গাজী আক্তার, গণমাধ্যম কর্মীঃ
মুহূর্তেই জীবন থেকে একটি একটি করে সেকেন্ড হারিয়ে যাচ্ছে। যারা সেকেন্ড ধরে ধরে জীবনকে রাঙাতে পারে তারাই একসময় সাফল্যের শীর্ষে পা রাখে। প্রতিটি মুহূর্তকে রাঙিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের গল্প মানুষ নানা রকম। একেক জনের গল্প একেক রকম হলেও সবার জীবন সামনে এগিয়ে চলছে। কেউ বা ধীরে আবার কেউ বা দ্রুত-সবাই সামনে এগোনোর প্রচেষ্টায় দিন গুনছে। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা থেমে নেই।
১. জীবন সব সময়ই চলমান। আপনি এখন যে কর্মস্থলে কাজ করছেন তখন মনের ভিতর ভাবনা আসে আমি ছাড়া সব অচল। আসলে কিন্তু না। আপনি যদি আজ কাজ ছেড়ে দেন তাহলে কর্মস্থলে সাময়িক সমস্যা তৈরি হবে, কিন্তু খুব দ্রুত আপনার উপস্থিতি সবাই ভুলে যাবে। তেমনি আজ আপনি হয়তো বন্ধুমহলে বেশ জনপ্রিয়। আপনাকে ছাড়া কোনো আড্ডাই জমে না। জেনে রাখুন, আপনি না থাকলেও আড্ডার রং কোনো অংশেই কমতি হবে না।
২. কোনো কিছুই জীবনে চিরস্থায়ী নয়। আবেগ, কিংবা অভিযোগ-কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। সামাজিক সম্পর্কগুলো সব সময়ই এক রকমের গাঢ় হবে না। আজ আপনার কাছে যাকে ভালো লাগছে, কালকে তাকে আপনার ভালো না-ও লাগতে পারে। আজ যিনি প্রশংসা করছেন, কাল তিনি আপনার কঠোর সমালোচক হতেই পারেন।
৩. যত বড়ই দুঃখ আসুক না কেন, তা মলিন হবেই। প্রেমিককে হারানোর বেদনা, ভালো চাকরির সুযোগ বা পরীক্ষায় ভালো ফল-নানা কারণে ব্যর্থতা আর শোক জীবনে আসতে পারে। জেনে রাখুন, সব দুঃখই ধীরে ধীরে হালকা হতে থাকে। একদিন সব দুঃখ কাটিয়ে সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ি আমরা।
৪. আর্থিক স্বাধীনতা আপনার জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয়। ধার করার অভ্যাস কিংবা ঋণে নিজেকে জড়ানো ঠিক না। চেষ্টা করুন নিজের হাতে আয় করতে। যতটা আয় করবেন, তা বুঝে ব্যয় করা প্রয়োজন। প্রয়োজনের বাইরের ব্যবহারের জিনিসপত্র কেনা ঠিক না। অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করুন। দামি মুঠোফোনে যতটা আনন্দ মেলে হয়তো মঞ্চনাটক দেখার অভিজ্ঞতা আরও আনন্দ দেবে।
৫. আমরা ভুল করতে পছন্দ করি না। কেননা ভুল করার কারণে অনেকে বিব্রত বোধ করি, হতাশ হয়ে পড়ি, হীনমন্যতায় ভুগি। জীবনের প্রতিটি কাজ সঠিক হওয়াটা জরুরি হলেও কাজ করতে গিয়ে মাঝেমাঝে জগাখিচুড়ি করে ফেলাটা খারাপ কিছু নয়। কেননা মানুষের ভুল হবেই। কখনো ভুল করেনি, এমন মানুষের নজির নেই। বরং ভুল মানুষের অপকারের চাইতে উপকার করেছে বেশি।
৬. শুধু পরিশ্রমেই জীবনে সাফল্য আসে না। পরিশ্রমের সঙ্গে বুদ্ধিবৃত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সৃজনশীলতাকে যোগ করতে হয়। বছরের পর বছর একই কাজ করতে করতে জীবনকে একঘেয়েমির বৃত্তে আটকে যাই। সিদ্ধান্ত নিয়ে কখনও কখনও ঝুঁকি নিতে হয়। ঝুঁকি নেওয়ার একটা সুবিধা হচ্ছে, আপনি জানেন না সামনে কী আসবে। এই অজানা পথ সামনে নতুন কিছু শিখিয়ে দেয়।
৭. অন্যের মতামতকেই জীবনের সব বলে ভাবা ঠিক না। একই বই কারও কাছে ভালো লাগতে পারে, কারও কাছে খারাপ লাগতে পারে। তেমনি আপনার কাজ কারও কাছে ভালো লাগতে পারে, কারও কাছে খারাপ লাগতে পারে-সব সময় নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে কাজ করা।
৮. মুঠোফোন বা সামাজিক দুনিয়াই জীবনের সব কিছুই না। বন্ধুর সাফল্যের ছবি ফেসবুকে দেখে মন খারাপ হতেই পারে। আবার দিনের অনেকটা সময় মুঠোফোনের পেছনে ব্যয় করার ফল কিন্তু ইতিবাচক হয় না। নিজের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করা প্রয়োজন। নিজের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।
৯. নিজের পথ নিজেকেই চলতে হয়। অন্যরা আপনাকে দারুণ পছন্দ করে হয়তো, কিন্তু দিন শেষে আপনার পথ আপনাকেই অতিক্রম করতে হবে। প্রত্যেক মানুষের এগিয়ে চলার গল্প, কষ্টের গল্প ভিন্ন হয়-তাই আপনাকে কেউ এগিয়ে নেবে তা ভেবে কখনোই বসে থাকা ঠিক না।