এক কালের সুন্দর, স্নিগ্ধ ও মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন বসতি ইয়েমেন এখন ধ্বংসপুরী। বাতাসে বারুদের গন্ধ। জনগণের মাথার ওপরে ছাদ নেই। পেটে আহার নেই। পরনে ছিন্নবসন। রোগবালাই নিরাময়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। ইতালীয় ভাষায় ‘ইয়েমেন’ শব্দের অর্থ সুখী অথচ বর্তমানে দেশটি অসুখী দেশের তালিকার শীর্ষে। আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বাধীন আরব দেশ ইয়েমেন। এটি রিপাবলিক অব ইয়েমেন নামে পরিচিত। ক্ষমতার লড়াই, শিয়া-সুন্নি দ্ব›দ্ব, তেল বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির নির্মম বলি ইয়েমেনের তিন কোটি মানুষ। এর মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি। তাদের প্রয়োজন মানবিক সহায়তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপকরণ। দেশটির অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। ২০ লাখ শিশু খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে মারাত্মক পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। সেভ দ্য চিলড্রেন প্রদত্ত তথ্য মতে, ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ৮৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
বিংশ শতাব্দীর শেষে খনিজ তেল আবিষ্কার হলে ইয়েমেনের অর্থনৈতিক উন্নতি ও জনগণের জীবনের মান উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখা দেয়। প্রতি মাসে ইয়েমেন থেকে ৩০ লাখ থেকে ৪০ লাখ ব্যারেল তেল নিয়ে যাচ্ছে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। এমন অভিযোগ করেছে ইয়েমেনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আম্মার আল-আজরায়ি। গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেন থেকে তেল ও তরল প্রাকৃতিক গ্যাস লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তা পরিষদে দেয়া এক বক্তৃতায় জাতিসঙ্ঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল জানিয়েছেন, ইয়েমেনে এক কোটি ৩০ লাখ মানুষকে মানবিক সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। কয়েক মাস আগে নতুন করে আরো ৩০ লাখ মানুষ মানবিক সহযোগিতা পাওয়ার জন্য যুক্ত হয়েছে। বর্তমানে সাহায্য সংস্থাগুলোর কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ নেই। ফলে ৪০ লাখ লোককে খাদ্য সহযোগিতা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। চলতি বছর শেষে এ সংখ্যা গিয়ে ৫০ লাখে পৌঁছাতে পারে। চলমান যুদ্ধ, ব্যাপক দরিদ্রতা, কর্মসংস্থানের অভাব ও আন্তর্জাতিক সহায়তা হ্রাস পাওয়ায় ২০২২ সালে ইয়েমেনের সঙ্কট বৃদ্ধি পেতে পারে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনকে ২০২১ সালে চরম মানবিক বিপর্যয়ের দেশের তালিকার শীর্ষে রাখা হয়েছে।
ইয়েমেনের তিন হাজার ৫০০ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মধ্যে অর্ধেক বন্ধ হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্টের পরিসংখ্যান মতে, বিগত ছয় বছরে এক লাখের বেশি মানুষ সহিংসতায় নিহত হয়েছেন। ৩৩ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন। আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি ২০২১ সালে ১০টি মানবিকভাবে বিপর্যস্ত দেশের তালিকা করেছে। তাতে শীর্ষে আছে ইয়েমেন। অপরাপর দেশগুলো হলো যথাক্রমে – আফগানিস্তান, সিরিয়া, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, বুরকিনা ফাসো, দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়া, ভেনিজুয়েলা ও মোজাম্বিক
‘আরব বসন্ত’ দিয়ে ইয়েমেনে রাজনৈতিক অস্থিরতার সূচনা। ২০১১ সালে দেশটির দীর্ঘ দিনের প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহকে তার ডেপুটি আবদারাব্বুহ মানসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হাদিকে অনেক সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হলো। যেমন – আলকায়েদার হামলা, দক্ষিণে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন, সালেহর প্রতি অনেক সামরিক কর্মকর্তার আনুগত্য। দুর্নীতি, বেকারত্ব আর খাদ্যসঙ্কট তো রয়েছেই। আর নতুন প্রেসিডেন্টের দুর্বলতার সুযোগে ইয়েমেনের যাইদি শিয়া সম্প্রদায় নেতৃত্বের হাছি আন্দোলনের কর্মীরা বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এ সময় অনেক সুন্নিও তাদের সমর্থন জোগায়। এরপর ২০১৪ সালে বিদ্রোহীরা সানা অঞ্চলেরও নিয়ন্ত্রণও নিয়ে নেয়। পরে দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর এডেন থেকে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট হাদি। হাউছি আর নিরাপত্তা বাহিনীগুলো সাবেক প্রেসিডেন্ট সালেহের প্রতি অনুগত। এরপর তারা পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করে। তাদের পেছনে ইরান সমর্থন জুগিয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু হাদিকে ইয়েমেনে আবার ক্ষমতায় আনতে সৌদি আরব আর অন্য আটটি সুন্নি দেশ এক জোট হয়ে ইয়েমেনে অভিযান শুরু করে। এই জোটকে লজিস্টিক আর ইন্টেলিজেন্স সহায়তা করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সসহ পশ্চিমা বিশ্ব (বিবিসি বাংলা, ২৬ মার্চ ২০১৮)। আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশের পৃষ্ঠপোষকতায় সৌদি আরব ২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে ইয়েমেনকে জল, স্থল ও আকাশপথে অবরুদ্ধ করে দেশটির ওপর ভয়াবহ সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে আসছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনো মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে, অন্য দিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হাউছি বিদ্রোহীরা (বাংলা ট্রিবিউন, ২৯ অক্টোবর ২০২১)। ইয়েমেন থেকে হাউছি বিদ্রোহীদের ছুড়ে মারা মর্টার, ড্রোন ও মিসাইল রিয়াদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানছে প্রতিনিয়ত। গত মার্চ মাসে সৌদি রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত তেল কোম্পানি ‘আরামকো’র বৃহৎ একটি শোধনাগারে ছয়টি ড্রোন দিয়ে আবার ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হাউছি বিদ্রোহীরা। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মনে করে, প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ থাকায় ইয়েমেনে আলকায়েদা ও ইসলামিক স্টেট গ্রুপ বেশ সক্রিয়। এখানে ঘাঁটি বানিয়ে তারা মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। ইয়েমেনের এ সঙ্কটকে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে আঞ্চলিক ক্ষমতার লড়াই হিসেবেও দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কৌশলগতভাবে ইয়েমেনের নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এডেন উপসাগর দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেলের সরবরাহ হয়ে থাকে। জাতিসঙ্ঘের তিনটি সংস্থা একটি যুদ্ধবিরতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। ছয় বছরের যুদ্ধে উভয় পক্ষ ব্যাপক বিপর্যয় ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো অনেক স্পট রয়েছে ইয়েমেনে। এর মধ্যে এর রাজধানী সানা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সানা বিশ্বের অন্যতম প্রচীন শহরগুলোর একটি। ইউনেস্কো এটিকে World Heritage of Mankind বলে ঘোষণা করেছে। এখানে প্রাচীনকালে ইটের তৈরি বহুতল ভবন সর্বত্র দৃষ্টিগোচর হয়। ইয়েমেনিরা শহর, সড়ক, দুর্গ ও বাঁধ নির্মাণে ছিলেন বেশ পারঙ্গম। রাব আল খালি মরুভ‚মির প্রান্তে অবস্থিত মারিব শহর ছিল শেবার রানী বিলকিসের সাম্রাজ্যের রাজধানী। এখানে ৩০০০ বছর আগে নির্মিত বাঁধ অবশিষ্ট আছে। ইয়েমেন আগে বিভিন্ন সাম্রাজ্যের অংশ ছিল এবং এদের রাজধানীগুলো দেশের বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে রয়েছে। প্রতিটিতেই সেই আমলের বিশেষ নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। ষষ্ঠদশ শতাব্দীতে লোহিত সাগরের সৈকত সন্নিহিত আল-মুখা শহর কফির জন্য ছিল বিখ্যাত। বস্ত্রশিল্প, ধুনো ও বৃক্ষগন্ধরস দেশটির জনগণ ও ভ্রমণপিয়াসুদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে হজরত মুহাম্মদ সা: ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে হজরত আলী রা:-কে ইয়েমেন প্রেরণ করেন এবং মহানবী সা:-এর জীবদ্দশায় তাইজের নিকটবর্তী জানাদে ও সানাতে মসজিদ নির্মিত হয়। ইসলামী যুগের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ও আরো অনেক প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী স্থানে ইয়েমেন পূর্ণ ও ঋদ্ধ। প্রমিত আরবি উচ্চারণের জন্য ইয়েমেনের প্রসিদ্ধি সর্বজনবিদিত। ইয়েমেনে ৬৫ শতাংশ মানুষ সুন্নি ও ৩৫ শতাংশ শিয়া। বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা রা: ও খ্যাতনামা তাবেঈ হজরত ওয়ায়েস করনি রহ: ছিলেন ইয়েমেনের বাসিন্দা। মহানবী সা: ইয়েমেনকে ভালোবাসতেন; কারণ তার পূর্বপুরুষরা ছিলেন ইয়েমেনি। মহানবী সা: বলেন, ঈমান ইয়েমেনিদের মধ্যে আর আমিও ইয়েমেনি। দাওয়াত ও জিহাদে ইয়েমেনবাসীরা মহানবী সা:-কে সব সময় সহায়তা করেন। হজরত মুয়াজ ইবন জাবাল রা:কে মহানবী সা: ইয়েমেনের গর্ভনর নিয়োগ করেছিলেন। তিনি জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে ইতিহাসে অমর কীর্তি রেখে গেছেন। সম্পদের সুষম বণ্টনের কারণে সে সময় ইয়েমেনে জাকাতগ্রহীতা পাওয়া যায়নি। ফলে হজরত উমর রা:-এর শাসনামলে উদ্বৃত্ত রাজস্ব মদিনার কেন্দ্রীয় কোষাগারে জমা করা হয়। ইয়েমেনে আসওয়াদ আনসি নামে এক ভণ্ডনবীর আবির্ভাব হলে ইয়েমেনিরা তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং ফাইরোজ নামে এক ব্যক্তির হাতে ভণ্ডনবী নিহত হন।
দায়িত্ব গ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়ে দেন, ছয় বছর ধরে ইয়েমেনে সৌদি আরব যে লড়াই চালাচ্ছে, আমেরিকা সেই লড়াইয়ে সৌদিকে আর সাহায্য করবে না; বরং শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে কিভাবে মীমাংসাসূত্র তৈরি করা যায়, আমেরিকা সে চেষ্টাই চালাবে। প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কোনোভাবেই আর সৌদি রাষ্ট্রকে যুদ্ধে মদদ দেয়া হবে না। বরং ইয়েমেনে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের রাস্তা খোঁজা হবে। তবে এর ফলে সৌদি আরবের সাথে আমেরিকার সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হবে না। কিন্তু ৯ মাসের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্র তার আগের অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ায়। বিগত চার নভেম্বর এক চুক্তির আওতায় সৌদি আরবের কাছে মধ্যপাল্লার এআইএম-১২০সি-৭/সি-৮ মডেলের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ৬৫ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি করছে যুক্তরাষ্ট্র, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় পাঁচ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। বিশেষ এসব ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর বলছে, ‘গত বেশ কয়েক বছরে সৌদি আরবে আন্তঃসীমান্ত হামলা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে আমরা দেখতে পেয়েছি। ফলে দেশটিতে থাকা মার্কিন বাহিনী ও ৭০ হাজারের বেশি মার্কিন নাগরিক ঝুঁকিতে পড়েছেন। এসব ক্ষেপণাস্ত্র আন্তঃসীমান্ত হামলা থেকে সৌদিকে নিরাপদে রাখতে সহায়তা করবে’ (ডয়েচে ভেলে, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২১; আরটিভি নিউজ, ৫ নভেম্বর, ২০২১)। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিমালা ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই অস্ত্র বিক্রি গুরুত্বপূর্ণ। অস্ত্রবাণিজ্য, তেললুণ্ঠন, ভ‚রাজনৈতিক ও অন্যান্য কারণে ইয়েমেন-সৌদি সঙ্ঘাত টিকিয়ে রাখতে চায় ক্ষমতাধর দেশগুলো। এসব ঘটনা তার প্রমাণ বহন করে।
এ দিকে ইরান তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ইয়েমেনের রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম মুহাম্মদ আল-দাইলামির সাথে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজনৈতিক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আলী আসগর খাজি ১৭ অক্টোবর তেহরানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উল্লেখ করেন, চলমান সঙ্ঘাত যুদ্ধবিরতি ও সঙ্কটের রাজনৈতিক নিষ্পত্তির ওপর নির্ভর করবে। যেকোনো রাজনৈতিক সমাধান অবশ্যই বিদেশী হস্তক্ষেপমুক্ত এবং ইয়েমেনের নাগরিকদের ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। সৌদি আরব ও ইরান দুটি বৈরী দেশ। সিরিয়া থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত একাধিক আঞ্চলিক ইস্যুতে প্রভাব বিস্তারের প্রশ্নে দীর্ঘ দিন ধরে তীব্র বিরোধে জড়িয়ে আছে দেশ দুটি। ২০১৬ সাল থেকে পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। সৌদি আরবে এক শিয়া ধর্মগুরুর ফাঁসি কার্যকর করার পর দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এর প্রতিবাদে ইরানে সৌদি দূতাবাসে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে ক‚টনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। এরই মধ্যে বাদশাহ সালমান ও ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির ইঙ্গিতে কয়েক দফা গোপন বৈঠক হয়েছে তৃতীয় দেশে। মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, ‘ইরান নিয়ে জটিল পরিস্থিতি আমরা চাই না। আমরা ইরানের উন্নতি চাই, যা এ অঞ্চল ও বিশ্বকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নেবে।’ তেহরানের ‘নেতিবাচক কর্মকাণ্ড’ নিয়ে সমাধান খুঁজতে রিয়াদ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অংশীদারদের সাথে কাজ করছে’ (বিবিসি, ২৯ এপ্রিল, ২০২১)। শান্তি ও সমঝোতার পথ রুদ্ধ হয়ে গেলে যুদ্ধ অনেক সময় অনিবার্য হয়ে ওঠে। যুদ্ধ মানে বিপর্যয়। যুদ্ধ মানে স্বজন হারানোর ক্রন্দনরোল। সৌদি আরব, ইরান ও ইয়েমেনের নীতিনির্ধারকরা উদার মন নিয়ে এগিয়ে এলে সমাধানের পথ বেরিয়ে আসবে। যেকোনো প্রস্তাব, আলোচনা ও পদক্ষেপে ইয়েমেনের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন থাকতে হবে। নইলে আগামী দিনে সৌদি আরব ও ইয়েমেন ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। এতে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সহিংসতার দাবানল ছড়াবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও গবেষক
drkhalid09@gmail.com