বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মহানবী (সা.)-কে বিশ^জাহানের জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। আমরা তার উম্মত হিসেবে সৌভাগ্যবান ও গর্বিত। তাই দুনিয়ায় শান্তি ও আখিরাতে মুক্তিলাভ করতে হলে আল্লাহ নির্দেশিত ও রাসূল (সা.) অনুসৃত পথই আমাদের অনুসরণ করতে হবে। তিনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বনবী (সা.)-কে আদর্শ নেতা হিসেবে অনুসরণ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি গত ৫ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত মাহে রবিউল আউয়াল উপলক্ষে মাসব্যাপী সিরাতুন্নবী (সা.) অনুষ্ঠানের সমাপনী দিনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এই আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত মাহে রবিউল আউয়াল উপলক্ষে মাসব্যাপী সিরাত বিষয়ক ১০টি (ছাত্র-ছাত্রী, নারী-পুরুষ) মিলে মোট ৩২টি গ্রুপে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় ২০ হাজার প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। এ উপলক্ষে সিরাতুন্নবী (সা.) আলোচনা সভা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান-২০২১-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীরে জামায়াত এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ ও নূরুল ইসলাম বুলবুল, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক হারুনুর রশীদ খান, অধ্যাপক মাওলানা আজিজুর রহমান, মাওলানা মমতাজ উদ্দীন, এডভোকেট জসিম উদ্দীন সরকার, আব্দুর রহমান মুসা, ড. মাওলানা সামিউল হক ফারুকী, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ সানাউল্লাহ, কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ড. খলিলুর রহমান আল মাদানী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালাহউদ্দীন আইউবী ও সেক্রেটারি জেনারেল হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য কামরুল এসহান এমরুল, জহির উদ্দীন বাবর, ফখরুল ইসলাম, লস্কর মো. তসলিম, মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের ওলামা বিভাগের সভাপতি ড. মাওলানা হাবিবুর রহমান। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন সাবেক আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযমের জ্যেষ্ঠপুত্র মামুন আল আযমী, সাবেক আমীরে জামায়াত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর জ্যেষ্ঠপুত্র অধ্যাপক ড. নকীবুর রহমান, সাবেক আমীরে জামায়াত মরহুম মকবুল আহমাদের পুত্র ইঞ্জিনিয়ার ইসমাঈল হোসেন ও সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমাদ মাবরুর প্রমুখ। এতে দেশবরেণ্য ওলামা-মাশায়েখ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, লন্ডন, মালয়েশিয়া ও কাতারসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে আলোচকগণ অংশগ্রহণ করেন।
আলোচনা সভা শেষে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী প্রতিযোগীদের নাম ঘোষণা ও উপস্থিত বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন মহানগরী উত্তর আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। অনুপস্থিতদের পুরস্কার তাদের কাছে পৌঁছানো হবে বলে জানানো হয়। উল্লেখ্য, সিরাত বিষয়ক ১০টি প্রতিযোগিতা ছাত্র-ছাত্রী, পুরুষ-নারীসহ মোট ৩২টি গ্রুপে অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট ৩০ লাখ টাকা মূল্যমানের পুরস্কার বিতরণ করা হয়। হাফেজ ক্বারী আব্দুল্লাহ আল জাওয়াদের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা সভার সূচনা হয় এবং আলোচনার মাঝে মাঝে সাইমুম শিল্পিগোষ্ঠী, জাগরণ শিল্পিগোষ্ঠী, অনুপম শিল্পিগোষ্ঠী, সন্দীপন শিল্পিগোষ্ঠী ও সারগাম শিল্পিগোষ্ঠীর শিল্পীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে পুরো অনুষ্ঠান হৃদয়গ্রাহী ও প্রাণবন্ত করে তোলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দীন বিজয়ী করতে মানুষকে খলিফার দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। নবী-রাসূল (সা.)-কে একই দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়ায় প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু যারাই মানুষকে দীনে হকের দাওয়াত দিয়েছেন, তাদের ওপরই নেমে এসেছে অবর্ণনীয় জুলুম-নির্যাতন। রাসূল (সা.) ও তার সাহাবীরা তা থেকে আলাদা ছিলেন না। তারা জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রথমে হাবসা ও পরবর্তীতে মদীনায় হিজরত করেছিলেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা দীনের কাজকে সহজ করে দিয়েছিলেন। আমাদের দেশের পেক্ষাপটে ইসলামী আন্দোলনের ওপর জুলুম-নির্যাতন ইতিহাসের সে ধারাবাহিকতারই অংশ। তাই সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা ও জুলুম-নির্যাতন উপেক্ষা করে দীনকে বিজয়ী করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি দীনকে বিজয়ী করার প্রত্যয়ে সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের হতাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই, বরং অতীতের ভুলভ্রান্তি ও ব্যর্থতা চিহ্নিত করে আগামী দিনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। হুনাইন ও ওহুদ যুদ্ধে সাময়িক বিপর্যয়ের পর মুসলমানরা হতাশ হননি, বরং অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন উদ্যমে দীনের কাজে আত্মনিয়োগ করে পুরোপুরি সফলতা পেয়েছিলেন। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের দেশের মানুষ কিছুটা নিরাশ ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হলেও আমরা যদি কুরআনের প্রতি অবিচল থাকতে পারি, তাহলে বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। কারণ আমাদের ‘বেস্ট প্রোডাক্ট’গুলোকে আল্লাহ তায়ালা শহীদ হিসেবে কবুল করে নিয়েছেন। তাই শহীদদের রক্ত কথা বলবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা দীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখব, ইনশাআল্লাহ।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের বিনিময়ে আমাদের জান ও মালকে খরিদ করে নিয়েছেন। আর মুমিন জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যই হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির মাধ্যমে সর্বোচ্চ পুরস্কার জান্নাত লাভ করা। তাই সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কুরবানির নাজরানার মাধ্যমে আমাদের দীন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে কাজ করতে হবে। তিনি দীনকে বিজয়ী করার জন্য নিজেদের সকল সামর্থ্যকে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বযুগের, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সফল রাষ্ট্রনায়ক। ইতিহাসে এমন কীর্তিমান রাষ্ট্রপ্রধান আর দ্বিতীয়টি দেখা যায় না। তিনি সুশাসন নিশ্চিত করতে ১৯ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ স্থাপন করেছিলেন। তিনি প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও নাগরিক পরিষেবা বিভাগকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। ফলে সদ্য প্রতিষ্ঠিত মদীনা রাষ্ট্র হয়ে উঠেছিল ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র।
মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, সব নবী-রাসূলগণই দীনি আন্দোলনের সংগঠক ছিলেন। আর বিশ^নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন একজন আদর্শ ও সফল সংগঠক। তিনি একটি সংঘাতপূর্ণ সময়ে মক্কায় আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি তার ব্যক্তিত্ব ও সাংগঠনিক প্রতিভা দিয়ে এক কালেমার পতাকাতলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাই দীনকে বিজয়ী করার জন্য আমাদের কালেমার পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি জীবনের সকল ক্ষেত্রে বিশ^নবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ মেনে চলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, কোনো বিশেষ দিন নয়, বরং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই বিশ^নবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ, ইনশাআল্লাহ। তাই এদেশে বাতিল কোনো আদর্শ বিজয়ী হবে না, বরং এই দেশে আল্লাহ নির্দেশিত ও রাসূল (সা.) অনুসৃত আদর্শই সমুন্নত থাকবে, ইনশাআল্লাহ। তিনি ইসলামী আদর্শকে সমুন্নত রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর আহ্বান জানান। মহানগরী আমীর মাসব্যাপী সিরাত প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভাকে সফল ও সার্থক করে তোলার জন্য আমীরে জামায়াতসহ সকল আলোচক, মহানগরী নেতৃবৃন্দ, সকল স্তরের পুরুষ ও মহিলা জনশক্তি, কলাকুশলী, সকল প্রতিযোগী ও তাদের পরিবার এবং প্রতিযোগিতায় পুরস্কারপ্রাপ্তদের আন্তরিক মোবারকবাদ জানান এবং যারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কার পাননি, তাদের জন্য আখিরাতে উত্তম পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …