩ হাজার ৮৫৪ ভোট।
আগরদাড়ি ইউনিয়নে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ২৩ হাজার ৯৭৭টি। এ ইউনিয়নে ৭৮.২৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। আগরদাড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী সদর থানা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো: মঈনুল ইসলাম (নৌকা) ৩ হাজার ৮৮০ ভোট পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র (জামায়াত) মো: কবীর হোসেন (টেবিল ফ্যান) ৭ হাজার ৫৫০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী ৩ হাজার ৬৭০ ভোটে পরাজিত হয়েছেন জামায়াতের কাছে।
ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ২১ হাজার ৩৫৮টি। এ ইউনিয়নে ৭৫.০৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো: আজমল উদ্দীন (নৌকা) ১০ হাজার ৬১৬ ভোট পেয়েছেন (বিজয়ী)। তার নিকটতম প্রার্থী বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান মো: রফিকুল ইসলাম (মোটরসাইকেল) পেয়েছেন ৮ হাজার ৪৫৯ ভোট।
বল্লী ইউনিয়নে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১০ হাজার ৫৪৬টি। এ ইউনিয়নে ৭৮.৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। বল্লী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: বজলুর রহমান (নৌকা) ১ হাজার ৭৮৭ ভোট পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সদস্য এড. মো: মহিতুল ইসলাম (আনারস) ৪ হাজার ৫৫৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে। এখানে নৌকার প্রার্থী ২ হাজার ৭৬৭ ভোটে পরাজিত হয়েছে বিএনপির প্রার্থীর কাছে।
লাবসা ইউনিয়নে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ২০ হাজার ১৯৬টি। এ ইউনিয়নে ৭৫.০৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। লাবসা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী সদর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো: নজরুল ইসলাম (নৌকা) ৩ হাজার ৩৭৫ ভোট পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল আলিম (আনারস) ১৬ হাজার ৩৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী ১৩ হাজার ১২ ভোটে পরাজিত হয়েছেন স্বতন্ত্র (বিএনপি) প্রার্থীর কাছে।
ফিংড়ি ইউনিয়নে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ২১ হাজার ৫৩টি। এ ইউনিয়নে ৭৯.৫৪ শতাংশ ভোট পড়েছে। ফিংড়ি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান মো: সামছুর রহমান (নৌকা) ৪ হাজার ৯৫৮ ভোট পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে মো: লুৎফর রহমান (আনারস) ১০ হাজার ১৩৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী ৫ হাজার ১৭৯ ভোটে পরাজিত হয়েছে।

Check Also

গাড়িচাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মাসুদের মৃত্যু ‘হত্যাকাণ্ড’

প্রাইভেটকার চাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মুহতাসিম মাসুদের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বর্ণনা করে দায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ৬ দফা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।