আয়শা আক্তার। আফগানিস্তানের এই নারী দেশটিতে সদ্য শেষ হওয়া যুদ্ধে তার দুই ছেলেকে হারিয়েছেন।
সন্তান হারা এই মা বলেছেন, আফগানদের শান্তির সুযোগ গ্রহণ করা উচিত যাতে, আর কোনো মা’কে সন্তান হারানোর শোক সহ্য করতে না হয়, কোনো নারী বিধবা না হন, কোনো সন্তান পিতৃহারা না হন।
আফগানিস্তান গত চার দশক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে গেছে। এই যুদ্ধে দেশটির লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাশ মানুষ, ধ্বংস হয়ে গেছে অর্থনৈতিক ভিত্তি।
গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রসহ ন্যাটো সৈন্য প্রত্যাহারের মাধ্যমে আফগানিস্তানে যুদ্ধ আপাতত সমাপ্ত হয়েছে। বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের পর তালেবান দেশটিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে।
৪৫ বছর বয়সী নারী আয়শা আফগানিস্তানের পশ্চিমা ফারাহ শহরের রাজ গ্রামের বাসিন্দা। দেশটির স্থানীয় পাজহোক নিউজকে দুইসন্তান হারানো এই বলেন, আফগানিস্তানের যুদ্ধ তাকে অবর্ণনীয় কষ্ট দিয়েছে। এই কষ্ট তাকে আজীবন বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে।
এই মা বলেন, যুদ্ধ তার দুই সন্তানকে কেড়ে নিয়েছে। তিনি আশঙ্কা করেন, তার তৃতীয় সন্তান মোহাম্মদকেও হত্যা করা হবে।
পাজহোক নিউজের খবর অনুসারে, দুই বছর আগে ফারাহ শহরের রাজ গ্রামটি আফগানিস্তানে যুদ্ধরত যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত সরকারি বাহিনী ও তালেবানের মধ্যে পড়ে যায়।
আয়শা বলেন, তার দুই সন্তান সেনা সদস্য হিসেবে কাজ করতেন। তারা গ্রামেই বসবাস করতেন। কিন্তু যুদ্ধ তীব্র হওয়ার পর তারা প্রাদেশিক রাজধানীতে স্থানান্তরিত হন।
সন্তান হারানোর শোকে কাতর এই মা বলেন, যুদ্ধ আমার দুই সন্তানের জীবন নিয়েছে, এটা আল্লাহর সিদ্ধান্ত। তবে যুদ্ধ শেষ হলেও তার হৃদয়ে এখনো যুদ্ধের ভয় বিরাজ করছে বলেও জানান তিনি।
তবে আফগানিস্তানের যুদ্ধ সমাপ্তি এই মা’কে কিছু হলেও স্বস্তি দিয়েছে। তিনি এখন তার তৃতীয় সন্তান মোহাম্মদকে নিয়ে গ্রামে বসবাস করছেন। তার ছেলে গ্রামে একটি মুদি দোকান দিয়েছে।
আফগান যুদ্ধে দুই ছেলে হারানো এই নারী বলেন, এখন কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা যাচ্ছে। কারণ, এখন কোনো যুদ্ধ নেই, এখন কোনো আক্রমণ কিংবা বিস্ফোরণে ভয় নেই।
যুদ্ধে দুই সন্তান হারিয়েছেন বারবার এটা স্মরণ করে এই মা বলেন, আমার ছেলে মোহাম্মদ যুদ্ধ থেকে বেঁচে গিয়েছে এটাই আমার কাছে সব থেকে বড় পাওয়া। দেশে এখন কোনো সংঘর্ষ নেই, বিস্ফোরণ নেই এতে আমি খুশি।
তিনি বলেন, আফগানদের অবশ্যই শান্তির এই সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। তাহলে কোনো মা আর সন্তান হারা হবে না, কোনো নারী বিধবা হবে না এবং সন্তানরা হারাবে না তাদের বাবাদের।