দুই দলের মুখোমুখি হওয়া মানেই বাড়তি উত্তেজনা। রোমাঞ্চ খেলে যায় ভক্তদের মনে। লাতিন আমেরিকায় আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের ম্যাচ মানেই ভিন্ন আবহ। যে ম্যাচের বিশেষ একটি নামও সুপরিচিত, সুপার এল ক্লাসিকো।
কিন্তু বুধবার ভোরে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে দুই দলের মধ্যে খুঁজে পাওয়া গেল না এল ক্লাসিকোর আবহ। ক্লাসিক লড়াই দূরে থাক, যেখানে দেখা গেল ফাউলের ছড়াছড়ি। মিলল না কোন গোলের দেখা। বরং দেখা মিলল ৪২টি ফাউল। সাতটি হলুদ কার্ড। ভাগ্য ভালো, নেই কোনো লাল কার্ড। গোল শূন্য ড্র হলো প্রতীক্ষিত আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল লড়াই।
ম্যাচে আর্জেন্টিনার নয়টি শটের মধ্যে তিনটি ছিল লক্ষ্যে। সমান শটে ব্রাজিলের ছিল দুটি লক্ষ্যে। ঘরের মাঠে আর্জেন্টিনা বল দখলে আধিপত্য দেখিয়েছে, শতকরা ৫৬ ভাগ। ব্রাজিল ৪৪ ভাগ। আর্জেন্টিনা সাতটি কর্ণার আদায় করতে পারলেও ব্রাজিল পারেনি একটিও। তবে ৪২টি ফাউলে দুই দল সমানে সমান, ২১টি করে।
লাতিন আমেরিকার প্রথম দল হিসেবে আগেই কাতার বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়েছে ব্রাজিলের। দলের হয়ে এই ম্যাচে ছিলেন না নেইমার। তারপরও পূর্ণ তিন পয়েন্টের জন্য মরিয়া ছিল তিতে শিবির। কিন্তু কাজ হয়নি। সেলেকাওদের সব আক্রমণ ধূলিস্যাত হয়ে গেছে আর্জেন্টিনার জমাট রক্ষণে। একই অবস্থা আর্জেন্টিনার জন্যও। মেসিসহ আর্জেন্টাইন স্কোয়াডও অনেক চেষ্টা করেছে গোলের জন্য। কিন্তু কোনো আক্রমণই পূর্ণতা পায়নি। অথচ ম্যাচটি জিততে পারলে কোনো হিসাব ছাড়াই ব্রাজিলের পর কাতার বিশ্বকাপের টিকিট পেত মেসিরাও।
ম্যাচে ১৭ মিনিটে ব্রাজিলের উল্লেখযোগ্য আক্রমণ। ডি-বক্সের মুখ থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে হতাশ করেন ভিনিসিউস জুনিয়র। ২৪ মিনিটে ডি মারিয়ার পাসে মেসির শট, তা প্রতিহত করেন ডিফেন্ডার দানিলো। ছয় মিনিট পর পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে লাউতারো মার্তিনেসের শটও রক্ষণে হয় প্রতিহত।
৩৩ মিনিটে ব্রাজিলের ডি-বক্সের মুখে ফাউলের শিকার মেসি। বেশ ক্ষুব্ধ দেখা যায় তখন স্বাগতিক অধিনায়ককে। খানিক পরই আর্জেন্টিনার ডি-বক্সে ডিফেন্ডার ওতামেন্দির হাতের আঘাতে রাফিনিয়ার মুখ দিয়ে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। ব্রাজিলের পক্ষ থেকে পেনাল্টির জোরালো আবেদন উঠলেও ভিএআরেও তাদের আশা পূরণ হয়নি।
সর্বমোট ২২টি ফাউলের (আর্জেন্টিনা ১০, ব্রাজিল ১২) প্রথমার্ধের ৪১তম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো আর্জেন্টিনা। তবে ডি-বক্সের বাইরে থেকে রদ্রিগো দে পলের দূরের পোস্টে নেয়া শট ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন আলিসন।
দ্বিতীয়ার্ধেও চিত্রে কোনো বদল আসেনি। ৬০ মিনিটে গোল পেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু ফ্রেডের শটে বল ফিরে আসে ক্রসবারে লেগে। ১০ মিনিট পর ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে হতাশ করেন রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড ভিনিসিউস।
শেষের দিকে মেসি পেয়েছিলেন একটি সুযোগ। কিন্তু তার শট চলে যায় গোলরক্ষক বরাবর। হতাশ হতে হয় স্বাগতিকদের। শেষ অবধি গোল শূন্য ড্রয়ে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়ে দুই দল।
১৩ ম্যাচে ১১ জয় ও দুই ড্রয়ে ব্রাজিলের পয়েন্ট ৩৫, অবস্থান শীর্ষে। সমান ম্যাচে আট জয় ও পাঁচ ড্রয়ে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের মূল পর্বের টিকিটের খুব কাছে মেসিরা।
এই অঞ্চল থেকে ১০টি দল লড়ছে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে। শীর্ষ চারটি দল পাবে কাতার বিশ্বকাপের টিকিট। পঞ্চম স্থানে থাকা দলেরও রয়েছে সুযোগ। সে ক্ষেত্রে তাদের খেলতে হবে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে অফ।