ডিসি সম্মেলনের আগেই মাঠ প্রশাসনে বড় পরিবর্তনের চিন্তা করছে সরকার। ডিসিদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে মাঠ থেকে তুলে আনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে।
সাধারণত ডিসিদের তিন বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। এখন নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের মধ্যে যারা ঠিকঠাক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন তাদের সময়েই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়ে ব্যাপক হিসাব-নিকাশ চলছে বলে জানা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা, নীলফামারী ও গাজীপুর জেলার ডিসিরা ২০ ব্যাচের কর্মকর্তা। তারা যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতি পাওয়ায় অনেক আগেই প্রত্যাহারযোগ্য হয়ে আছেন।
এদের সঙ্গে ২১ ব্যাচের কয়েকজন ডিসিকেও মাঠ থেকে তুলে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে ২১ ব্যাচের কর্মকর্তা ও সিলেটের ডিসি কাজী এমদাদুল ইসলামকে সৌদি দূতাবাসে বদলি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
শিগগিরই তিনি নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্টরা জানান, ডিসি সম্মেলনের আগে মাঠ প্রশাসনে পরিবর্তনের একটা প্রথা আছে।
তারই ধারাবাহিকতায় শিগগিরই এ পরিবর্তন হবে। সেই সঙ্গে আগামী সংসদ নির্বাচনের বিষয়টাও মাথায় রেখে ডিসিদের নিয়োগ চূড়ান্ত করা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের সময় ডিসিদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিসিদের নিয়োগ দিয়ে আবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যাতে প্রত্যাহার না করতে হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
গত নির্বাচনের আগে আগে বেশ কয়েকজন ডিসিকে প্রত্যাহার করে নতুনদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এতে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল সরকারকে।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্ন মতের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই এবারের ডিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে এসব বিষয় খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
মাঠ প্রশাসনের এ পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে ডিসি পদের প্রত্যাশীরা নতুন আদেশের অপেক্ষার আশায় আছেন। গাজীপুরের ডিসি তরিকুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গার নজরুল ইসলাম ও নীলফামারীর হাফিজুর রহমান গত অক্টোবরে যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতি পেয়েছেন।
উপসচিব পদধারী কর্মকর্তাদের ডিসি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মেয়াদ পূর্ণ হলে পদোন্নতি পাওয়ার আগেই ডিসিদের মাঠ থেকে তুলে নেওয়া হয়। তবে বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে যারা মাঠে থাকতেই যুগ্মসচিব পদোন্নতি পান তাদের দ্রুতই প্রত্যাহার করা হয়।
অন্যদিকে ২১ ব্যাচের কয়েকজন কর্মকর্তা তিন বছরের বেশি সময় ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে রয়েছেন সিলেটের ডিসি এমদাদুল ইসলাম যিনি ইতোমধ্যে বিদেশে পদায়ন পেয়েছেন।
এর বাইরে পিরোজপুরের ডিসি সাজ্জাদ হোসেন, গাইবান্ধার আবদুল মতিন, ঢাকার শহীদুল ইসলাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হায়াত-উদ-দৌলা খান রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এরা ২০১৮ সালে ডিসি হিসাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এসব কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তারাও আদেশ হওয়ামাত্র চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এদিকে মাঠ প্রশাসনে এ পরিবর্তনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ২৪ ব্যাচের ডিসি ফিটলিস্টভুক্ত কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে এ নিয়োগের পরপরই নতুন ফিটলিস্ট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২৪ ব্যাচের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ডিসি হওয়া যে কোনো কর্মকর্তার জন্য অনেক বড় অর্জন। যদিও এ কাজের চ্যালেঞ্জ অনেক বেশি। সহজে ছুটি পাওয়া যায় না। রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চাপ থাকে। রাত-দিন কাজ করতে হয়। তার পরও মাঠ প্রশাসনের এ পদটির বিশেষ সম্মান আছে। যা চাকরি জীবনে পরবর্তী সময়ে বিশেষ যোগ্যতা হিসাবে দেখা হয়।
এদিকে, দুই বছর পর ডিসি সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রক্রিয়া চলছে। প্রাথমিকভাবে ১১, ১২ ও ১৩ জানুয়ারি এ সম্মেলন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা থাকলেও তা হচ্ছে না।
ঠিক কোন তারিখে সম্মেলন হবে বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের দিকে এ সম্মেলন হতে পারে।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্মেলনের আগেই নতুন ডিসিদের পদায়ন করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।