সাতক্ষীরার দেবহাটা ৫টি ও কালিগঞ্জের ১২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামীকাল রবিবার, ২৮ নভেম্বর। নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা থাকলেও রয়েছে শঙ্কা। ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে আতঙ্ক। এরই মধ্যে অনেকেই গণমাধ্যমে তাদের শঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন। অভিযোগও করেছেন পাল্টাপাল্টি। নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, পোস্টার, ব্যানার পোড়ানো ও ছেঁড়াসহ নানান অভিযোগ করেন প্রার্থীরা। নির্বাচন পূর্ববর্তী হামলার ঘটনাও ঘটেছে। বোমা বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটানো হয়েছে। এতে করে এক ধরণের ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জের ১২টি ও দেবহাটার ৫টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে রয়েছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। দুই উপজেলার ১৭ ইউপিতে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন ১৫ জন। তৃতীয় ধাপে আগামীকাল ২৮ নভেম্বর এসব ইউপিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বলছেন, দলের ভোটাররা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাঁদের আশ্রয়দাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে কালীগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউপিতে ৫৫ জন এবং দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউপিতে ১৭ জন প্রার্থী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্রে জানা যায়, কালীগঞ্জের ১২ ইউপিতে ৯ জন বিদ্রোহী এবং দেবহাটার ৫ ইউপিতে ৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।
এদিকে ২৬ নভেম্বর স্ব স্ব এলাকার প্রার্থীরা ভোটারদের সাথে মতবিনিময় ও গণসংযোগ করেছেন। প্রার্থীরা এসময় উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সুখ-শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় দফায় দফায় মতবিনিময় ও সভা করা হয়েছে। উৎসবমূখর পরিবেশে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ শনিবার থেকে স্ব স্ব ভোট কেন্দ্রে পৌছে যাবে ভোট গ্রহণের উপকরণ। তবে ব্যালট পেপার যেতে পারে নির্বাচনের দিন সকালে। ইতোপূর্বে ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পৌছায় ভোটের দিন সকালে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে সাতক্ষীরার দেবহাটা ও কালিগঞ্জ উপজেলা সেজেছে নতুন সাজে। পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে গ্রাম-মহল্লার অলি-গলি।
এদিকে বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা যায়, চেয়ারম্যান পদে কালীগঞ্জের ১২ ইউপিতে ১০ জন এবং দেবহাটায় ৫ ইউপিতে ২ জন নেতা-কর্মী স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, কুলিয়ার আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী আসাদুল ইসলাম, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জেলা আ.লীগের সহ-সভাপতি আছাদুল হক ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রাণনাথ দাশ। পারুলিয়ার আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বাবু এবং অপর প্রার্থী গোলাম ফারুক বাবুর স্ত্রী আরিফা পারভীন, দেবহাটা সদরের আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী আলী মোর্তজা মো. আনোয়ারুল হক, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু বকর গাজী, সাবেক চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতা নজরুল ইসলাম। সখিপুরের আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ ফারুক হোসেন রতন ও তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় অংশ নেওয়া জেলা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, আব্দুল আজিজ এবং আবু হাসান সাঈদ। নওয়াপাড়া ইউপির আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী আলমগীর হোসেন সাহেব আলী, তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম।
নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, কুলিয়া ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ইউপি সদস্য পদে ৩৩ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ১৩ জন প্রার্থী, পারুলিয়া ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ইউপি সদস্য পদে ৪০ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১২ জন প্রার্থী, সখিপুর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৪ জন, ইউপি সদস্য পদে ৪০ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১২ জন প্রার্থী, নওয়পাড়া ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ইউপি সদস্য পদে ৪২ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৩ জন প্রার্থী, দেবহাটা সদর ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ৬জন ইউপি সদস্য পদে ২৯ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৯জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে বৈধ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন থেকে, চেয়ারম্যান পদে ৬৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। সদস্য পদে ৪৬৫ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১৩৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। ২ নভোম্বর মনোনয়নপত্র দখিলের শেষ দিন পর্যন্ত ১২ ইউনিয়নে মোট ৬৭১জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১নং কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আকলিমা খাতুন লাকি, রওশন আলী কাগজী, সাফিয়া পারভীন, আব্দুর রহমান, নজরুল ইসলাম, শ্যামলী অধিকারী, জিএম, রবিউল্লাহ বাহার, শাহজাহান কবির, আশানুর রহমান এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ৩৫ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৯ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। ২নং বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে শেখ রিয়াজ উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ৩৫ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ৩নং চাম্পাফুল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আব্দুল হান্নান গাইন, মোজাম্মেল হক গাইন, আব্দুল লতিফ মোড়ল এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ২৮ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৩ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ৪ নং দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দিদারুল ইসলাম, জুলফিকার আলী সাপুই, গোবিন্দ মন্ডল, প্রশান্ত সরকার এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ৩২ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৩ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ৫নং কুশুলিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আবুল কাশেম মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, আসফউদ্দৌলা খান, লতিফুর রহমান খান, শেখ এবাদুল ইসলাম, শেখ নাজমুল হোসেন, রেজাউল করিম, কাজী তাজুল ইসলাম এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৫ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ৬নং নলতা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আজিজুর রহমান পাড়, আবুল হোসেন, এসএম আসাদুর রহমান, আজমীর জামান, সাইদুর রহমান, শাহিনুর রহমান, শাহাদাত হোসেন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ৩৭, সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ৭নং তারালী ইউনিয়নে এনামুল হোসেন, আব্দুল গফুর, একেএম, সফিকুজ্জামান, মহাব্বত আলী এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ৩৯ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৮ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ৮নং ভাড়াশিমলা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আবুল হোসেন, আফছার আলী গাজী, আব্দুল কুদ্দুস, নাজমুল হাসান, শওকাত আলী বিশ্বাস এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ৪০ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ৯নং মথুরেশপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে শেখ আব্দুল ওয়াহেদ, শাহজান সিরাজ খান, ফিরোজ আহমেদ, রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস, মিজানুর রহমান, শেখ তারিকুল ইসলাম, মো: আব্দুল হাকিম, শেখ মোজাফফর হোসেন, শেখ নাজমুল ইসলাম, শেখ আলাউদ্দিন, আকুঞ্জি বাবলুর রহমান এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ৪২ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৫ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ১০ নং ধলবাড়িয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আব্দুল করিম, আনোয়ারুস সাদাত, শেখ ফিরোজ আলম, সজল কুমার মুখার্জী, গাজী শওকাত হোসেন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ৪১ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১১ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ১১ নং রতনপুর ইউনিয়নে আব্দুল ওয়াহেদ, এসএম, আনোয়ার হোসেন, এম আলীম আল রাজী এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৮ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৪ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। ১২ নং মৌতলা ইউনিয়নে শেখ অয়েজুর রহমান, ফেরদাউস মোড়ল, আশেক মেহেদী, শেখ খোরশেদ আলম, রুহুল আমিন, শেখ আলমগীর হোসেন, শেখ মাহবুবুর রহমান এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৩ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এদিকে নির্বাচন ঘিরে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন সাতক্ষীরা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ১৪ নভেম্বর তারিখের ১৭.০০.০০০০.০৭৯.৪১.০৩৯.২১-৫০৯ নম্বর স্মারক এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ২২ নভেম্বর ৩৫.০০.০০০০.০২০.০০৯.০২৭.২১-৫৩৪ নম্বর স্মারকে এ প্রজ্ঞাপন জানানো হয়। এছাড়া নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ১৪ নভেম্বর তারিখের ১৭.০০.০০০০.০৭৯.৪১.০৩৯.২১-৫০৮ নম্বর স্মারকে এ প্রজ্ঞাপন জানানো হয়। সেই মোতাবেক ৩য় ধাপে আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সাতক্ষীরার দেবহাটার ৫টি ও কালিগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে যানবাহন চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় ২৭ নভেম্বর মধ্যরাত ১২টা হতে ২৮ নভেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত ট্রাক, পিকআপ, লঞ্চ, ইঞ্জিন চালিত সকল নৌ-যান, স্পীড বোট চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া ২৬ নভেম্বর মধ্যরাত ১২টা হতে ২৯ নভেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল বন্ধ থাকবে। উল্লেখ্য, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের এজেন্ট, দেশী-বিদেশী পর্যবেক্ষকরা রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে বৈধ পরিচয়পত্র ও যানবাহনের অনুমতি পাবেন যাতায়াত বা ভোট পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। তাছাড়া নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত গণমাধ্যম কর্মীরাও নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত বৈধ পরিচয়পত্র ও যানবাহনের অনুমতি নিয়ে যাতায়াত করতে পারবেন। নির্বাচনের কাজে কর্মকর্তা-কর্মচারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক, কতিপয় জরুরী কাজ (এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, গ্যাস, ডাক, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি) কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য উল্লেখিত যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে উক্ত নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া জরুরী পণ্য সরবরাহসহ অনান্য জরুরী প্রয়োজনীয় কর্তৃপক্ষ এরূপ নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে পারবেন। এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।