বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে সাতক্ষীরার কৃষকদের শাক-সবজি, পাকা ধান, বীজতলা ও রবি শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজি- ওলকপি, ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, মুলা, লালশাক, বেগুন ও টমেটোসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে উঠতি আমন ধানের। পানিতে ভাসছে কাটা আমন ও বীজতলা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে তিন দিনের অবিরাম বর্ষণের ফলে ৮৭০ হেক্টর ধানক্ষেতে পানি জমেছে। ১০ হেক্টর বোরো আবাদের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। এক হাজার ১৩৫ হেক্টর জমির সরিষা পানিতে ডুবে গেছে। ১৩০ হেক্টর জমির শীতকালীন সবজি এবং ২৫ হেক্টর জমির আলু নষ্ট হয়েছে।
জেলায় এ বছর ৮৯ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। সরিষার আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৩৫৫ হেক্টর, ছয় হাজার৩৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির চাষ হয়েছে।
এদিকে, বৃষ্টির কারণে বেড়েছে শীত। ঘন কুয়াশা ও কনকনে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে জনজীবন। অনেক ক্ষেতে পাকা ধান বাতাস ও বৃষ্টিতে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। এতে পাকা ধানের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষক।
শহরের রাজার বাগান এলাকার কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, ধান কাটার আগমুহূর্তে বৃষ্টিতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কাঁচা-পাকা ধান পানিতে ভাসছে। অনেকে ধান কাটলেও মাঠ থেকে তুলতে পারিনি। চলতি বছর শুরু থেকে বৃষ্টির কারণে দুবার ধান নষ্ট হয়েছে। ধান কাটার আগমুহূর্তে আবারও বৃষ্টিতে ক্ষতি হলো। এভাবে চলতে থাকলে ধান চাষ বন্ধ করে দিতে হবে। এখন আবার বিলে হাঁটু সমান পানি। পানি সরানোর উপায় নেই। পানি না কমলে পরবর্তী ফসল করার উপায়ও নেই।
কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া এলাকার কৃষক আবু রায়হান বলেন, অসময়ে টানা বৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন শাক-সবজি ও সরিষা চাষিরা। আলু, পটল, পেঁয়াজ, রসুন, বাঁধাকপি ও ফুলকপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাটকেলঘাটা থানার আমতলাডাঙ্গা এলাকার কৃষক কামাল হোসেন বলেন, আমন চাষিদের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শীতকালীন সবজি ও আলু চাষিরা। আধা-পাকা ধানের গাছ ও সবজিক্ষেত পানিতে ডুবে আছে। মাটিতে শুয়ে পড়া ধানগাছ গোছা বেঁধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। সবজি ও আলু, পেঁয়াজ ও ফুলকপি ক্ষেতের পানি ড্রেন করে বের করার চেষ্টা করছি আমরা।
শ্যামনগরের কৈখালী এলাকার কৃষক মনির হোসেন বলেন, ভারী বৃষ্টি হওয়ায় বিপকে পড়েছে উপকূলের কৃষক। সবজিসহ হাজার হাজার বিঘা জমির আমনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন বলেন, গত তিন দিনে সাতক্ষীরায় ৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বুধবার থেকে আবহাওয়া অনেক ভালো। উপকূলীয় অঞ্চলে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত নামিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে শীত বাড়তে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম বলেন, জেলায় এ বছর ৮৯ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। ৭-৮ দিনের মধ্যে কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে পারতেন। ৭২ শতাংশ কর্তন হয়ে গেছে। সরিষার আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৩৫৫ হেক্টর, ছয় হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে জেলার ৮৭০ হেক্টর জমির ধানক্ষেতে পানি জমেছে। ১০ হেক্টর বোরো আবাদের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। এক হাজার ১৩৫ হেক্টর জমির সরিষা পানিতে তলিয়ে গেছে। শীতকালীন সবজি ১৩০ হেক্টর এবং ২৫ হেক্টর আলু নষ্ট হয়েছে। অনেক ক্ষেতে পাকা ধান বাতাস ও বৃষ্টিতে শুয়ে পড়েছে। এতে পাকা ধানের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখন বলা সম্ভব নয়।