রাত পোহালে রবিবার সকালে মুন্সীগঞ্জ সুন্দরবন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের চাকুরী প্রত্যাশীদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে মুন্সীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে কেন্দ্রে।
বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী- এ দুই পদের জন্য লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছে প্রায় দুই ডজন প্রার্থী। যাচাই বাছাই শেষে নিরাপত্তা কর্মী পদে ১০ জন এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী ৯ পদে জন পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
অথচ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেভাগে ফাঁস হয়ে গেছে ঐ দুটি পদে নির্বাচিত হতে যাওয়া দুইজনের নাম। পরীক্ষায় অংশ নেয়ার আগেই চাকুরীর জন্য নির্বাচিত (!) ভাগ্যবানরা হলো বিদ্যালয়ের সভাপতি সুপদ বৈদ্যর ছেলে মিলন বৈদ্য (নিরাপত্তা কর্মী), বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ভাইপো বিষ্ণুপদ বৈদ্যর ছেলে কৌশিক বৈদ্য (পরিচ্ছন্নতা কর্মী)। বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের নিজের ছেলে ও ভাইপোকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য। আবেদন করা অন্য প্রার্থীদের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করে। যাতে করে অন্য প্রার্থীরা টাকা না দিতে পারে। পরীক্ষার আগেই সংশ্লিষ্টদের উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকুরীর জন্য মনোনীত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে আবেদনকারীরা ।
এমন অভিযোগ করেছেন নিরাপত্তাকর্মী পদে চাকুরীর জন্য আবেদনকারী ফারুক হোসেন। শ্যামনগর উপজেলার মুন্সীগঞ্জ গ্রামের মৃত মোহাম্মদ মোড়লের ছেলে ফারুক হোসেনে বলেন, প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার বৈদ্য ও সভাপতি সুপদ বৈদ্য যোগসাযশে নিজেদের ছেলে ও ভাইপোকে নির্বাচিত করার প্রক্রিয়া পাকাপোক্ত করেছেন। এছাড়া আমার কাছে প্রথমে চাকরী দেওয়ার জন্য সাড়ে চার লক্ষ টাকা দাবি করলে।
ঋণ করে সভাপতির কাছে এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা দেয় নিজের ছেলে ভাইপোকে নিয়োগ দিবে বলে। নিয়োগ পরীক্ষার একদিন আগে টাকাটা ফেরত নিয়ে যেতে বলে। নৈশ্যপ্রহরী পদে আবেদন করা সুমাইয়া আক্তারের বাবা বাবুল হোসেন বলেন, আবেদন করার সময় সভাপতি সুপদ বৈদ্যের সাথে ৭ লক্ষ টাকা দিলে চাকরি হবে বলে চুক্তি হয়। আমি পেশায় ইজিবাইক চালক সুদে টাকা নিয়ে দেড় লক্ষ টাকা দেয়।
হঠাৎ পরীক্ষার একদিন আগে আমার টাকা ফেরত দেবে বলে ডাকে। এ নিয়োগের বিষয় বিদ্যালয়ের অভিভাবক আলীপদ মন্ডল নিয়োগ বাণিজ্যর অভিযোগ এনে ১৩/১০/২১ আদালতে নিয়োগ পরীক্ষার বন্ধের জন্য মামলা করে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় পরীক্ষা স্থগিতসহ তদন্তপুর্বক প্রতিকার ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন আবেদনকারীরা। অভিযোগে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির ছেলে ও ভাইপোকে নিয়োগ পাওয়ার ট বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় কৃতপক্ষ তড়িঘড়ি পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যার অংশ হিসেবে ২৭ নভেম্বর আবেদনকারীদের হাতে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অনুমতিপত্র পৌছে দিলে। অনেক প্রার্থীরা অনুমতি পত্র ‘রিসিভ’ করেনি।
স্থানীয়দের পাশাপাশি পরীক্ষার জন্য মনোনীত কয়েকজন অভিযোগ করে জানিয়েছে প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া তারা শেষ করে ফেলেছে। রবিবার পরীক্ষা কেবলই লোক দেখানো এবং প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষার অংশ মাত্র। তারা নিজেদের নির্ধারিত প্রার্থীকে নির্বাচিত করার এমন তামাশাপুর্ণ পরীক্ষা বাতিলসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেছে।
এবিষয়ে কথা বলার জন্য শনিবার দুপুরে প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার বৈদ্যর মুটোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সহকারি শিক্ষক সঞ্জয় জানান রবিবার নিয়োগ পরীক্ষা হবে। ১৯ জনের মত পরীক্ষা অংশ গ্রহণ করবে। এসময় অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সভাপতি সুপদ বৈদ্যের মুটোফোনে কয়েকবার কল গেলেও তিনি তা গ্রহণ করেনি। এক পর্যায়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিনি মুটোফোন বন্ধ করে দেন। শ্যামনগর মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইজ মিনা হামিদ বলেন, আগামীকাল নিয়োগ হবে কিনা আমার জানা নেই। তবে নিয়োগ হলে যোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হবে। নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক হুমায়ন কবীরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।