আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: লাখো শোকার্ত মানুষের অংশ গ্রহণে উনুষ্ঠিত হয়েছে সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মরহুম ফজলুল হকের নামাজের জানাযা।রবিবার দুপুর আড়াইটায় কলারোয়া ফুটবল ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রথম নামাজের জানাযা। এতে ইমামতি করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর জননন্দিত জননেতা মুহাদ্দীস আব্দুল খালক।বেলা সাড়ে চারটায় দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয় নিজ গ্রাম কলারোয়া কেলকাটাতে। এতে ইমামতি করেন সাতক্ষীরা জামায়াতের আমীর মুহাদ্দীস রবিউল বাশার। মরহুমের দাফনে অংশ নেন জামায়াতের আমীর ডা.শফিকুর রহমান। তিনি নিজহাতে মরহুম ফজলুল হককে কবরে সমাহিত করেন।
জামায়াত নেতার জানাযায় দল মত নির্বিশেষে সব শ্রেণীর মানুষ অংশ গ্রহণ করে । ফজলুল হক রবিবার সকালে হার্টএ্যাকে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়ে ছিল ৫০ বছর। তিনি ২ মেয়ে এক ছেলে,স্ত্রী,মা,তিন ভাই, দুই বোনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মরহুমের দাফনে অংশ নিয়ে জামায়াতের আমীর ডা.শফিকুর রহমান বলেন, একান্ত স্নেহের একেএম ফজলুল হক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল ভোর রাতে ইন্তিকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন…। শান্ত-সৌম, বিচক্ষণ, প্রখর মেধা ও চমৎকার সাংগঠনিক যোগ্যতাসম্পন্ন মায়াবী চেহারার এ ভাইটি ছিলেন সকলের কাছে অতি প্রিয় ও একজন নির্ভরযোগ্য দায়িত্বশীল। দুনিয়ার এই সফর অতি সংক্ষেপে শেষ করে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও আদরের তিনটি ছেলে-মেয়েকে রেখে তিনি আল্লাহ পাকের ডাকে সাড়া দিলেন। রাব্বি কারিমের সাথে তার এই মুলাকাত, রাহমাহ, ও মাগফিরাহ এবং তার করা আমলের ওপরে সীমাহীন বারাকাহ মন্ডিত হোক। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফজলুল হককে তাঁর আবরার গোলামদের মধ্যে শামিল করুন এবং জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। মা, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদের আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর নিজের অভিভাবকত্বে কবুল করুন। পরিবার ও আপনজন এবং সকল সহকর্মীদেরকে রাব্বুল আলামীন সবরে জামিল দান করুন। সাতক্ষীরার ময়দানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা আমাদেরকে তার উত্তম বিকল্প দান করুন। আমীন।
কলারোয়া ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত জানাযা নামাজ পূর্ব দোয়া অনুষ্ঠানে মরহুম ফজলুল হকের ভাই নাজমুল হক জানান, আমার ভাইয়ের মত মানুষ আমি আর কাউকে দেখিনি। গত শনিবার রাতে তার ভাই শ্বাসকষ্ঠ জর্নিত অসুস্থ বোধ করলে পরিবারের পক্ষ থেকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেত চাইলে ফজলুক হক বলেন, সমস্যা হবে না ভাল হয়ে যাবে। গভীর রাতে বেশি অসুস্থ দেখা দিলে পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে সাতক্ষীরা ইসলামী হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থার অবন্নতি হলে সেখান থেকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে কালেমায়ে তায়েবা পড়তে পড়তে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে তিনি পরকালে পাড়ি জমান।
গত ২৫ ডিসেম্বর তার ছোট মেয়ের আকিকা ছিল।যার বয়স মাত্র ২ মাস। সেখানে খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন পর্যায়ে জামায়াতের আমীর সেক্রেটারীরা উপুস্থিত ছিলেন। এর এক দিন পরে ২৬ ডিসেম্বর তিনি না ফেরার দেশে চলে গেলেন। কলারোয়া ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত জানাযা নামাজ শেষে তাকে এক নজর দেখার জন্য মাঠে অপেক্ষারত মানুষ কফিনের কাছে ভিড় করে। এ সময় উপস্থিত অনেকেই চোখে জল ধরে রাখতে পারেনি। সাবেক ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সাতক্ষীরা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী আজিজুর রহমানের পরিচালনায় জানাযা পূর্ব দোয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দীস আব্দুল খালেক,খুলনা মহানগর জামায়াতের আমীর আবুল কালাম আজাদ,সাতক্ষীরা জামায়াতের আমীর মুহাদ্দীস রবিউল বাশার, জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল গোলাম পরওয়ারের ছোট ভাই গোলাম কুদ্দুস, সাতক্ষীরা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাতক্ষীরা পৌর মেয়ার তাসকিন আহম্মেদ চিশতি,জামায়াত নেতা ইমান আলী,সাতক্ষীরা বিএনপির যুগ্ন সেক্রেটারী হাবিবুর রহমান হবি,বাগেরহাট জামায়াতে আমীর রেজাউল করিম,নড়াইল জামায়াতের আমীর,সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ মো: আবু সাইদ,শহর শিবির সভাপতি আনিচুর রহমান,বিএনপি নেতা রইচউদ্দীন, খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মিজানুর রহমান,জামায়াত নেতা ওমর আলী,বাগেরহাট জামায়াতের সাবেক আমীর মশিউপর রহমান,খুলনা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেষার মানুষ। মরহুম ফজলুল হকের ছেলে ফাহাদ তার আব্বার জন্য দোয়া চাইলে উপুস্থিত জনতা আল্লাহু আকবর বলে কেঁদে ফেলেন। জামায়াতের এ নেতা অনেক কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে একটি বাড়ি তৈরি করে গেছেনে । মৃত্যুর আগে তিনি তার পরিবার পরিজনদের ওছিয়াত করে গেছেন তার মৃত্যুর পরে এই বাড়িটি যে জামায়াতে ইসলামীকে দিয়ে দেয়া হয়। কারণ জামায়াত ও ছাত্র শিবির তার জন যা করেছে তার ঋণ কোন দিন পরিশোধ যোগ্য নয়।
একেএম ফজলুল হকের জানাযা পরবর্তি সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় আমীর ডা.শফিকুর রহমান বলেন, চলনে-বলনে, সহজ-সরল আর সাদাসিধে, বুদ্ধি-বাগ্নীতায় অসাধারণ, কর্মপ্রাণ চঞ্চলতায় যেন সর্বত্র বিরাজমান, ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন ও নিরহংকার, পরোপকারী এবং স্বজন ব্যাক্তি হিসেবে সকলের নিকট তিনি পরিচিত। যিনি একবার তার সাহচর্য পেয়েছেন তিনি তাকে ভুলতে পারবেন না। কারাগারে অসংখ্য ভক্ত অনুরক্ত থেকে তার আচার ব্যবহারের প্রশংশিত হয়েছে। দ্বীনের দায়ী হিসেবে এক পরওয়ারদিগার ছাড়া কারো কাছে নত হয়নি। তাঁর এ মৃত্যু যেন শহীদি মৃত্যু ।হযরত রাশেদ বিন সা’দ জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। কোনো এক ব্যক্তি রাসূলূল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কবরে সকল মুমিনের পরীক্ষা হবে, কিন্তু শহীদের হবে না, এর কারণ কী? হুজুর (সা.) জবাবে বলেন, তার মাথার ওপর তলোয়ার চমকানোই তার পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট।’ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একেএম ফজলুল হক একটা নাম, একটি প্রেরনা,একটা জীবন্ত ইতিহাস।
আবু সইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: ২৬/১২/২০২১