কক্সবাজারে গণধর্ষণের শিকার সেই নারীকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, এখানে জোরপূর্বক তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া বা ৪/৫জন মিলে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো কোনো ঘটনা আমরা পাইনি।
শনিবার দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান এসব কথা বলেন।
কক্সবাজারের আলোচিত পর্যটক নারীকে ধর্ষণে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ সুপার বলেন, প্রচারটা এমনভাবে করা হয়েছে যে, সব মিডিয়ায় তাদের বক্তব্যটা এসেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের (সন্ত্রাসীদের) নাম ও ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। এই লোকগুলো যেহেতু ক্রিমিনাল, এরপর ওরা তো আর বসে থাকেনি। তারা এখন গা ঢাকা দিয়েছে।
ভুক্তভোগীর জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ওই নারী কক্সবাজারে ৩ মাস ধরে টানা অবস্থান করছেন। তার অবস্থান কল লিস্টে পরীক্ষা করেও এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছি আমরা। তিনি বিভিন্ন হোটেলে থেকেছেন। ওই নারী তার সন্তানের হার্টে ছিদ্র থাকায় তার ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা প্রয়োজন। এই টাকার জন্য সে বিভিন্ন জায়গায় হাত পাতছে, সে টাকা পায়নি। এজন্য তারা সন্তানকে বাঁচানোর জন্য এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এগুলো হচ্ছে পারিপার্শ্বিক বিষয়। এটার সঙ্গে ধর্ষণের বিষয় সম্পূর্ণ আলাদা। আশিক নিজে ওই হোটেলে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেছে।
তিনি বলেন, কারো অসম্মতিতে মিলন করা মানে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তিনি দাবি করেছেন তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এখন আমরা সব বিষয় মাথায় রেখে মামলাটি তদন্ত করছি। একই সঙ্গে সন্ত্রাসীদেরকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে কক্সবাজারে স্বামী-সন্তান জিম্মি করে ধর্ষণের শিকার হওয়া ওই নারী আদালতে ২২ ধারায় ঘটনার জবানবন্দি দিয়েছেন।
শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামীমুন তানজিনের আদালতে তিনি জবানবন্দি দেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার ওই নারী অভিযোগ করেছিলেন, বুধবার বিকেলে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে তারা বেড়াতে যান। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথাকাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার ৮ মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজি অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। এ সময় আরেকটি সিএনজি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে তিনজন।
এরপর তাকে নেওয়া হয় কলাতলীতে জিয়া গেস্ট ইন নামে একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করে ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা। পরে র্যাব এসে তাকে উদ্ধার করে।
চাঞ্চল্যকর এই ধর্ষণের ঘটনায় গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজার সদর থানায় ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভিকটিমের স্বামী।
এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- আশিকুর রহমান ও তার তিন সহযোগী ইস্রাফিল খোদা ওরফে জয় ও মেহেদী হাসান ওরফে বাবু এবং রিয়াজ উদ্দিন ছোটন।
টুরিস্ট পুলিশকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে।আসামিদের মধ্যে জিয়া গেস্ট ইনের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেফতার করেছে র্যাব। এদের মধ্যে প্রধান আসামি আশিকের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ইয়াবা অস্ত্রসহ ১৭টি মামলা রয়েছে। ইস্রাফিল খোদা জয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। যুগান্তর